মূলধন সঙ্কট দেখা দিয়েছে দেশের ১২টি সরকারি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। ব্যাংকগুলো ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না। এক দিকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি, অপরদিকে মূলধন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ঝুঁকির মাত্রাও বেড়ে গেছে। গত জুন শেষে আলোচ্য ব্যাংকগুলোকে মূলধন ঘাটতি হয়েছে ২৯ হাজার ৩১ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৬টি সরকারি ও ৬টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে নতুন প্রজন্মের একটি ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকটি হলো বেঙ্গল ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে যাওয়ায় ও খেলাপি ঋণের আধিক্যের কারণে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে গেছে। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় এর বিপরীতে কাক্সিক্ষত হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি এ ১২টি ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। আর এর কম হলেই মূলধন ঘাটতি দেখা দেবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ, মূলধন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকিং খাতের রেটিং খারাপ হবে। ফলে পণ্য আমদানিতে দেশীয় ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। ফলে থার্ডপার্টি গ্যারান্টির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হবে। এতে ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাবে।
আবার সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বছরের পর বছর কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি থাকতে পারবে না। আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত মেনে নেবে। ২ বছরের পর মূলধন ঘাটতি হলে ওই ব্যাংককে হয় মার্জার অর্থাৎ অন্য কোনো ব্যাংকের সাথে একীভূত হয়ে যেতে হবে, অথবা বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে কোনো ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হলে, তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কীভাবে মূলধন ঘাটতি পূরণ করবে তার পরিকল্পনা জমা দিতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে তা মনিটরিং করবে। এভাবে দুই বছর পর আইন অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বছরের পর বছর ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দেখা দিলেও এর বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, মূলধন ঘাটতিতে থাকা ১২ ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ১ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ২ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ১২৪ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১৩ হাজার ১৭১ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে জুন শেষে।
অপরদিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২৯৯ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংকের ২৬৩ কোটি টাকা এবং নতুন প্রজন্মের বেঙ্গল ব্যাংকের ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে।