পেশাগত ক্ষেত্রে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শন পেশাগত দায়িত্বেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কর্মদক্ষতা যতই থাকুক, কর্মস্থলে কাহারো ধৈর্যচ্যুতি ঘটিলে বুঝিতে হইবে, তিনি তাহার পেশায় যথেষ্ট যোগ্যতা প্রদর্শন করিতে পারেন নাই। ইহা উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের জন্য আরও অধিক প্রযোজ্য।
সম্প্রতি রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ তাহার অফিস কক্ষে তাহারই অধীনস্থ উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রনিকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তিনি রনিকে মারধর করিয়া বুকের ওপর চাপিয়া বসেন, যাহার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াইয়া পড়ে। ঘটনার পরের দিন রনি মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করিলে নির্বাহী প্রকৌশলী আহাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দুঃখজনক বিষয় হইল, একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর শুধু তাহার অফিস প্রশাসনই নহে, ফৌজদারি অপরাধ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। দণ্ডবিধির ধারা অনুসারে নহে, সাধারণ জ্ঞান দিয়াই মানুষ কোনটি ফৌজদারি অপরাধ তাহা বুঝিতে পারে।
তবে এই অবাঞ্ছিত ঘটনার পিছনে আমরা নানা রকম যোগসূত্র দেখিতে পাই। ভাবিতে হইবে, ইহা কীসের আলামত! আধুনিক যুগে আসিয়া একজন উচ্চশিক্ষিত, উচ্চপদে অধিষ্ঠিত প্রকৌশলী যখন তাহারই অধীনস্থ আরেক জন কর্মকর্তার গায়ে হাত তুলেন তখন বুঝিতে হইবে রাষ্ট্রের অনেক অর্গানই সঠিকভাবে কাজ করিতেছে না। সেই সঙ্গে বর্তমান সময়ের কথাও ভাবিতে হইবে। যখন একজন মানুষের নিয়মিত আয় কমিয়া যায় এবং তাহার জীবনযাত্রার অব্যাহত ধারা ব্যাহত হয় তখন মানসিক সুস্থতা ঠিক রাখিয়া চলা কঠিন হইয়া পড়ে। শুধু বাংলাদেশেই নহে, গোটা বিশ্বেই একটি অর্থনৈতিক ধাক্কা লাগিয়াছে প্যানডেমিকের কারণে। সেই সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতি বাড়িতেছে সকল দেশেই, নিত্যপণ্যের মূল্য চড়িয়া গিয়াছে। দেশে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বিরাজ করিতেছে। কোনো কোনো দেশে, বিশেষ করিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলিতে রাজনৈতিক অসন্তোষ প্রকট হইয়া উঠিয়াছে।
এই সকল কারণেও মানুষ অস্থির, অসহিষ্ণু ও ধৈর্যহারা হইয়া উঠিতেছে। সামনে যে দিন আসিতেছে তাহা লইয়া বিশিষ্টজনেরা চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছেন। বিশেষ করিয়া বাংলাদেশে প্রতিটি ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হইতেছে। ব্যবসায়-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়াছে, আমদানি ব্যয় বাড়িয়া যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে পণ্যমূল্য সাধ্যের মধ্যে রাখা সম্ভব হইতেছে না। অন্যদিকে বহু মানুষ কর্মহীন হইয়া পড়িয়াছে। এই রকম অবস্থায় সাধারণত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ঝুঁকির মধ্যে পড়িয়া থাকে।
তাহার পরও আমরা বলিব, ধৈর্যহারা হইলে চলিবে না, যে কোনো ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করিতে হইবে। কারণ, আমাদের ধর্ম এবং নৈতিক শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই ধৈর্যকে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছে। আরবিতে সবর শব্দের অর্থ ধৈর্য আর হিলম শব্দের অর্থ সহিষ্ণুতা। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তায়ালা নিজেকে ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু বলিয়া পরিচয় দিয়াছেন এবং মানব সম্প্রদায়কেও ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়াছেন। কোরআন মজিদে বলা হইয়াছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো, যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পারো (পারা-৪, সুরা আল ইমরান, আয়াত :২০০)। সুতরাং ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্রদর্শনই এখন উত্তম পন্থা।
সুত্রঃ ইত্তেফাক