বাংলার রূপময় নিসর্গ ছুঁয়েছে বসন্ত। চারিদিকে ফুলের শোভা। অশান্ত বাতাস। এমনও দিনে মন যেন পাগলপারা। কবিতার মতো তাই আওড়ে যায় সে- ‘ফুলের এমন শোভা দেখিনি;/ এমন বিচিত্র ফুলের রঙে উজ্জ্বল বিকেল দেখিনি।’
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির এই সময়ে বাতাস বদলে যেতে থাকে। শুষ্ক-রুক্ষতা দেখা যায় গাছে, পাতায়, ঘাসে। এবার সময়টা ভিন্ন। শীত এবার একটু দীর্ঘ। শীতের আমেজ পুরোটাই বর্তমান। এরই মাঝে বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। জনজীবনে বসন্ত বরণের ছোঁয়া আর ভালোবাসার রঙ এবার একাকার।
শীতের জীর্ণতা সরিয়ে এসেছে ঋতুরাজ। আজ পহেলা ফাল্গুন, জীবনকে রাঙিয়ে দেয়ার দিন। কবি শামসুর রাহমান বসন্তের মায়ায় লিখেছেন, ‘গাছের শাখায় ফুল হাওয়ার সংস বে/যখন নীরবে দিব্যি সানন্দে দুলতে/ থাকে, পথচারী/ অথবা জানালা-ধরে-থাকা যুবতীর চোখ পড়ে/ কে জানে কী ছবি সব দোলে কিছুক্ষণ!/ বসন্তের মায়া রয়ে যায় বাস্তবিক নানাভাবে।’ সত্যিই বসন্ত ধরা দেয় নানাভাবে। আজ বসন্তের আগমনে কোকিলের কুহুতানে মুখরিত হবে শুধু শ্যামল সবুজ প্রান্তর নয়, এই শহরও। আর শুকনো পাতারা ঝরে গিয়ে জন্ম নেবে কচি নতুন পাতার। সেই পত্রপল্লবে, ঘাসে ঘাসে, নদীর কিনারে, কুঞ্জ-বীথিকা আর ওই পাহাড়ে অরণ্যে বসন্ত আজ দেবে নবযৌবনের ডাক।
বারো মাসে তেরো পার্বণের বাঙালি জীবনে দুই আনন্দ একই দিনে—১৪ ফেব্রুয়ারি। ফাল্গুনের বাসন্তী আবহ আর ভালোবাসা দিবসের লাল মিলেমিশে যোগ করেছে এবারের বসন্ত বরণ। এক কথায় ভালোবাসায় মাথামাখি এক বসন্ত। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর গত দুই বছর ধরে একই দিনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।
প্রিয়জনের স্পর্শ পাওয়ার আকুলতা বসন্তে যেন ধরা দেয় ভিন্ন রূপে। প্রকৃতির রং লাগে মানুষের মনেও। ফাগুনের রক্ত রাঙা দিনে বসন্ত বাতাসে মিশে থাকে ভালোবাসা। তাইতো ফাগুন বন্দনায় মুখর প্রকৃতিপ্রেমীরা।
কী নেই বসন্তের! আছে রং, রূপ, রস ও লাবণ্য। আছে মাতাল দখিনা সমীরণ। ঋতুরাজের আগমনে খুলে গেছে দখিনা দুয়ার। মানব-মানবীর চিরন্তন ভালোবাসা উড়ছে রঙিন প্রজাপতি হয়ে। ফুলে ফুলে আছে মৌমাছির গুঞ্জন। নতুন প্রাণের পত্রপল্লবে জেগে উঠেছে বৃক্ষ-লতা-গুল্ম। নদীর কিনার থেকে আদিগিন্ত প্রান্তর, কুঞ্জবন, অরণ্য-পর্বতে ডেকেছে নবযৌবনের বান। প্রকৃতির এই রূপতরঙ্গ দেখেই কবিগুরু লিখেছিলেন- ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’
প্রকৃতিতে বসন্ত আর ভালোবাসা যেন একে অন্যের পরিপূরক। পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবের রঙে মেতে ওঠে তরুণ হৃদয়, নতুন করে প্রাণ পায় প্রবীণরা। বসন্তে শুধু প্রকৃতিই নয়, হৃদয়ও রঙিন হয়ে ওঠে। তাই তো বসন্ত আমাদের কাছে ‘প্রেমের ঋতু’।
পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবের শুভেচ্ছা বার্তায় সবাইকে ঋতুরাজ বসন্তের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন- দিদার সরদার, হংকং প্রবাসী, প্রকাশক ও সম্পাদক – সময়ের কণ্ঠধ্বনি এবং লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব ডিরেক্টর -৩১৫ বি ১ – বাংলাদেশ, ও প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান আহবায়ক -আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠক(UAHR), পরিচালক ও উপদেষ্টা জাতীয় কবি পরিষদ (জাকপ)।