অন্য ভাষায় :
রবিবার, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন, ০৫ মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

জিলহজ মাসের আমল ও কোরবানির বিধিবিধান

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩
  • ৩২ বার পঠিত

শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ—মূলত এই তিন মাসই হজের মাস। এর মধ্যে প্রধান হলো জিলহজ মাস। এই মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ—এই ছয় দিনেই হজের মূল কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘হজ হয় সুবিদিত মাসগুলোয় (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ)।

এরপর যে কেউ এ মাসগুলোয় হজ করা স্থির করে সে হজের সময় স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহবিবাদ করবে না। আর তোমরা উত্তম কাজ থেকে যা-ই করো, আল্লাহ তা জানেন। আর তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো। নিশ্চয়ই, সবচেয়ে উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমারই তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৯৭)

চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ—জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব। এসব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ, কলহবিবাদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২টি, যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সেই দিন থেকে চালু আছে, যে দিন আল্লাহ তাআলা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে চারটি মাস বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৩৬)।

জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার আগে প্রয়োজনীয় ক্ষৌরকর্ম করা, অর্থাৎ নখ কাটা, গোঁফ ছঁাটা, চুল কাটা ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করা সুন্নত। জিলহজের চাঁদ ওঠার পর থেকে ১০ তারিখে কোরবানির পশু জবাইয়ের পূর্ব পর্যন্ত কোনো প্রকার ক্ষৌরকর্ম না করা এবং পশু জবাইয়ের পর ওই দিনের মধ্যে ক্ষৌরকর্ম করা (অন্তত নখ কাটা) সুন্নত।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা কোরবানি করবে, তারা যেন (এই ১০ দিন) চুল ও নখ না কাটে।’ (মুসলিম: ৫২৩৩, ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা: ২২৭)। এক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনি বলুন, ‘(যদি আমার কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য না থাকে) কিন্তু আমার কাছে এমন উট বা বকরি থাকে, যার দুধ পান করা বা মাল বহন করার জন্য তা প্রতিপালন করি। আমি কি তা কোরবানি করতে পারি?’ তিনি বললেন, ‘না। বরং তুমি (১০ জিলহজ) তোমার মাথার চুল, নখ, গোঁফ কেটে ফেল এবং নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করো। এ-ই আল্লাহর কাছে তোমার কোরবানি।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ত্বহাবি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা: ৩০৫)। জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিনে রোজা পালন করা ও রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা সুন্নত।

রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম দশকের নেক আমল আল্লাহর নিকট যত বেশি প্রিয় আর কোনো দিনের আমল তাঁর কাছে তত প্রিয় নয়। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, জিহাদও কি এই দশকের আমল থেকে উত্তম নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর পথে জিহাদও এই দশকের আমলের তুলনায় উত্তম নয়, তবে ওই ব্যক্তির যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বেরিয়ে গেল এবং শেষে কিছুই ফিরে এল না।’ (বুখারি, পৃষ্ঠা: ১৩২)

আরাফাতের দিন অর্থাৎ ৯ জিলহজ নফল রোজা রাখা বিশেষ সুন্নত। তবে আরাফাতে অবস্থানরত হাজি সাহেবদের জন্য এই রোজা প্রযোজ্য নয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে আল্লাহ তাআলা তার (রোজাদারের) বিগত এক বছরের ও সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা: ১৫৭)

আইয়ামে তাশরিক তথা জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর একবার তাকবির বলা ওয়াজিব। পুরুষগণ স্বাভাবিক স্বরে, আর নারীগণ নিম্ন স্বরে তাকবির বলবেন। তাকবির হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ (ইলাউস সুনান, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা: ১৪৮)

জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ যেকোনো দিন, কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। পুরুষ ও নারী—সবার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য। (ইবনে মাজাহ: ২২৬)

 

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি;
সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com