রবিবার, ০৭:৪১ অপরাহ্ন, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৫৬ বার পঠিত

এক দশক ধরে জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। এ চাহিদার সঙ্গে জোগানের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা সরকারের ছিল; আছেও। কিন্তু চাহিদা ও জোগানের মধ্যে একটা ফারাক সব সময়ই ছিল; দূর করা যায়নি। বরং গত দুই বছরে সেই ব্যবধান আশঙ্কার পর্যায়ে চলে গেছে। বিশেষ করে কোভিড মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়। বেশি বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশের মতো দেশ, যাদের জ্বালানির প্রায় পুরোটাই আমদানি থেকে আসে।

গত জুলাইয়ের পর থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট তীব্র হয়। সংকট চলে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত। শীতের কারণে চাহিদা কমায় এখন সংকট খুব একটা নেই। তবে শীতের পরে চাহিদা বেড়ে গেলে আবারও জ¦ালানি সংকট তীব্র হতে পারে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এবারের প্রস্তুতি ভালো; সংকট হওয়ার কথা নয়।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৪৬ শতাংশই মেটে গ্যাসের মাধ্যমে। দেশে এ পর্যন্ত মোট ২৮ দশমিক ৩০ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে।২০২২ সালের জুন পর্যন্ত উত্তোলন হয়েছে ১৯ দশমিক ৫৩ টিসিএফ।
দেশের প্রাক্কলিত গ্যাস রিজার্ভ, চাহিদা, উৎপাদন ও সরবরাহ সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বর্তমানে যে হারে গ্যাস তোলা হচ্ছে, তাতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র না মিললে গ্যাসের মজুদ ২০৩০ সালে ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসবে।

‘মাস্টার প্ল্যান-২০১৭’ অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ছিল ৪৩০ কোটি ঘনফুট। গড় সরবরাহ ছিল প্রায় ৩০০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি ছিল ১০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। এই ঘাটতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে সরবরাহ করা গ্যাসের ২৪২ কোটি ঘনফুট আসত দেশীয় উৎস থেকে। বাকি ৫৯ কোটি ঘনফুট আমদানি করা এলএনজি। এলএনজি বাদ দিলে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮৮ কোটি ঘনফুট।

মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৩৯০ কোটি ঘনফুট এবং ২০৩০ সাল নাগাদ হবে ৫৫৮ কোটি ঘনফুট।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৫০০ কোটি ঘনফুটের কাছাকাছি। নতুন কোনো গ্যাসের উৎস না মিললে সরবরাহ নেমে আসবে ২৫০ কোটি ঘনফুটে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চাহিদা ৫০০ কোটি ঘনফুট ছাড়িয়ে যাবে। আর সরবরাহ নেমে আসবে ২০০ কোটি ঘনফুটের নিচে।

জ্বালানি সংকট কাটাতে সরকার একাধিকবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু তাতেও সংকট কাটেনি।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, ‘গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ দাম কারখানা মালিকদের পক্ষে বহন করা কঠিন। তার পরও গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করা গেলে ব্যবসায়ীরা সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন।’

পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা। সরবরাহ করা হয় ২৭০ কোটি ঘনফুট। দেশীয় উৎস থেকে আসে ২৩০ কোটি ঘনফুট। বিদেশ থেকে আসে ৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। গ্যাসের সংকটের কারণে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সামনে এ সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের পুরনো খনিগুলোয় প্রতিনিয়তই কমছে গ্যাসের উৎপাদন। সর্বশেষ ভোলার একটি কূপ থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসপ্রাপ্তি নিশ্চিত হলেও তা দেশের মূল ভূখ-ে সরবরাহে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ‘জ্বালানি সংকট প্রকট করে তুলছে মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অনেকেই ভেবেছিলেন নতুন বছরে হয়তো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কমে আসবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, এই য্দ্ধু আরও দীর্ঘ হচ্ছে। এ যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। জ্বালানির ব্যয় বেড়েছে অনেক। জ্বালানি পণ্যের দাম না বাড়িয়ে কোনো উপায় সরকারের ছিল।’

ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের নিজস্ব উৎস থেকে গ্যাস পেতে অনেক কর্মসূচি নিয়েছে পেট্রোবাংলা। ইতোমধ্যে দু-একটি কূপে কিছু নতুন গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। তবে চাহিদা তুলনায় কম। এখন সরকারের ভাবনায় আছে আগামী গ্রীষ্মকাল। এ সময় সামাল দিতে সরকার খোলাবাজার থেকে বেশি দাম হলেও প্রয়োজনীয় এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে।’

এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো দেশ নয়। ফলে চাইলেই আমরা রাতারাতি জ্বালানি সংকট দূর করতে পারব না। তবে সামনের দিনগুলো মসৃণ হবে, এটা অনুমান করা যায়।’

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘বৈশ্বিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। তবে সংকট সমাধানে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। বিশেষ করে সেচ ও গ্রীষ্মকালীন সময়ে তেমন সংকট হবে না বলে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com