রবিবার, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

শুভ নববর্ষ ১৪২৯-আপন রঙে ফিরল বৈশাখ

শামীম লাবু:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৯৭ বার পঠিত

আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। বঙ্গাব্দ ১৪২৯-এর প্রথম দিন। আজ বাঙালির একান্ত উৎসবের দিন। বাঙালি আজ বিশ্ব বাঙালি হয়ে তাই নব-আনন্দে বরণ করে নেবে নতুন বছরকে।

প্রকৃতি বিভিন্ন ঋতুতে নানা রঙে ও বৈচিত্র্যে রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে সকলের মনে আবেগের সঞ্চার করে। প্রকৃতির এ রূপ বদল মানুষকে জানিয়ে দেয় পরিবর্তনই জীবনের চলার পথের একমাত্র সত্য।

আজ নব আনন্দে জেগে ওঠার দিন করোনা মহামারির তাণ্ডবে গত দুই বছর বন্ধ ছিল বৈশাখ উদযাপন। এ বছর তাই নতুন উদ্যমে বৈশাখ বরণের প্রতীক্ষায় পুরো জাতি। আজ প্রভাতে সবাই গেয়ে উঠবে—‘নব আনন্দে জাগো—আজি নব রবি কিরণে,/ শুভ্র-সুন্দর প্রীতি উজ্জ্বল নির্মল জীবনে!’

বিগত জীবনের দীনতা, হীনতা ও জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নতুন করে উদ্যমী হওয়ার আহ্বান জানায় বৈশাখ। দুঃখ-কষ্ট, বেদনাকে মুছে ফেলে নতুন করে বাঁচার নির্দেশনা দেয়। বৃক্ষের পাতা ঝড়ে পড়ার পরে সেখানে নতুন পাতার আগমন যেমন বৃক্ষকে সাজিয়ে তোলে, তেমনই বৈশাখ নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করে মননে।

বাংলাদেশে প্রতি বছর মহা ধুমধামে উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপিত হয়। বৈশাখী উৎসবে থাকে প্রাণের ছোঁয়া, থাকে উচ্ছ্বাসের বাঁধভাঙা জোয়ার।শিশু-যুবা-বৃদ্ধসহ সব বয়সের সব শ্রেণি মানুষ এ দিনটি উদ্‌যাপন করে। বাংলা নববর্ষ বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রধান উপাদান। এ উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা।

আরবি হিজরি সনকে ভিত্তি করেই বাংলা সনের উৎপত্তি। মুঘল সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫) আমলে বাংলার কৃষকদের সুবিধার্থে হিজরি সনকে ভিত্তি ধরে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। হিজরি বছর সৌর বছর থেকে ১১ দিন ছোট হওয়ায় এ দেশের ঋতু পরিবর্তনের সাথে হিজরি বছরের মিল হয় না। এতে কৃষকদের ফসলি সন গণনায় সমস্যা হয়। কৃষকের কাছ থেকে জমিদারের খাজনা আদায়েও সমস্যা দেখা দেয়। কৃষকের সমস্যা দূর করতে এবং জমির খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে মূলত বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয়। বাংলা নববর্ষ বাঙালির হলেও সেটির আনন্দ ও আমেজটা কৃষকের ঘরেই বেশি দেখা যেত।ইংরেজ শাসনামল অবসানের পর কালক্রমে নববর্ষ উদ্‌যাপন উৎসবে পরিণত হয়। বিশেষ করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ও পরবর্তীকালের নানা ঘটনা বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনকে প্রাণবন্ত ও বিস্তৃত করেছে।

একটা সময় গ্রামগঞ্জে বৈশাখী মেলা বসত। সেসব মেলা এখন কমে গিয়েছে। কৃষিজ পণ্য, কুঠির শিল্প দ্রব্য, মৃৎ ও হস্তশিল্প দ্রব্য, আসবাবপত্র ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের ধুম পড়ত সেসব মেলায়। মেলার সময় নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা, কুস্তির আসর, এমনকি মেলায় ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, বলী খেলা ইত্যাদি বিনোদন ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান বসতো। তখন মেলা ছিল বাঙালির প্রাণের উৎসব। মেলা উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো ও আপ্যায়নের ব্যবস্থা হতো। আর বিবাহিতা মেয়েরা নাইওর আসত বাপের বাড়ি। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই বৈশাখী মেলায় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠত। শিশুদের খেলাধুলার জন্য ঘুড়ি, মাটির তৈরি হাতি-ঘোড়া ইত্যাদি বেচা-কেনা হতো। মেয়েদের হাতের চুড়ি, কানের দুল গলার হার ইত্যাদিও। এ ছাড়া জুড়ি-বুন্দি, জিলাপি, রসগোল্লাসহ নানা ধরনের মিষ্টি ও মুখরোচক খাবারের সমারোহ ছিল বেশ চমৎকার।

পয়লা বৈশাখ বাংলার আপামর জনসাধারণের কাছে একটি উৎসবের দিন হিসেবে পরিগণিত। এ দিনটি উদ্‌যাপিত হোক আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে। বিশ্বায়নের বিভ্রান্তি থেকে নতুন প্রজন্মকে হতে হবে শেকড়সন্ধানী। তরুণ-যুব ও শিক্ষার্থীদের মনে জাতীয় মূল্যবোধ সংস্কৃতি ও নৈতিকতার চেতনা জাগ্রত হোক। যাবতীয় অপসংস্কৃতি প্রতিহত করতে, নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে। উচ্চকিত করতে হবে মানবিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাঙালি সংস্কৃতি। তাহলেই আমাদের বাঙালির ‘নববর্ষ’ উদ্‌যাপন সার্থক হবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com