দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য নানা দাবি নিয়ে আজ রোববার মহাসমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। ‘গো হোম ক্যাম্পেইন’ নামে এই সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে ১৯ জুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক সাথে পৃথক পৃথক স্থানে কয়েকটি সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। এসব সমাবেশে তারা গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরবেন।
গো হুম ক্যাম্পেইনের একটি ব্যানারের ভার্চুয়াল কপি এসেছে সাংবাদিকদের হাতে। সেখানে আয়োজক হিসেবে নির্দিষ্ট কোনো সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়নি। ‘নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী’ হিসেবে আয়োজকের স্থলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ক্যাম্পে প্রথমবারের মতো বড় সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত মাস্টার মুহিববুল্লাহর নেতৃত্বে। কিন্তু এবারের বিশাল সমাবেশে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেই বিষয়টি এখনো গোপন রাখছে রোহিঙ্গারা।
তবে একটি সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পে এবারো মহাসমাবেশ আয়োজনে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে নিয়ে নেতৃত্বে দিচ্ছে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহর হাতে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস।
রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে দাবিগুলোর একটি লিফলেট পেয়েছে সাংবাদিকরা। ওই লিফলেটে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস নামে এই সংগঠনের লোগো রয়েছে। ওই লিফলেটে ১৮টি দাবি উল্লেখ করেছে রোহিঙ্গারা।
জানা গেছে, ৫টি ক্যাম্প একসাথে জড়ো হবে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৯ এর ফুটবল মাঠে। সকাল ১০টায় শুরু হবে সমাবেশ। সেখানে একসাথে যোগ দেবে ক্যাম্প ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নাম্বারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। তবে বাকি ক্যাম্পগুলোর রোহিঙ্গারা ওই সমাবেশে যোগ দেবেন নাকি পৃথক পৃথক স্থানে সমাবেশ করবে সেই বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সমাবেশে উত্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা ওই দাবিগুলো হলো রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেই ডাকতে হবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন হতে হবে, সীমিত সময় রাখা যাবে মিয়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে, প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে, প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে গ্রামে গ্রামে, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রত্যেক চুক্তি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসঙ্ঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, এনজিও, সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বার্মার ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, সম্পত্তি ফেরত, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারসহ ইত্যাদি দাবি উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকের রোহিঙ্গাদের সমাবেশের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে কিনা সেটি জানতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয়ের আশায় ছুটে আসে। পরে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদেরকে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়। তাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ বিশাল বনভূমি হারিয়ে ফেলে। কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের আনাগোনায় উখিয়া-টেকনাফ পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসের জনপদে। ফসলের জমি বিনষ্ট, নিরাপত্তাহীনতা, ব্যয়বৃদ্ধিসহ নান কারণে দিনদিন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে রোহিঙ্গাদের সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় দেখছেন রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন। তাই যেকোনো উপায়ে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।