পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে জিম্মি করা ট্রেনের সব যাত্রীকে ৩০ ঘণ্টা পর সফলভাবে উদ্ধার করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এই উদ্ধার অভিযানে ৩৩ হামলাকারীর সবাই নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের হাতে ২১ যাত্রী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্য নিহত হয়েছেন। এতে এ ঘটনায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮ জনে।
গতকাল বুধবার রাতে এসব তথ্য জানান পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর)পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, যে এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে, তা জনবসতি ও সড়ক নেটওয়ার্ক থেকে অনেক দূরে হওয়ায় সেখানে পৌঁছানো কঠিন ছিল। সন্ত্রাসীরা নারী ও শিশুদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করা কঠিন হয়েছিল।
অত্যন্ত দক্ষতা ও সতর্কতার সঙ্গে চূড়ান্ত অভিযান পরিচালিত হয়েছে জানিয়ে আইএসপিআর পরিচালক বলেন, অভিযানে ৩৩ সন্ত্রাসীর সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। চূড়ান্ত অভিযানের সময় কোনো যাত্রী নিহত হননি। তবে এর আগেই ২১ যাত্রীকে হত্যা করেন হামলাকারীরা। এ অভিযানে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, ফ্রন্টিয়ার কোর ও এসএসজি সদস্যরা অংশ নেন ও জিম্মিদের উদ্ধার করেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানান, এর আগে হামলার সময় রেলওয়ে নিরাপত্তায় নিয়োজিত তিনজন ফ্রন্টিয়ার কর্পস (এফসি) সদস্য নিহত হন। অভিযানে আরও একজন এফসি সৈনিক নিহত হয়েছেন।
আইএসপিআরের পরবর্তী এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সৈনিকদের এই আত্মত্যাগ অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছে এবং আরও বড় ধরনের বিপর্যয় রোধ করেছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা করে একটি রেলপথ উড়িয়ে দেয়, যার ফলে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস থেমে যায়। এই সুযোগে সশস্ত্র বন্দুকধারীরা ট্রেনটিতে হামলা চালিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে। রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, ট্রেনে প্রায় ৪৪০ জন যাত্রী ছিলেন।
এদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, হামলাকারীরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বিদেশি সহায়তাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তাদের মধ্যে আফগানিস্তানে থাকা একজন ‘মাস্টারমাইন্ড’ রয়েছেন।
হামলার শিকার ট্রেন ও আশপাশের এলাকা বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে জানিয়ে আইএসপিআর প্রধান আরও বলেন, যেসব যাত্রী জিম্মি অবস্থায় ছিল এবং অভিযানের সময় আশপাশের এলাকায় পালিয়ে গিয়েছিল, তাদেরও একত্রিত করা হচ্ছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ পাকিস্তানের নিরপরাধ মানুষকে তাদের ভুল মতাদর্শ, বিদেশি গোষ্ঠীর নির্দেশনা এবং সহায়তায় রাস্তায়, ট্রেনে, বাসে বা বাজারে বর্বরতার শিকার বানাতে পারবে না। যে-ই এটা করবে, আমি স্পষ্টভাবে বলছি, তাকে খুঁজে বের করে ন্যায়বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ইসলাম, পাকিস্তান বা বেলুচিস্তানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে যাত্রীবাহী ট্রেনে ‘সন্ত্রাসী হামলার’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এক বিবৃতিতে শাহবাজ শরিফ বলেন, এই পবিত্র রমজান মাসে নিরীহ যাত্রীদের লক্ষ্যবস্তু বানানো প্রমাণ করে, ওই সশস্ত্র ব্যক্তিদের ইসলাম, পাকিস্তান ও বেলুচিস্তানের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) প্রেসিডেন্ট আমাল ওয়ালি খান, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিনসহ আরও অনেকে।