পদ্মা সেতু একটি স্বপ্নের নাম। বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবার সাহস। পদ্মা সেতু দেশের গর্ব। পদ্মা সেতু সমৃদ্ধ করছে দেশের অর্থনীতিকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে এই পদ্মা সেতু।
সবমিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ইতিহাসে একটি মাইলফলক এই পদ্মা সেতু। বিশেষ করে এই সেতুর সঙ্গে মিশে আছে দেশের ১৭ কোটি বাঙালির সুখ-দুঃখ আর আর্থ-সামাজিক মুক্তির সোপান। যে পদ্মা সেতু একসময় বাঙালির কাছে স্বপ্ন ছিল তা এখন বাঙালির কাছে এক গৌরবোজ্জ্বল অহংকার।
২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মা সেতু। এই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল দিয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু পার হন এবং এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণের ২১টি জেলার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ উন্মোচিত হয়। সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় পরের দিন ২৬ জুন। সেই হিসাবে আজ রোববার (২৫ জুন) পদ্মা সেতুর এক বছর পূর্ণ হলো।
জানা গেছে, পদ্মা সেতু থেকে বছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা টোল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি মাসে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা টোল আদায়ের লক্ষ্য ছিল। তবে চলতি মাসের গত ৭ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর টোল আদায় হয়েছে ৭৫৮ কোটি ৮ লাখ ৭৫০ টাকা। গত ১৪ জুন জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান।ওবায়দুল কাদের জানান, গত বছরের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছিলেন। ঐ মাসের ২৬ জুন থেকে যান চলাচলের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করার পরে চলতি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত ৭৫৮ কোটি ৮ লাখ ৭৫০ টাকার টোল আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার টোল আদায় হয়েছে। গত এপ্রিল মাসে ৭১ কোটি ১৩ লাখ টাকার টোল আদায় হয়েছে। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিদিন পদ্মা সেতু থেকে প্রায় ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। আর গড়ে প্রতিদিন সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়েছে ১৬ হাজার ২২৩টি।
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের সেতু পদ্মা রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনে পদ্মা নদীই ছিল একমাত্র বাধা। পদ্মায় সেতু হওয়ায় সে বাধা কেটেছে। এই সেতুর ফলে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বার বার গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারছে। মাত্র ২/৩ ঘণ্টায় বাড়ি থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। আগে যেখানে কয়েক দিন পর্যন্ত লেগে যেত সেখানে এখন জেলেদের মাছ ও কৃষকদের পণ্য খুব কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সেতুটি জিডিপিতে ৪২ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা যোগ করবে। যা মোট জিডিপির ১.২%-এর সমান। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মোংলা ও পায়রা বন্দরের যোগাযোগ সহজতর করার সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা সেতু দেশের মোট দেশজ উত্পাদনে (জিডিপি) ১.২% প্রবৃদ্ধি আনবে।
পদ্মা সেতু চালুর পর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী গ্রামের মানুষগুলো যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হরহামেশাই ছুটে আসছেন বাড়িতে। গ্রাম থেকে যারা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন ছিলেন, সেই শহুরে মানুষের আসা-যাওয়া বেড়েছে গ্রামের বাড়িতে। বাড়ছে মেলবন্ধনও। পাশাপাশি পরিবার-পরিজন রেখে কংক্রিটের নগরে একঘেয়েমি জীবন-যাপন যারা করছেন, তাদের মনে প্রশান্তি জাগিয়েছে পদ্মা সেতু। ভোরে রাজধানী ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে তৈরি সকালের নাস্তা করেন এমন সংখ্যাও কম নয়।
এদিকে উদ্বোধন ও যানচলাচল শুরুর এক বছর পর পদ্মা বহুমুখী সেতুর ব্যয় ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৮০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এই ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গত ২২ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির এই বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, সেতু বিভাগের অধীন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণকাজের ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ৫৮০ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।