এবার আলোকিত হলো পুরো পদ্মা সেতু। একযোগে ৪১৫টি বাতির ঝিলিক পুরো সেতুকে করেছে আলোকিত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই প্রান্তের দুই সুইচে পদ্মা সেতুর ওপর অংশ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয় এলইডি বাতির আলোতে। মুন্সীগঞ্জ ও জাজিরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সরবরাহকৃত বিদ্যুতের আলো দেয় এই বাতিগুলো।
নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সড়ক এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ধাপে ধাপে শেষ হচ্ছে চূড়ান্ত পর্যায়ের ফিনিশিংয়ের কাজ। এর ধারাবাহিকতায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষের পর এবার বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে একযোগে পুরো সেতুর সড়ক বাতি প্রজ্বলন করা হলো।
বিকেল ৫টা ৩৪ মিনিটের সময় মাওয়া প্রান্তের ২০৫টি বাতি জ্বলে ওঠে। এর ২০ মিনিট পর জাজিরা প্রান্তের ২১০টি বাতিতে আলো প্রজ্বলিত হয়। জ্বলবে সারা রাত। সেতুর দুই লেনেই প্রমবারের মতো জ্বলে ওঠে এই এলইডি বাতি। জাজিরা প্রান্তের সাবস্টেশনের আওতার ২১০ বাতি ও লৌহজং প্রান্তের সাবস্টেশন থেকে ২০৫টি বাতি এখন পদ্মা সেতুকে আলোকিত করছে। পদ্মা সেতুর বাতিগুলো প্রমবারের মতো একযোগে জ্বলে উঠলে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে পদ্মাপারের মানুষ।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো: আব্দুল কাদের জানান, ১৭৫ ওয়াটের প্রতিটি এলইডি লাইটের একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব সাড়ে ৩৭ মিটার। পদ্মা নদীতে তীব্র বাতাস উপেক্ষা করে টিকে থাকার উপযোগী করে স্থাপন হয়েছে সড়কবাতিগুলো। ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার বাতাসের গতি সহ্য করতে পারবে। মূল সেতুতে ৩২৮টি এবং দুই প্রান্তের সংযোগ সেতুতে ৮৭টি লাইট রয়েছে।
তিনি আরো জানান, সেতুর ল্যাম্পপোস্টে বাতিগুলো সেট করার পর ধাপে ধাপে পরীক্ষা চালানো হয়। পুরো সেতুতে আটটি সার্কিট প্যানেল রয়েছে। এর মধ্যে মূল সার্কিট চারটি ও সাবসার্কিট চারটি। প্রথম দিন ২৪টি বাতি জ্বালানো হয়। এরপর ধাপে ধাপে পরীক্ষা চলে। গত ৪ জুন থেকে শুরু করে গত শুক্রবার সেতুর ৪১৫ বাতির সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। মঙ্গলবার একযোগে পরীক্ষার জন্য জ্বালানো হয় সব কটি বাতি।
তিনি আরো বলেন, দিনের বেলায় মেঘলা আকাশ বা ঘন কুয়াশায় আলোর স্বল্পতায় অটো জ্বলবে বাতিগুলো। অর্থাৎ প্রাকৃতিক আলোর স্বল্পতা দেখা দিলে বাতিগুলো নিজে থেকেই জ্বলে উঠবে।
গেলো বছরের ২৫ নভেম্বর মু্ন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া প্রান্তে প্রথম ল্যাম্প পোস্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল এসব ল্যাম্পপোস্ট বসানো ও এরমধ্যে বাতি লাগানোর কাজ শেষ হয়। গত ৪ জুন বিকেলে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানো হয়।
আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। পরদিন থেকে সকাল ৬ থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য তা খুলে দেয়া হবে।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য (পানির অংশের) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। তবে ডাঙার (ভায়াডক্ট) অংশ ধরলে সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। দ্বিতল পদ্মা সেতুর এক প্রান্ত পড়েছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায়, অপর অংশ শরীয়তপুরের জাজিরায়। তবে মাঝে রয়েছে মাদারীপুরের শিবচর। সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।