চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনার পর আগামীকাল শনিবার বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে বিএনপির এই সমাবেশের আগে সব ধরনের গণপরিবহন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়েছে বরিশাল।
আগের বিভাগীয় সমাবেশগুলোর অভিজ্ঞতায় এমন পরিস্থিতির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শনিবার সমাবেশ হলেও সেজন্য আগেই বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন বহু নেতাকর্মী। মাটিতে ত্রিপল আর বস্তা বিছিয়ে রাত কাটিয়েছেন তারা।
পরিবহন ধর্মঘটের ডাকার পর বিভাগের বিএনপির নেতা-কর্মীদের সমাবেশে যোগদানের জন্য উপযুক্ত সময় ছিল বৃহস্পতিবার। এই দিন কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন পরিবহনে করে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এসে উপস্থিত হন।
ছাত্রদলকর্মী রায়হান বলেন, আমরা গলাচিপা থেকে এক সঙ্গে এক হাজারের বেশি মানুষ এসেছি।
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চর মাইনকা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন সিকদার বলেন, অসম্ভব দুর্ভোগ-দুর্দশা সহ্য করে সমাবেশস্থলে এসেছি। সরকার সব বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ট্রলার ভাড়া করে কয়েক হাজার মানুষ এসেছি। এতো কষ্ট করছি শুধু ভোটাধিকার ফেরত পাওয়ার জন্য। ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারি না। অথচ দেশ স্বাধীন হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েই।
৭ নং ওয়ার্ড যুবদলের সম্পাদক আব্দুর রহিম সরদার বলেন, কষ্ট করছি আরও করব। কিন্তু ভোট না দিয়ে মেম্বার-চেয়ারম্যান-এমপি নির্বাচনের খেলা আর দেখতে চাই না।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বরগুনা থেকে ৪১টি ট্রলার নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা করেন দলের কর্মীরা। তাদের দাবি, সড়কপথে কোনোভাবেই বরিশাল যেতে না পেরে শেষে এ পথ বেছে নেন তারা।
বরগুনা জেলা যুবদলের সভাপতি জাহিদ মোল্লা বলেন, সরকার ও সরকারি দলের দুরভিসন্ধি আমরা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলাম। এ কারণে যুবদলের নেতা-কর্মীদের নৌপথে বরিশাল যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছিল।
বরগুনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক তারিকুজ্জামান টিটু বলেন, হঠাৎ করে ধর্মঘট ডেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বরগুনা জেলা বাস মালিক সমিতি। এ কারণে সড়কপথে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক নিয়ে ইতোমধ্যে জেলা বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বরিশালে পৌঁছেছেন। যারা বাকি ছিলেন তারা বৃহস্পতিবার রাতে ট্রলারযোগে বরিশাল রওনা দিয়েছেন।
বরিশাল থেকে অভ্যান্তরীণ ও দূর পাল্লার বাস, ইজিবাইক চলাচল আগেই বন্ধ ঘোষণা করেন মালিক-শ্রমিকরা। এরপর বুধবার রাতে বন্ধ করা হয় স্পিডবোট সার্ভিস। আর বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করা হয়। আর বিকেলে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার চলাচলও দু’দিন বন্ধ রাখার ঘোষণা আসে। জেলা ট্যাক্সি ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ নুরুজ্জামান জলিল বলেন, শহরে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় মাইক্রো চালকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে, যদি হামলা হয় তাহলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এই ক্ষতির মুখে যেন না পড়তে হয় এজন্যই আপাতত না চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ভোলা-বরিশাল রুটের লঞ্চ চলাচল মূলত পূর্বঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়। লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় বরিশাল-ভোলা রুটে যাতায়াতাকারী নিয়মিত যাত্রীদের। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, ভোলায় আওলাদ নামক একটি লঞ্চে বুধবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে শুধু ভোলা রুটে লঞ্চ চলছে না। তবে বরিশালের লঞ্চ মালিক সমিতি লঞ্চ বন্ধের কারণ জানাতে পারেনি।
ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. আবু জাফর দিদার বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় কোনো রকম নৌকা দিয়ে ফেরিতে পার হয়ে বরিশাল পৌঁছেছি। তাও আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে ফেরির স্টাফরা জোর করে নামিয়ে দিয়েছে।
লঞ্চের মতো স্পিডবোট বন্ধেরও সঠিক কারণ জানা যায়নি। বুধবার রাতে ভোলা-বরিশাল রুটের লাইন সুপারভাইজার তারেক শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করার ঘোষণা আমরা দিইনি। ভোলা মালিক সমিতির লোকজন এ ঘোষণা দিয়েছেন।