বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে বর্তমান সরকার গোটা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। এদেরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ যাদেরকে চান তারাই ক্ষমতায় আসবে।
শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই। একজন নারী ফেসবুকে পোস্ট করায় রাতের বেলা তাকে ধরে নিয়ে যায়। আজকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করেছে সরকার।
তিনি বলেন, শহীদ জিয়া দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে সম্মান দেয়ার জন্য সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন সংযোজন করেন। বাংলাদেশের মানুষ হচ্ছে ধর্মভীরু।
আলেম-ওলামাদের গ্রেফতারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে আমাদের দুঃখ হয়। শুধু ইসলামের পক্ষে থাকার কারণে অনেক আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব কথা কিন্তু আমরা ভুলে যাইনি। আমরা ক্ষমতায় থাকাকালীন মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা ও পাঠাগার তৈরি করেছিলাম। মন্দিরেও পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, আজকে সরকার বাহবা নিতেছে যে তারা কওমি মাদরাসার জন্য অনেক কাজ করেছে। কওমি মাদরাসার দাওরা শিক্ষাকে মাস্টার্সের সম্মান দিয়েছে। কিন্তু এই কাজটা বিএনপির আমলে প্রায় শেষ হয়ে যায়। আজকে আলেমদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সরকার সেই কাজটিই ভালোভাবে করে। আজকে তারা গোটা দেশকেই বিপন্ন করে ফেলেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে মসজিদে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিছু দিন আগে আপনারা দেখেছেন খুতবায় কী হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি কিছু দিন আগে দেখেছি মসজিদের সামনে পোশাকে এবং সাদা পোশাকের পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেখানেও তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই।
আমরা যারা ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী তারা দীর্ঘ দিন যাবৎ এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করে আসছি। হিন্দুরা হিন্দুদের মতো, মুসলিমরা মুসলিমদের মতো ও খ্রিস্টানরা খ্রিস্টানদের মতো করে স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করে এসেছে। কিন্তু এই সরকার সবাইকে বিভাজনের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তারা সকলের উপর কতৃত্ব দেখাচ্ছে।
আজকে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন চালিয়ে তাদের উপাসনালয় ভেঙ্গে দেয়। তাদের সম্পত্তি দখল করে নেয়। রামুতে আপনারা দেখেছেন কী হয়েছে। সব সম্পত্তি দখল দিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশের ২৯টা বিভাগকে গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতির কোনো খবর প্রকাশ না হয়। এমনিতেই চ্যানেল ও পত্রিকাগুলোতে বলে দেয়া হয় কোন খবর যাবে কোনটা যাবে না।
তিনি বলেন, আজকে চলমান কঠিন সময়ে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে। ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী সরকারকে মোকাবেলা করা শুধু একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি থানায় যারা বিএনপি করে এমন আটজন, অর্থদাতা পাঁচজনের নামের তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা। এটা কি গণতন্ত্র?
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি সংগঠন নিহত আবরারের স্মরণে কর্মসূচি পালন করতে গেলে তাদের মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পিটিয়েছে। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা দিয়েছে। তারা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলে নিয়েছে। দেশে অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারকে দ্রুত পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে জনমত তৈরি করার জন্য আলেম-ওলামাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ যাদের চায় তারাই ক্ষমতায় যাবে। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমরা চাই বৈষম্যহীন সামাজিক মূল্যবোধের রাষ্ট্র।
ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মাওলানা নজরুল ইসলাম তালুকদারের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের মাওলানা কাজী মো: সেলিম রেজা, মাওলানা আলমগীর হোসেন, আবু বকর চাখারী, ইখলাস উদ্দীন বাবুল, এনামুল হক মাজেদী, মাওলানা কাজী মোশারেফ হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, কারী সিরাজুল ইসলাম, কাজী মোস্তফা জামাল খোকন মাওলানা আলমগীর হোসেন খলিলী, হাফেজ মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ। এছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ওলামা দলের বিভিন্ন স্তরের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।