অন্য ভাষায় :
বৃহস্পতিবার, ০৭:৪২ পূর্বাহ্ন, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ডলার সঙ্কটেও ১৬ ভাগ বাড়তি জ্বালানি আমদানির পরিকল্পনা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২
  • ৬৮ বার পঠিত

চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে আগামী বছরে রেকর্ড জ্বালানি তেল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার টন। চলতি ২০২২ সালে এই আমদানির লক্ষ্য ছিল ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে জ্বালানি তেল আমদানির পরিমাণ বাড়ছে ৯ লাখ ২৫ হাজার টন। শতকরা হিসাবে বৃদ্ধির পরিমাণ ১৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে এই তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৯ লাখ ৮০ হাজার টন।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছর যে ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার টন তেল আমদানি করা হবে তার মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টন ‘জি-টু-জি (সরকারি পর্যায়ে) সরাসরি টেন্ডার ছাড়াই ক্রয় করা হবে। বাকি ২৯ লাখ ১৫ হাজার পর উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্রয় করা হবে।

আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়। এটি অনুমোদিত হলে পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির বৈঠকে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

বিপিসি সূত্র মতে, জি-টু-জি পদ্ধতি আমদানিকৃত তেলের মধ্যে রয়েছে, ২৬ লাখ ৭০ হাজার টন ৫০ পিপিএম সালফার মানমাত্রার গ্যাস অয়েল (ডিজেল), ৩ লাখ ৫০ হাজার টন জেট এ-১ (এভিয়েশন ফুয়েল), ৩ লাখ টন মোগ্যাস (অকটেন), ৪ লাখ ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল ১৮০ সিএসটি এবং ৯০ হাজার মেরিন ফুয়েল ।

বিপিসি বলছে, বিগত সময়ে জ্বালানি তেলের চাহিদা ও বিক্রয় প্রবণতা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা অপ্রত্যাশিতভাবে কম-বেশি হয়। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতির ফলে চলতি পঞ্জিকা বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল হবে এবং তাতে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে (২০২২ সালের আগস্ট-অক্টোবর) বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের চাহিদা অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। এ ধরনের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের পাশাপাশি নিরাপদ সরবরাহ ধারা বজায় রাখার জন্য ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষে প্রাক্কলিত পরিমাণের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০২৩ পঞ্জিকাবর্ষেও প্রাক্কলিত পরিমাণের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত জ্বালানি তেল অনুমোদনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে বিবেচ্য সময়ে জি-টু-জি ভিত্তিতে নেগোসিয়েশনকৃত প্রিমিয়াম অথবা কোটেশন ভিত্তিতে আমদানি করা হবে।

সূত্র জানায়, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ জি-টু-জি বা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে শুধু তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পূর্বানুমোদন নিয়ে এবং বাকি ৫০ শতাংশ উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে আমদানি করা হয়ে থাকে।

সে হিসাবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে ৫০ শতাংশ হিসেবে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২৪ লাখ টন গ্যাস অয়েল, ৩ লাখ টন জেট এ-১ ফুয়েল, পৌনে দুই লাখ টন মোগ্যাস বা অকটেন, আড়াই লাখ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৬০ হাজার টন মেরিন ফুয়েল আমদানি করা হবে।

জানা যায়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) আমদানি করে স্থানীয়ভাবে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) প্রক্রিয়াকরণ করে জ্বালানি তেলের আংশিক চাহিদা পূরণ করে। কেরোসিন ও পেট্রোলের চাহিদা ইস্টার্ন রিফাইনারি ও স্থানীয় উৎস থেকে পূরণ হয়ে থাকে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী দেশে পেট্রোলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য ইস্টার্ন রিফাইনারির আমদানি করা মোগ্যাস (অকটেন) ব্লেন্ডিং করে পেট্রোল উৎপাদন করা হবে।

এদিকে চলমান ডলার সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেল আমদানিতে ঋণপত্র খোলা ও আগের মূল্য পরিশোধে সঙ্কটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। দেশে জ্বালানি তেল আমদানির দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সমস্যায় পড়েছে জ্বালানি আমদানি নিয়ে। ডলার সঙ্কটের কারণে একদিকে বিলম্বিত এলসির দায় বাড়ছে অন্যদিকে সময় মতো নতুন এলসি খোলা যাচ্ছে না।

বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যাংকগুলো ডলার সমস্যার কারণে এলসি খুলতে বিলম্ব করছে। অনেক সময় পার্টলি পেমেন্ট করছে। যেটা হয়তো একদিনে হতে পারে সেটা হয়তো পাঁচ দিনে বা সাত দিনে হচ্ছে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে ‘সরবরাহকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে জ্বালানি নিরাপত্তায় বিঘœ’ সৃষ্টি হতে পারে বলে তার আশঙ্কা ।
তবে তেল আমদানিতে বিপিসির এলসি (ঋণপত্র) খোলা ও আগের এলসির দায় পরিশোধের কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রধান দুই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ও অগ্রণীর প্রধানরা তেলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে দাবি করেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, রূপালী ও জনতা ব্যাংক ছাড়াও বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ওয়ান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে থাকে বিপিসি। এর মধ্যে বেশির ভাগ কার্যক্রম হয়ে থাকে সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ মূলত অপরিশোধিত তেল কিনে সৌদি আরবের সৌদি অ্যারামকো এবং আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি থেকে। আর পরিশোধিত তেল সরবরাহ করে কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতের আটটি কোম্পানি। এর মধ্যে চীনের কোম্পানি রয়েছে দুটি। জ্বালানি তেল আমদানির বেশির ভাগ এলসি করে দেয় সরকারি ব্যাংকগুলো। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে খুব কমই এলসি হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বিপিসির কর্মকর্তারা।
বেশ কয়েক মাস থেকে প্রতিদিন ডলার সংগ্রহে হিমশিম খাওয়া ব্যাংকিং খাত এখন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সতর্ক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলার সাশ্রয়ে কড়াকড়ি আরোপের পথেই চলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানিতে পরিশোধ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের ব্যয়ের দ্বিগুণের মতো। চলতি অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে ৯৬৮ মিলিয়ন ডলারের পেট্রোলিয়াম আমদানি হয়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দামের বিবেচনায় ১ শতাংশ বেশি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে সরকার এই ঘাটতি সমন্বয়ের চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়াকে এর প্রধান কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়াকেও অন্যতম কারণ হিসাবে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১০টি, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১২৯০ মেগাওয়াট। এর বাইরে ৬৪টি কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয় ফার্নেস অয়েল। এসব জ্বালানির পুরোটাই আমদানিনির্ভর। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পেছনে প্রতি ইউনিট উৎপাদনে ৩৬ দশমিক ৮৫ টাকা খরচ হলেও সরকার বিক্রি করে মাত্র ৫ দশমিক ০৫ টাকায়। সব মিলিয়ে এই বছর বিদ্যুৎ খাতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। প্রথমে তিন বছরের জন্য এসব কেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেয়া হলেও পরবর্তীতে সেটা বাড়ানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com