অন্য ভাষায় :
বৃহস্পতিবার, ১০:০৫ অপরাহ্ন, ০২ মে ২০২৪, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৭ বার পঠিত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণপ্রাপ্তির শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত অনুযায়ী মার্চ শেষে ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ রাখার কথা ছিল। কিন্তু প্রকৃত রিজার্ভ ১৬ বিলিয়নের চেয়েও কম। এমতাবস্থায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের চূড়ান্ত বৈঠক আজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সফররত প্রতিনিধিদের কাছে রিজার্ভ সংরক্ষণের ব্যর্থতার কারণ তুলে ধরা হবে। তবে ঋণের কিস্তির অর্থ ছাড় হবে কি না তা নির্ভর করবে সফররত টিমের প্রতিবেদনের ওপর। শর্ত পূরণে আইএমএফ কিছুটা কঠোর হওয়ায় ঋণপ্রাপ্তি নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলার সঙ্কট কাটাতে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা নিচ্ছে সরকার। এ ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগে সংস্থাটির একটি রিভিউ মিশন বাংলাদেশ সফরে এসেছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক হয়েছে। আজ শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আইএমএফের পক্ষ থেকে ঋণ দেয়ার অন্যতম শর্ত ছিল মার্চ শেষ বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ থাকতে হবে ১৯ দশমিক ২৬ হাজার বিলিয়ন ডলার। যদিও মার্চ শেষে এ রিজার্ভ ১৬ বিলিয়নেরও কম রয়েছে বলে জানা গেছে। আজকের বৈঠকে তাই আইএমএফ প্রতিনিধি দলের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ সংরক্ষণে ব্যর্থতার কারণগুলো তুলে ধরা হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব কিভাবে হবে, সেই সূত্রও ঋণ দেয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছিল আইএমএফ। সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রকৃত রিজার্ভ কী পরিমাণে থাকতে হবে তা ঠিক করে দেয়। সে অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস পরপর আইএমএফের শর্ত মেনে বাংলাদেশকে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এর আগে গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরের শেষেও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্য কমিয়ে দেয় সংস্থাটি। সদ্য সমাপ্ত মার্চের শেষে সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন হয়নি। এবার শর্ত শিথিল নাও করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আইএমএফের এসডিআর খাত, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিলের জন্য জমা থাকা ডলার বাদ দিয়ে যে হিসাব হয়, সেটিই প্রকৃত রিজার্ভ। এর বাইরে রিজার্ভের আরো দু’টি হিসাব রয়েছে। তার একটি হলো মোট রিজার্ভ। আরেকটি আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রক্ষিত রিজার্ভ। গত মার্চের শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৮১ কোটি ডলার। তবে আইএমএফের চাওয়া শুধু নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত হবে সেটি।

আইএমএফ সাধারণত ঋণ দেয়ার সময় আর্থিক খাতে নানা সংস্কারের পাশাপাশি বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেয়। তাদের শর্ত অনুযায়ী গত বছরের জুনের শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ওই সময় তা ছিল ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংস্থাটিকে তখন জানানো হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের পর রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জনের শর্ত পূরণ করা সম্ভব হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ রিজার্ভ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শর্ত কিছুটা শিথিল করে।

বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাবটি গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় অনুমোদন পায়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ, গড় সুদহার ২ দশমিক ২ শতাংশ। ৪৭০ কোটি ডলারের মধ্যে দুই ধরনের ঋণ রয়েছে। বর্ধিত ঋণসহায়তা বা বর্ধিত তহবিল (ইসিএফ অ্যান্ড ইএফএফ) থেকে পাওয়া যাবে ৩৩০ কোটি ডলার। রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় মিলবে ১৪০ কোটি ডলার। ইতোমধ্যে দুইটি কিস্তি ছাড় হয়েছে।

২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের পর এক বিবৃতিতে আইএমএফ জানিয়েছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা, সামাজিক ও উন্নয়নমূলক ব্যয়ে সক্ষমতা সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, আর্থিক খাত শক্তিশালী করা, নীতি কাঠামো আধুনিক করে তোলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কাজে এ ঋণ সাহায্য করবে।

এ দিকে রিজার্ভ বাড়াতে গত দেড় মাসে ব্যাংকগুলোর সাথে ১৭০ কোটি ডলার অদল-বদল (সোয়াপ) করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবশেষে গত ২৮ মার্চ সোয়াপের পরিমাণ ছিল ৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। এতে মোট রিজার্ভ বাড়লেও প্রকৃত রিজার্ভ বাড়েনি। এ অকারণ এই রিজার্ভ দায়হীন নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com