বৃহস্পতিবার, ১০:৩৪ অপরাহ্ন, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

চীনা পুরুষদের ফাঁদে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের নারীরা, পরিণতি অন্ধকার জীবন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫
  • ৩৮ বার পঠিত

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নারীদের বিয়ের ফাঁদে ফেলে চীনা পুরুষরা যৌন ব্যবসায় নামাচ্ছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রত্রিকাটির অনলাইন ভার্সনে খবরটি প্রকাশিত হয়।

ওই খবরে বলা হয়, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মহিলাদের সঙ্গে বিয়ের হিড়িক পড়েছে চীনা পুরুষদের! ক্রমবর্ধমান সেই প্রবণতা দেখে এ বার মানব পাচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল চীনের শি জিনপিং সরকার। বিয়েগুলি প্রাথমিক ভাবে আন্তঃসাংস্কৃতিক সম্পর্ক বলে মনে হলেও পরে দেখা গিয়েছে যে, এর নেপথ্যে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র এবং অপরাধ।

বাংলাদেশিদের বিয়ে করার আগে সতর্ক হওয়ার জন্য দেশের নাগরিকদের ইতিমধ্যেই পরামর্শ দিয়েছে চীনে। রোববার (২৫ মে)বাংলাদেশের চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়।

চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইম‌স’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ওই বিজ্ঞপ্তিতে চীনা নাগরিকদের ‘বিদেশি স্ত্রী কেনার’ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? কেন পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি মহিলাদের বিয়ে করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে চীনে? এর জন্য চীনের এক সন্তান নীতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞেরা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাতে দীর্ঘ দিন এক সন্তান নীতি নিয়ে চলছিল বেজিং।

কিন্তু দেশের জনসংখ্যার গড় বয়স ক্রমশ বাড়তে থাকায় এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছে চীনের কমিউনিস্ট সরকার। একের বেশি সন্তান গ্রহণের ক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়ার পর চিনে জন্মহার খানিক বাড়লেও নারী-পুরুষ অনুপাতের যে ভারসাম্য, তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

সে দেশের বহু পুরুষ বিয়ের জন্য অন্য দেশ থেকে হবু স্ত্রীকে আনার পরিকল্পনা করছেন। বহু সময়েই টাকার বিনিময়ে কোনও তৃতীয় পক্ষ সম্ভাব্য স্ত্রীদের খুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর এর আড়ালে চলছে মানবপাচার।

এক সন্তান নীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের কারণে চীনে বিবাহযোগ্য মহিলাদের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই নীতির ফলে ১৯৭৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পুরুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। ফলে, ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে জনসংখ্যার।

রিপোর্ট অনুযায়ী, মহিলা সঙ্গীর অভাবে এখন চীনের সাড়ে তিন কোটির বেশি পুরুষ একা রয়েছেন। এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

আর সে কারণেই স্ত্রী খুঁজতে মরিয়া চীনা পুরুষেরা পাড়ি দিচ্ছেন অন্য দেশে। এর জন্য মূলত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের গরিব পরিবারের তনয়াদের নিশানা বানাচ্ছেন তাঁরা। অনেকে কনে খুঁজতে ঢুঁ মারছেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে।

বাংলাদেশি মহিলাদের বিয়ে করার জন্য মোটা টাকাও খরচ করতে হচ্ছে সঙ্গীহীন চীনা পুরুষদের। চীনা সংবাদমাধ্যম ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর প্রতিবেদনে জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডিং চাংফাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, ‘‘চিনের গ্রামাঞ্চলে প্রায় সাড়ে তিন কোটি অবিবাহিত পুরুষ রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বিয়ে করতে ৫ থেকে ৬ লক্ষ ইউয়ান পর্যন্ত খরচ করছেন।’’

ডিংয়ের উদ্বেগ, শুধু বিয়ের জন্যই নয়, অনেকে আবার মহিলাদের কিনেও আনছেন বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে। আর এই ভাবে বাড়ছে মানবপাচার। কিন্তু কী ভাবে ঘটে পাচার? মূলত বাংলাদেশের নিম্ন আয়ে থাকা পরিবারগুলির কন্যাদের বিয়ে এবং উন্নত জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করা হয়।

এর পর বিয়ে করে বা অন্য ভাবে পাচার করা হয় চিনে। অভিযোগ, প্রতারণামূলক আন্তঃসীমান্ত বিবাহবন্ধনের বিরুদ্ধে আইন থাকা সত্ত্বেও এজেন্টরা গোপনে সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বহু নারীকে চিনে পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডেলি স্টার’ তাদের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, “বাংলাদেশের মহিলাদের চিনে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিয়ের নাম করে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু দুর্বৃত্তেরা এর আড়ালে মানবপাচার করছে।”

‘গ্লোবাল টাইমস’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের চিনা দূতাবাস বিভিন্ন ভিডিয়ো প্ল্যাটফর্মে ‘সীমান্ত ডেটিং’ সম্পর্কিত প্রতারণামূলক বিষয়বস্তু থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এটি বাংলাদেশে ‘বিদেশি স্ত্রী’ খোঁজার জন্য বিভিন্ন অননুমোদিত অ্যাপ বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা নিয়েও সতর্ক করেছে। চিনা আইন অনুসারে এই ধরনের পদক্ষেপকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকার চিনা দূতাবাস জোর দিয়ে জানিয়েছে, এই ধরনের অবৈধ বিবাহে জড়িতদের চিন এবং বাংলাদেশ— উভয় দেশেই শাস্তি হতে পারে। মানব পাচারকারীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

এই ধরনের প্রতারণার শিকার যাঁরা, তাঁদের অবিলম্বে চিনের জননিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করারও অনুরোধ করেছে দূতাবাস। সংবাদমাধ্যম ‘আল জাজিরা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে ঢাকা পুলিশ ১১ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছিল। ওই ১১ জনের বিরুদ্ধে টিকটক ব্যবহার করে বাংলাদেশি মহিলাদের যৌন ব্যবসায় প্রলুব্ধ করার অভিযোগ উঠেছিল।

পাকিস্তানেও একই ঘটনা ঘটছে। বিয়ের নাম করে পাক মহিলাদের চিনে পাচার করা হচ্ছে। প্রথমে চিনের ধনী পুরুষদের মনোরঞ্জনের জন্য ব্যবহার করে তাঁদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে যৌন ব্যবসার দিকে।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে ইসলামাবাদে থাকা চিনা দূতাবাস। তারা জানিয়েছে, ‘‘পাকিস্তানি মহিলাদের চিনে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক যৌন ব্যবসার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে কোনও প্রমাণ নেই।’’ তবে অবৈধ বিয়ের কার্যক্রম যে চলছে রমরমিয়ে, তা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

চিন এবং পাকিস্তান যৌথ ভাবে ৪৬০০ কোটি ডলারের চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্প শুরুর পর থেকে হাজার হাজার চিনা কর্মীর পাকিস্তানে যাতায়াত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে অবৈধ বিয়ের রমরমা।

বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত চিনও। আইনি ফাঁক এবং ধীর আইনি পদক্ষেপের কারণে পাচার রোধের প্রচেষ্টা বাধাপ্রাপ্ত হয়। চিনা নাগরিকেরা সহজেই পাকিস্তানে যাওয়ার ভিসা পেয়ে যান, কিন্তু পাকিস্তানিদের চিনে প্রবেশের জন্য কঠোর ভিসা প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। এর ফলে পাচারকারীদের কাজ করা সহজ হয়।

চিনের কেউ কেউ সমস্যা সমাধানের জন্য মেয়েদের আইনি বিয়ের বয়স কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। ‘চাইনিজ পিপল্‌স পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স’-এর সদস্য চেন সোংজি মহিলাদের বিয়ের বয়স ২০ থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com