অন্য ভাষায় :
রবিবার, ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, ০৫ মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

সিরাজুল আলম খান: এক ‘তাত্ত্বিক’ আর রাজনীতির ‘রহস্যপুরষ’

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩
  • ৫৮ বার পঠিত

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান শুক্রবার ঢাকায় একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। এক সপ্তাহের বেশি সময় যাবত তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সিরাজুল আলম খানের পরিচিতি ‘তাত্ত্বিক নেতা’ আর ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের রাজনৈতিক প্রস্তুতিপর্ব থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পরেও তিনি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ।

আবার শেখ মুজিব সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম বিরোধী দল হিসেবে জাসদ গড়ে তোলা এবং সর্বশেষ সেনাবাহিনীতে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা গঠনের মতো ইতিহাসের নানা টালমাটাল ঘটনাপ্রবাহের সাথেও উঠে আসে সিরাজুল আলম খানের নাম। রাজনৈতিক দলের সাথে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না রেখেও কিভাবে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন রাজনীতির একজন নেপথ্য নিয়ন্ত্রকে।

১৯৪১ সালের ৬ই জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সিরাজুল আলম খান, যিনি পরবর্তীকালে সুপরিচিত হয়ে উঠেন রাজনীতির একজন তাত্ত্বিক হিসেবে এবং যাকে তার কর্মী বা সমর্থকরা দাদা হিসেবে সম্বোধন করতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন। পাকিস্তান বিরোধী সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও বহু ঘটনার নেপথ্য নায়কদের একজন হয়েও নিজে কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হননি তিনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগ নেতাদের সংস্পর্শে এসে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হয়েছিলেন এবং পরে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তার রাজনৈতিক উত্থান হয় বলে বলছেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ।

“৬৬ থেকে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পর মূলত তিনিই ছিলে ক্যাটালিস্ট। ৭০ এ জেল থেকে বেরিয়ে শেখ মুজিব জাতীয় নেতা হলেন তবে যে সাংগঠনিক বিস্তৃতি হলো তার মূল নায়ক ছিলেন সিরাজুল আলম খান। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তার এক ধরণের বলয় তৈরি হয়েছিলো তাকে কেন্দ্র করে। তারা স্বাধীনতার কথাও বলতো, সমাজতন্ত্রের কথাও বলতো। এ নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে বিবাদ হয়। শেখ মুজিব সিরাজুল আলমসহ তার আস্থাভাজনদের নিয়ে বিএলএফ গঠন করেছিলেন যাতে আরও শেখ মনি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদ”।

ছয় ভাই তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান মেট্রিক পাশ করেছিলেন ১৯৫৬ সালে। ওই বছরেই ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং এরপর তিনি আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। এসময় তখনকার ছাত্রলীগ নেতাদের সাহচর্যে এসে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে।

রাজনৈতিক কাজে পারঙ্গমতা তাকে ষাটের দশকের শুরুতেই তখনকার তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে নিয়ে যায়। তবে মিস্টার রহমানের সাথে তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ রূপ নেয় ৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষণার পর। তবে মিস্টার আহমেদ বলেন স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগের আগের দ্বন্দ্বের নতুন বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং সরকার পরিচালনা নিয়েও শেখ মুজিবর রহমানের সাথে মতবিরোধের জের ধরে সিরাজুল আলম খান ও তার অনুসারীরা গঠন করেন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল জাসদ।

তবে নিজের কাজের স্মৃতিচারণ করে বলা একটি বইয়ে সিরাজুল আলম খান বলেছেন ছাত্র জীবনে ফিদেল কাস্ত্রোর কিউবার মুক্তি সংগ্রাম কিংবা আলজেরিয়া, ফিলিস্তিন বা ভিয়েতনামের সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম তাকে আলোড়িত করেছিলো দারুণ ভাবে। তার দীর্ঘকালের ঘনিষ্ঠ জাসদের একাংশের সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলছেন সিরাজুল আলম খানই প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা ভেবেছিলেন।

“সিরাজুল আলম খানের জন্ম না হলে এবং তিনি যদি নিউক্লিয়াস গঠন না করতেন তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কিনা তা বলা মুশকিল। তখন যা কেউ কল্পনা করেনি নিউক্লিয়াস, বিএলএফ কিংবা জয় বাংলা বাহিনী গঠন করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য কাজ করেছেন”।

বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল গড়ে তুলেছিলেন স্বাধীনতার পর

তবে গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন সিরাজুল আলম খান যা করেছেন সেটি শেখ মুজিবর রহমানের জ্ঞাতসারেই করেছেন এবং সবসময়ই তিনি মিস্টার রহমানের চিন্তা ধারাকেই এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

তবে স্বাধীনতার পর খুব বেশিদিন তাদের এক থাকা হয়নি। বিশেষ করে ৭২ সালে ছাত্রলীগকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে ওই বছর ৩১শে অক্টোবর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদ গঠন করলে সেটি তখনকার সরকার শক্ত হাতেই দমনের চেষ্টা করে।

এর মধ্যেই সেনাবাহিনীর মধ্যে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থাসহ শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাতের চিন্তাও তিনি ছড়িয়েছিলেন সহকর্মীদের মধ্যে।

যদিও পনেরই অগাস্টের রক্তাক্ত ঘটনার সময় ভারতে ছিলেন তিনি। আর জাসদ ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার তৎপরতার অবসান হয় আরও পরে মূলত সেনা শাসক জিয়াউর রহমান ৭ই নভেম্বর ক্ষমতার প্রাণকেন্দ্র চলে আসা ও ৭৬ সালে কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ডের মধ্য দিয়ে।

ওই বছরেই ২৬শে নভেম্বর আটক হয়ে পাঁচ বছর জেল খেটে একাশি সালের ১লা মে মুক্তি পেয়ে লন্ডন চলে যান রাজনীতির রহস্যপুরষ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান। এবং সম্ভবত বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে তার সরাসরি জড়িত থাকার আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটে সেখানেই।

আর এর মধ্যেই কয়েক খণ্ডে পরিণত হয় তার রাজনৈতিক চিন্তার সর্বশেষ ফসল জাসদ।

 

সুত্রঃ বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com