নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে বিদেশের মাটিতে কীভাবে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর মামলা তুলে নিতে যারা তার পক্ষে থেকে বিবৃতি দিচ্ছেন তাদেরকে ইউনূসের বিষয়ে খোঁজ নিতে বিশেষজ্ঞ পাঠানোর আহবান জানিয়েছেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকায় পঞ্চদশ ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার খুব অবাক লাগছে যে, এই ভদ্রলোকের (ইউনূস) যদি এতই আত্মবিশ্বাস থাকে যে, তিনি কোনোকিছু অপরাধ করেননি; তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।
‘আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। তাছাড়া সবকিছু আইনমতো চলে। কেউ যদি এখন ট্যাক্স না দেয় আর শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে; আর শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি লেবার কোর্টে মামলা করা হয়, আমাদের কি হাত আছে যে, সেই মামলা বন্ধ করে দিব? আপনারাই বিচার করেন।’
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ টেলিকমের ১০১ শ্রমিক-কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী না করা, শ্রমিকদের জন্য তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন না করা এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেয়ার কথা থাকলেও তা না দেয়ার অভিযোগে শ্রম আদালতে ইউনূসের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
আর এরি মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি লেখেন ১৬০ বিশ্বনেতা। এদের মধ্যে রয়েছে শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ ও শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের ব্যক্তিরা।
ইউনূসের পক্ষে চিঠি বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ: অ্যাটর্নি জেনারেলইউনূসের পক্ষে চিঠি বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ: অ্যাটর্নি জেনারেল
ইউনূসের মামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা চলমান মামলা। আমাদের দেশে তো চলমান মামলা নিয়ে আলোচনাও করি না। কারণ ওইটা বিচারাধীন। যেখানে বিচারাধীন বলে নিজের দেশেই গণ্য করা হয়, সেখানে বাইরে থেকে বিবৃতি এনে মামলা প্রত্যাহার! তো আমি কে মামলা প্রত্যাহার করার? এখানে আমার কোন অধিকারটা আছে আপনারাই বলেন!
বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের তিনটা অঙ্গ একসঙ্গে চলে। একটার ওপর তো হস্তক্ষেপ আমরা করতে পারি না। শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই বিবৃতি দিয়েছেন, আমি তাদেরকে আহবান করি, তারা এক্সপার্ট পাঠাক। তাদের যদি এত দরদ থাকে তারা আইনজীবী পাঠাক। যার বিরুদ্ধে মামলা তার সমস্ত দলিল-দস্তাবেজ তারা খতিয়ে দেখুক।
‘তারাই এসে দেখুক, সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি না? আমি তাদেরকে সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘তারা একটা বিবৃতি দিয়ে কী করে মামলা তুলবে আমি তো জানি না। কিন্তু তাদেরকে এসে দেখা দরকার, এখানে কী কী অসামঞ্জস্যতা আছে।
গত জুন মাসে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করার অভিযোগে একটি মামলায় ইউনূসের বিচার শুরু করেছে শ্রম আদালত। ইউনূসকে আসামি করে গত সোমবার গ্রামীণ টেলিকমের ১৮ জন কর্মচারী পাওনা মুনাফা না দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন। ইউনূসের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে দুইশর মত মামলা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শ্রম আইন নিয়ে তো আমাদের অনেক কথা শুনতে হয়। সর্বত্র নালিশ আর নালিশ। অথচ শ্রমিকরা অধিকারের জন্য মামলা করলে সেই দায় আমাদের না। এ বিষয় নিয়ে যারা বিবৃতি দিচ্ছেন, তারা এক্সপার্ট, আইনজীবী পাঠাক। তারা এসে দেখুক। ‘কর ফাঁকিতে ধরা পড়লে তাকে তো ফেরত দিতে হবে। তিনি (ইউনূস) দিচ্ছেন তো।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, ফিলিপাইনের নোবেলবিজয়ীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা হয়েছে। দিনের পর দিন সেই মামলায় তাকে চলতে হয়েছে। নোবেলবিজয়ী কারাগারে বন্দিও আছেন। এক্সপার্ট পাঠালে ইউনূস নিয়ে আরও অনেক কিছু বের হবে বলে মনে করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি এটা যদি একবার পাঠায় তাহলে আরও অনেক কিছুই বের হবে। যেটা হয়ত আমরা কখনো হাতই দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি বেতনভুক এক এমডি বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কীভাবে বিনিয়োগ করে, আর বাণিজ্য করে? এই যে শত শত ইনটেলেকচুয়াল, যারা বিবৃতি দিলেন, তারা কি এই কথাটা একবারও জিজ্ঞেস করেছেন? ‘ব্যাংকে চাকরি করা অবস্থায় আপনি কীভাবে বিদেশে এত টাকা বিনিয়োগ করলেন? ব্যবসা করলেন। আসা যাওয়া করেন, এত কিছু করেন। কোনো নিয়ম নাই। এ ব্যাপারে কোনো খোঁজ নিয়েছেন? কোত্থেকে টাকাটা আসলো? টাকাটা পেল কোথায়? কীভাবে এই টাকাটা উপার্জন করলো?’
এখনই ব্রিকসের সদস্য হওয়ার চিন্তা বা চেষ্টা করিনি: শেখ হাসিনাএখনই ব্রিকসের সদস্য হওয়ার চিন্তা বা চেষ্টা করিনি: শেখ হাসিনা
পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা চক্রের অবসান চান শেখ হাসিনাপাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা চক্রের অবসান চান শেখ হাসিনা ‘সিন্ডিকেটে হাত দেয়া যাবে না, বাণিজ্যমন্ত্রী বলে থাকলে তাকে ধরবো’‘সিন্ডিকেটে হাত দেয়া যাবে না, বাণিজ্যমন্ত্রী বলে থাকলে তাকে ধরবো’
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, ‘আপনারাও কি কখনো জিজ্ঞেস করেছেন? করেননি। এ রকম কেউ একজন রাজনীতিবিদ করলে আপনারা কী করতেন? লিখতে লিখতে কলম টলম তো একেবারে শেষ হয়ে যেত। তো কেন করেন নি?
তিনি বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন সবাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলছেন। এখন দুর্নীতিবাজ ধরা পড়লে যদি পছন্দ হয় তার কোনো দোষ নাই। অপছন্দ হলে তাকে ভালো করে আচ্ছামতো ‘আমি আহ্বান করবো, তারা এক্সপার্ট পাঠাবে। ভালো করে দেখে যাক। আর না হলে আমার দেশের আইন, আদালত আছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আদালত স্বাধীনভাবেই কাজ করবে। কে বিবৃতি দিল আর না দিল সেটা আদালত বিবেচনায় নেবে কেন?