অন্য ভাষায় :
রবিবার, ০১:৫৭ অপরাহ্ন, ০৫ মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ব্যয় বাড়ে, মশা মরে না

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৭ বার পঠিত

মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ব্যয় প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক অর্থবছরের ব্যয় পরের অর্থবছরের ব্যয়ের তুলনায় বাড়লেও মশা মরছে না। মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশন গত চার-পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে একই কীটনাশক ব্যবহার করছে। তবে করের টাকায় ব্যয় করা অর্থের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো মশার ঘনত্ব ও জাত চিহ্নিত করতে ট্র্যাপ পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পুরনো পদ্ধতি ফগিং ও লার্ভিসাইডিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কীটতত্ত্ববিদদের মতে, সিটি করপোরেশন মশক নিধনে অধিক অর্থ ব্যয় করছে ঠিকই; কিন্তু যথাযথ মনিটরিং ও সঠিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগে ব্যর্থ হওয়ায় সুফল মিলছে না।

মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছিল ৭৪ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এই অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ কোটি ২২ লাখ। তবে খরচ হয়েছিল কম, ৩১ কোটি ১২ লাখ টাকা।

জানা গেছে, মশার লার্ভা কোথায় থাকে এবং কীভাবে মশা বাড়ছে- এর সবই জানা; তবুও নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোকে। কিউলেক্স মশা ডোবা, নালা, খাল বিলে অপরিষ্কার জায়গায় জন্মায়। আর এডিস মশা ঘরের কোণায়, সিঁড়ির গোড়ায়, পার্কিং প্লেসসহ আবদ্ধ স্বচ্ছ পানিতে জন্মায়। সাধারণত, দুইভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করে সিটি করপোরেশন। সকালে লার্ভিসাইডিং (মশার লার্ভা মারার ওষুধ ছিটানো) এবং বিকালে উড়ন্ত মশা নিধনে ফগিং করা হয়। এছাড়া মশার উৎস নিধনে নালা, নর্দমা, খাল, বিল, ঝাপ-ঝোড় পরিষ্কার করে মশা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি বহু বছরের পুরনো সংস্কৃতি। এছাড়া ড্রেনে গাপ্পি মাছ অবমুক্ত করা, পুকুরে হাঁস পালন, মাছ চাষ, ড্রোনের সাহায্যে কীটনাশক স্প্রে করা হয়। তবুও মশা মরছে না।

এখন এডিস মশার উপদ্রব কম থাকলেও কিউলেক্স মশার যন্ত্রণায় টেকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর এমন কোনো এলাকা বাদ নেই যেখানে মশার উপদ্রব কম। কিউলেক্স মশা জীবন ধ্বংসকারী না হলেও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরবাসী।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশক নিধনে নতুনত্ব এনেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশেষজ্ঞ টিম এনে ফিল্ড ভিজিট করানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে তারা একটা প্রতিবেদন দেবে। এছাড়া প্রথমবারের মতো ডিএনসিসির ৫টি অঞ্চলে ৮টি করে ৪০টি ট্র্যাপ বসানো হবে। এতে করে মশার ঘনত্ব নির্ণয় করে সে অনুযায়ী কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে।

উন্নত দেশগুলো মশার প্রজাতি চিহ্নিত করে ধরন বুঝে কীটনাশক প্রয়োগ করে সফলতা দেখিয়েছে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র- এসব দেশের মশার জাত চিহ্নিত করার জন্য ল্যাব রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কোনো ল্যাব স্থাপন হয়নি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাথে একটি সমঝোতা সাক্ষর করলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি।

মশক নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির আমাদের সময়কে বলেন, ‘মশা কখনই শূন্য হয়ে যাবে না। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মশা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’ তিনি বলেন, আমরা যে কীটনাশক প্রয়োগ করছি তা খুবই কার্যকর। মশা মারতে ফলাফল সন্তোষজনক।

ঢাকা শহরে নতুন আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বাহক মশা। নতুন করে কিছু এলাকায় ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারী মশা পাওয়া যাচ্ছে। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া রোগ হয়। রাজধানীর দক্ষিণ খান, বিরুলিয়া এলাকায় অ্যানোলিফিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এসব এলাকায় অ্যানোফিলিস মশার লার্ভাও পাওয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার আমাদের সময়কে বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে সম্ভব না। এজন্য নাগরিকদের সম্পৃক্ততা দরকার। বাড়ি ধরে ধরে প্রতি ১৫ দিন পর পর এডিসের লার্ভার উৎস ধ্বংস করতে হবে। বিডিং প্লেস ধরে ধরে ট্রিটমেন্ট করতে হবে। এছাড়া মশার প্রজাতি চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সিটি করপোরেশন কাজ করছে ঠিক। তবে মনিটরিং এবং কাজের মূল্যায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে না। তাছাড়া কীটনাশকের ডোজ এবং ডিউরেশন সঠিকভাবে হচ্ছে না বলেই মশা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, নতুন করে আমরা অ্যানোফিলিস মশার লার্ভা পেয়েছি এবং পূর্ণাঙ্গ মশাও পেয়েছি। এটি বড় আতঙ্কের। তবে বিষয়টি এখনো প্রকাশ করার মতো হয়নি। আমরা আরও কিছুদিন গবেষণা করব। এরপর সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জানিয়ে দেব।

গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যে মশা ধরা পড়েছে তার ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা। বাকি ১ শতাংশের মধ্যে এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া মশা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com