কয়েক বছর ধরে নানা ‘অজুহাতে’ আন্দোলন পেছালেও চলতি বছরের শুরু থেকে রাজপথে আছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের ‘গণতান্ত্রিক’ আন্দোলনে যেন বাধা দেওয়া না হয়। এমনকি ‘ন্যায়সঙ্গত’ দাবি নিয়ে গণভবনে গেলে আপ্যায়নের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। মূলত এর পর থেকেই বিএনপির আন্দোলনের পরিসর বেড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
পুলিশি বাধায় বিএনপির সব কর্মসূচি এখন পণ্ড না হলেও অনেক জায়গায় তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে সংঘর্ষ হয়। এর আগে সংঘর্ষ হয় উত্তরায়। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপির সভা-সমাবেশে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে সীমা ছাড়িয়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে ঢাকার প্রবেশদ্বার তথা ঢাকা-১৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় আগামী ৩০ তারিখ পর্যন্ত কর্মসূচি দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত) সাবিনা আক্তার তুহিন। তিনি আমাদের সময়কে জানান, আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে তিনি এই কর্মসূচি দিয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক রানাকে শোডাউন দিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তারা আন্দোলনের নামে হামলা ও নাশকতা করলে রাজনৈতিকভাবে রাজপথে প্রতিহত করব। এ বিষয়ে আমরা সদাতৎপর আছি।’
ঢাকার আরেক প্রবেশদ্বার যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এলাকায় প্রতিদিন নেতাকর্মীদের নিয়ে তৎপর রয়েছে যাত্রাবাড়ী আওয়ামী লীগ। যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না আমাদের সময়কে বলেন, ‘ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা যাত্রাবাড়ী। অতীতে এখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়েছে। সুযোগ পেলে এখনো করবে। তাই তারা যেন কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিমুহূর্তে রাজপথে আছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা আমাদের সময়কে বলেন, পল্টন ছাড়া রাজধানীর আর কোথাও বিএনপিকে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। যেখানে দাঁড়াবে, সেখানেই প্রতিবাদ করা হবে, হচ্ছেও।
বিএনপির আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের আন্দোলনে বাধা দেওয়া কোনো নির্দেশনা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেই। আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি নেতারা পুলিশের ওপর হামলা করলে এ বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, বিএনপি সভা-সমাবেশ তথা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হবে না। আমরা তাদের কোথাও বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, নাশকতা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করলে তো আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের মধ্যে থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক দল। কারও দ্বারা জনগণের কোনো ক্ষতি হলে তো আমাদের দলের নেতাকর্মীরা বসে থাকবে না।’