টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এর সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম, অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও ভবিষ্যৎ করণীয় পর্যালোচনা শীর্ষক একটি কর্মশালা আজ (বৃহস্পতিবার) বিজেআরআই এর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিজেআরআই মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল আউয়াল এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ রুহুল আমিন তালুকদার, অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি অনুবিভাগ), কৃষি মন্ত্রণালয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোসাম্মাৎ জোহরা খাতুন, যুগ্ম সচিব (পিপিবি অধিশাখা), কৃষি মন্ত্রণালয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্য মোঃ রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, “আমরা জানি জিডিপিতে পাটের অবদান ১.৪% এবং কৃষিতে ২৬%, অর্থাৎ মোট জিডিপিতে পাটের অবদান ৮ বিলিয়নের মতো। আবার ৮ বিলিয়নের ১.২ বিলিয়ন আমরা রপ্তানি করি। তাহলে পাটের রপ্তানি টু জিডিপি অনুপাত অন্য যেকোনো সেক্টরের থেকে বেশি।”
তিনি পাটের উৎপাদনশীলতাকে দ্বিগুণ করার আহবান জানান এবং বলেন স্ব-স্ব ইনস্টিটিউটকে তাদের পণ্যের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
“উৎপাদনশীলতা বাড়লে ইউনিট প্রতি খরচ কমবে, ইউনিট প্রতি খরচ কমলে লভ্যাংশের অনুপাত বাড়বে, আর লভ্যাংশের অনুপাত বাড়লে আয় বাড়বে, ফলে দারিদ্রতা কমবে। একই সাথে জীবন যাত্রার মান বাড়বে, ক্ষুধার্থতা কমবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা বাড়বে। এভাবে চক্রাকারে একটির সাথে আর একটি জড়িত এবং সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নতি হবে।”
আমরা যদি এসডিজি এর কথা বলি তবে উৎপাদনশীলতায় অবদান রাখতে হবে, আয় বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে হবে, টেকসই কৃষিতে অবদান রাখতে হবে। আমি দেখতে পাচ্ছি পাট আগে থেকেই ভালো একটি অবস্থানে রয়েছে। যেমনঃ এক হেক্টর জমিতে ১০০ দিনের পাট বায়ুমন্ডল থেকে ১৫ টন কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং ১১ টন অক্সিজেন ত্যাগ করে, যা একটি পরিবেশ বান্ধব ফসল। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পাট শাক চাষ করে পরিবারের পু্ষ্টির নিশ্চয়তা প্রদান করা যেতে পারে।
সরকার ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর পাশাপাশি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর মাত্রাবৃদ্ধি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে বিজেআরআই এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
সভাপতির ভাষণে ড. মোঃ আবদুল আউয়াল বলেন, বাংলাদেশ সরকার খুবই সফলতার সাথে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) সম্পন্ন করেছেন। এসডিজি-তেও সফলতার আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন এসডিজি বাস্তাবায়ন সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, সকলকে এক যোগে কাজ করতে হবে।
“পাটের একটি সমস্যা হলো বীজের সমস্যা। পাটের জমিতে যদি পাট বীজ উৎপাদন করা হতো তবে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। আমরা কেনাফ বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছি, বিজেআরআই এর সহায়তায় কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার কিরাটন ইউনিয়নে কেনাফ বীজ উৎপাদন সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে। এতে মোট বীজ উৎপাদনকারী কৃষক/কৃষানীর সংখ্যা প্রায় ৬১২ জন। আমরা বিজেআরআই কর্তৃক বেশকিছু টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছি যেখানে এককভাবে পাট বীজ উৎপাদনের প্রয়োজন নেই, পাট বীজ আন্তঃফসলের সাথে মরিচের জমিতে, মুলার সাথে ও অন্যান্য রবি শষ্যর সাথে আন্তঃফসল হিসেবে পাট বীজ করা যায় এবং এটা লাভজনক। আবার পুকুরপাড়ে, নদীর ধারে, রাস্তার সাথে, জমির আইলের ভিতর এবং বাগানের ভিতর আমরা পাট বীজ উৎপাদন করতে পারি। নিজের বীজ নিজে করি এটা আমাদের স্লোগান,” বলেন ড. মোঃ আবদুল আউয়াল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোসাম্মাৎ জোহরা খাতুন বিজেআরআই এর বিজ্ঞানীগণ তাদের মেধা মনন দিয়ে পাটের সোনালী ঐতিহ্যের গৌরবকে ধরে রাখার কারণে তিনি পাটের গবেষকদের সকলকে ধন্যবাদ জানান।
কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেছেন প্রশাসন ও অর্থ উইং এর পরিচালক কৃষিবিদ ড. এস এম মাহবুব আলী এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (নীতি-৩ শাখা) মোহাম্মদ ইয়ামিন খান।
আরো উপস্থিত ছিলেন কারিগরি বিভাগের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মোসলেম উদ্দিন, জুট টেক্সটাইল বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস আরা দিলরুবা এবং কৃষি বিভাগের পরিচালক কৃষিবিদ ড. নার্গীস আক্তারসহ সকল বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।
প্রেস রিলিজ