মঙ্গলবার, ০২:২২ অপরাহ্ন, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

কোভিড ও কার্ডিওলজি: মানবস্বাস্থের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২
  • ১২৮ বার পঠিত

দেশের মানুষের মধ্যে হৃদরোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। একইসঙ্গে চিকিৎসার পদ্ধতি, পরিধিও বাড়ছে। তবুও মানুষের মধ্যে এখনো পর্যাপ্ত সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। হৃদরোগে ভীত হলেও তা প্রতিরোধে আগাম সতর্কতা অবলম্বনে এখনো আমরা পিছিয়ে। এমন মানুষও আছে যারা এই রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে রীতিমতো অন্ধকারেই রয়ে গেছে। তারওপর সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি সার্বিক জনজীবনকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। হৃদরোগে আক্রান্তদের উপর করোনা ভাইরাস কেমন প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে চিন্তার কোন শেষ নেই।

সম্প্রতি হৃদরোগ বা কার্ডিওলজিক্যাল বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের ইয়াশোদা হসপিটালস, হায়দ্রাবাদ-এর ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট কনসালটেন্ট ডা. প্রমোদ কুমার কে। কার্ডিওলজিক্যাল জটিলতার ঔষধ গ্রহণকারীদের উপর কি করোনার ঔষধ কেমন প্রভাব ফেলে জানতে চাইলে তিনি জানান, কোভিডের তীব্রতার উপর কোভিড মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট নির্ভর করে। এটি হাসপাতালে ভর্তি ও বহিরাগত/হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীদের মধ্যে বিভক্ত করা যেতে পারে। হাসপাতালে ভর্তি ব্যবস্থাপনা ও ঔষধকে হালকা, মাঝারি এবং গুরুতর ভাগেও ভাগ করা হয়।

শরীরের তাপমাত্রা, জ্বালা-পোড়া, এসপিও২ ইত্যাদি লক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ পর্যবেক্ষণ; লক্ষণ দেখা গেলে প্যারাসিটামল, আইভিএফ থার্ড গ্রহণের পরামর্শ প্রদান; এইচসিকিউ এড়িয়ে যাওয়া বা সতর্কতার সাথে অন্যান্য কার্ডিয়াক ঔষধের (যা কিউটি দীর্ঘায়িত করে) সাথে ব্যবহার করার জন্য প্রাথমিক পরামর্শ প্রদান; ইত্যাদি হালকা ভাগের অংশ। অন্যদিকে মাঝারি ও গুরুত্বর ভাগ নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানা প্রয়োজন।

কার্ডিয়াক ঔষধের সাথে রেমডেসিভির গ্রহণ করলে তেমন কোন অসুবিধা হয়না। এটি একটি নিউক্লিওটাইড অ্যানালগ, যা সার্স–কোভ-২ আরএনএ পলিমারেজ সংক্রমণে বাধা সৃষ্টি করে না; কার্ডিয়াক ঔষধের সাথে প্লাজমা (হাই টাইটার কনভ্যালেসেন্ট) গ্রহণও ঝুঁকিমুক্ত; ব্যক্তিগত চিকিত্সা, ডি-ডাইমার এবং জ্বালা-পোড়া’র উপর ভিত্তি করে অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করা যাবে; নরম্যাট্রেলভস + রিটোন্যাভির পিআর বৃদ্ধি করে ফলে এটি এড়িয়ে যেতে হবে বা সতর্কতার সাথে অন্যান্য কার্ডিয়াক ঔষধের (যা কিউটি দীর্ঘায়িত করে) সাথে ব্যবহার করতে হবে; আবার কার্ডিয়াক ঔষধের সাথে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, সোট্রোভিমাব গ্রহণ করলে তেমন কোন সমস্যা হয়না। তবে সকল ক্ষেত্রেই সতর্কতা ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।

অনেকের মতে করোনায় আক্রান্ত হলে হার্ট অ্যাটাক/স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই প্রসঙ্গে ডা. প্রমোদ জানান, পূর্বে যাদের মাঝারি বা গুরুতর কার্ডিয়াক জটিলতা ছিল তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে যারা কার্ডিয়াক কিউটি মুক্ত, তারাও কোভিড ঝুঁকির বাইরে নয়। তবে এই ঝুঁকি মূলত কার্ডিয়াক মার্কার এনটি প্রোবিএনপি (মায়োসাইক্ট স্ট্রেস মার্কার), ট্রপ আই (মায়োসাইট ইনজুরি), ইনফ্ল্যামেটরি মার্কার-এর (আইএল৬ সিআরপি) উপর নির্ভর করে। এছাড়া, রোগীর বয়স, ডিএম, ডিসলিপিডেমিয়া, সিকেডি ইত্যাদিও ঝুঁকির কারণ হতে পারে। রোগের লক্ষণ হিসেবে হার্ট ফেইলিওর, এমআই-এর তীব্রতা, মায়োকার্ডাইটিস, পিএডি অ্যারিথমিয়ার মতো কার্ডিয়াক জটিলতাকে ধরা হয়ে থাকে। করোনা সংক্রমণের মাত্রা হালকা হলে বা হোম-কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীদের টাকাইকার্ডিয়ার মতো ডিসারিথাইমিয়া, হোল্টার ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

ডা. প্রমোদ বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের কি দীর্ঘমেয়াদী হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি হতে পারে। করোনা সংক্রমণকালীন বা আক্রান্তের ২ মাসের মধ্যেই বিভিন্ন লক্ষণ লক্ষ্য করা গেলেও, সংক্রমণের ৩ মাসের মধ্যে পরীক্ষা করে লক্ষণ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। গুরুতর রোগীদের সংক্রমণকালে ও সংক্রমণের পর বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে কার্ডিয়াক জটিলতা আছে কিনা তা নিশ্চিত করা সম্ভব। করোনার তীব্রতা, চিকিত্সার সময় কার্ডিয়াক ধরা পড়া, কার্ডিয়াক বায়োমার্কার, শরীর জ্বালা-পোড়া হওয়া ইত্যাদি লক্ষ্য করা যেতে পারে। ‘টি’ কোষের সাইটোটক্সিসিটির এবং সাইটোকাইন স্টর্মের মাধ্যমে করোনা আক্রান্তদের শরীর জ্বালা-পোড়া হতে পারে।

মায়োকার্ডিয়াল ইনজুরির কারণে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে কি না, এই প্রসঙ্গে ডা. প্রমোদ কুমার কে জানান, মায়োকার্ডিয়াল ইনজুরির কারণে বিভিন্নভাবে করোনা বা সারস কোভ-২ হতে পারে। প্রায় ৭.২-২৭.৮% ক্ষেত্রে গুরুতর মায়োকার্ডাইটিস হতে পারে। এমন স্পষ্ট কোন গবেষণা এখন অব্দি হয় নি যেখানে মায়োকার্ডাইটিস আক্রান্ত করোনা রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার কোন লক্ষণ পাওয়া গেছে। তবে সকলের ক্ষেত্রে এমনটি নাও হতে পারে। বেশিরভাগ মায়োকার্ডাইটিস রোগী ৩ থেকে ১২ মাসের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

অন্যদিকে, এসিএস আক্রান্ত রোগীর করোনা সেড়ে গেলে তাকে সাধারণ রোগীদের মতো এসিসি/এএইচএ নির্দেশিকা অনুসারণ করে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। আবার বেশিরভাগ গুরুতর করোনা আক্রান্তদের অ্যারিথমিয়া দেখা দিতে পারে এবং এতে মৃত্যুর হারও বেশি। তবে অ্যাকিউট সেটিং চলাকালে অ্যারিথমিয়া হলে তা সেড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

পরিশেষে, তিনি বলেন, যেকোন ক্ষেত্রেই করোনা ও হৃদরোগ আলাদাভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে না ঘাবড়ে সতর্ক থেকে ও প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com