সোমবার, ০১:২৮ অপরাহ্ন, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

চীনের জন্য যে সুযোগ করে দিল যুক্তরাষ্ট্র

কেরি ব্রাউন
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩০ বার পঠিত

১৭৯৩ সালে ব্রিটেন থেকে লর্ড ম্যাকার্টনির নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দলকে চীনে পাঠানো হয়েছিল। প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য সেই সফরের সমালোচনা করে যথার্থই লিখেছিলেন, তাদের আড়ম্বরের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল, রাজকীয় আপ্যায়ন করা হয়েছিল এবং চিয়েনলুং সম্রাট তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ফিরতে হয়েছিল শূন্য হাতে। চীনের সঙ্গে ব্যবসা করা যে কতটা কঠিন, সম্ভবত এ ঘটনাটি তার প্রথম দিকের একটি উদাহরণ।

গত বৃহস্পতিবার বুসানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে ট্রাম্প একেবারে শূন্যহাতে ফেরেননি। বেইজিং থেকে তিনি প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন—চীন ফেন্টানিলের (কৃত্রিম মাদক) ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করবে। এর বিনিময়ে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানোর কথা বলেছেন।

চীন আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন কিনবে। চীনের কাছ থেকে ট্রাম্প বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণও তুলে নেওয়ার আশ্বাস পেয়েছেন; কিন্তু ট্রাম্প বারবার করে যে ‘বড় সুন্দর চুক্তি’র কথা বলেছেন, সেটি স্বাক্ষরিত হয়নি।

ট্রাম্পের মতো একজন বিক্রেতার কাছে, সভা শেষ করে এয়ারফোর্স ওয়ানের বিমানে চড়ে এই ঘোষণা দেওয়াটা স্বাভাবিক যে ‘শূন্য থেকে ১০-এর মাপে… বৈঠকটিকে ১২ নাম্বার দেওয়া যায়।’

দুই পরাশক্তি যে আবারও প্রাপ্তবয়স্কদের মতো আচরণ করেছে, তার জন্য বিশ্বকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। এক বছরের বাণিজ্যযুদ্ধ বিরতি কার্যকর হওয়ায় আরও বাস্তবসম্মত পথে যাত্রা শুরুর সুযোগ তৈরি হলো, সেটি বলা যায়। এটিও ভালো বিষয় যে ট্রাম্প চীন সম্পর্কে কঠোর নীতি অনুসরণের পক্ষে যারা উমেদারি করেন, তাদের সরিয়ে দিয়েছেন। এই লোকগুলো এমন সব ভয়ানক সিদ্ধান্ত নেন, যাতে দ্বন্দ্বটা চিরস্থায়ীভাবে চলতেই থাকে।

এ বছরের শুরুর দিক ট্রাম্প যখন চীনকে কঠোর সমালোচনা করলেন, সেটি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সি চিন পিংয়ের জন্য পুরস্কার এনে দিয়েছে। কয়েক দশক ধরে চীনের নাগরিকেরা সমালোচনা করে আসছিলেন যে তাদের নেতারা অন্য বৈশ্বিক পরাশক্তির সঙ্গে এককাতারে দাঁড়াতে সক্ষম নয়; কিন্তু সি চিন পিং অনেকটাই প্রমাণ করেছেন যে চীন সত্যিই এটা করতে পারে।

কিন্তু একটি স্পষ্ট ও সার্বিক চুক্তির ঘাটতি এখনো একটি সমস্যা। কারণ, চীন হচ্ছে দর-কষাকষি করার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন দেশগুলোর একটি। পুরো প্রক্রিয়াটিকে নিজেদের সময় ও নিজেদের মতো করে খেলতে সক্ষম তারা। শেষ পর্যন্ত চীনের দিক থেকে যেসব ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাতে দেশটি যে ‘লাল সীমারেখা’ লঙ্ঘন করবে না, সেই নিশ্চয়তা নেই। বেইজিং চায় যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক কমাক এবং বাণিজ্যের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ সহজ করুক।

চীন এরই মধ্যে আমেরিকান সয়াবিনের বিকল্প বাজার খুঁজে পেয়েছে। নিজেদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে বিশাল প্রচেষ্টা চালিয়েছে। গত সপ্তাহে অনুষ্টিত হয়ে যাওয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চতুর্থ প্লেনামে (পূর্ণসভায়) এ বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। চীন নিশ্চিতভাবেই তাদের যোগ্য বিজ্ঞানী দলের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করবে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পেরেছে এবং এটি এমন একটি বিষয় যেটিকে তারা নিজেদের প্রয়োজনে দর–কষাকষির টেবিলে তুলবে। বিরল খনিজ হলো এমন এক অস্ত্র, যেটিকে কয়েক বছর আগে চীন জাপানের সঙ্গে ব্যবহার করেছিল।

এবার চীন বিরল খনিজকে আরও বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহার করছে। বিরল খনিজের ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ প্রায় একচেটিয়া, যেটিকে দেশটি হাতিয়ার করে তুলেছে। একটি বিভ্রান্তিকর বিষয় হচ্ছে, বিরল খনিজ কিন্তু ততটা বিরল নয়; কিন্তু এর খনন ও প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখন বিরল খনিজের বিকল্প খুব কম আছে। নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতেও বছরের পর বছর সময় লেগে যাবে।

সি চিন পিং যে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এতটা দেরিতে তার সঙ্গে দেখা করলেন. সেটিও প্রতীকী অর্থ বহন করে। এটি দেখায় যে যুক্তরাষ্ট্রের এখনো বিশাল শক্তি আছে; কিন্তু চীনের সঙ্গে মিলিয়ে নিজেদের সময় নির্ধারণ করতে হবে, এখানে একপক্ষীয় দাবি খাটবে না।

এ বছরের শুরুর দিক ট্রাম্প যখন চীনকে কঠোর সমালোচনা করলেন, সেটি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সি চিন পিংয়ের জন্য পুরস্কার এনে দিয়েছে। কয়েক দশক ধরে চীনের নাগরিকেরা সমালোচনা করে আসছিলেন যে তাদের নেতারা অন্য বৈশ্বিক পরাশক্তির সঙ্গে এককাতারে দাঁড়াতে সক্ষম নয়; কিন্তু সি চিন পিং অনেকটাই প্রমাণ করেছেন যে চীন সত্যিই এটা করতে পারে।

চীন যে অতিরিক্ত খেলতে পারে, এটি এখনো একটি বাস্তব বিপদের বিষয়। গত সোমবার বেইজিংয়ের একটি থিঙ্কট্যাংকের সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে আমি লক্ষ্য করেছিলাম, ট্রাম্প-সি বৈঠক নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায় কোনো উদ্বেগ বা উত্তেজনা নেই। বৈঠক থেকে একটি যৌক্তিক ফলাফল বেরিয়ে আসবে এমন আত্মবিশ্বাস তাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটিই সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

বাণিজ্যযুদ্ধবিরতি ভেস্তে যেতে পারে, তার অনেকগুলো কারণ এখনো থাকতে পারে; কিন্তু চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের হার এশিয়ার বেশির ভাগ প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রায় সমান হওয়ায়, চীনা নেতারা মনে করছেন, কয়েক মাস আগেও তারা যে ভয়ংকর ফলের কথা ভাবতেন, সেটি ঘটবে না। হোয়াইট হাউস থেকে এর আগে অনেক কঠোর বক্তব্য এসেছে। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প চীনের জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে মর্যাদা ও শক্তি অর্জনের একটি ঐতিহাসিক সুযোগ উপহার দিলেন।

  • কেরি ব্রাউন চীনা অধ্যয়নের অধ্যাপক এবং কিংস কলেজ লন্ডনের লাউ চায়না ইনস্টিটিউটের পরিচালক।

টাইম ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com