পাকিস্তান ক্রিকেট মানেই যেন অনিশ্চিত সৌন্দর্যের মোহনীয় এক সুর। তবে এই ম্যাচেও কেন করবে ভুল? শেষ ওভারে রহস্যের গোলকধাঁধায় ফেলে পাকিস্তান সমর্থকদের হৃদয় কাঁপাল সেই পুরনো রূপে। এমন একটা ম্যাচ দেখার অপেক্ষায় বসে থাকা যায় হাজার বছর ধরে। ১৯.৫ বল পর্যন্ত অপেক্ষা, কী ঘটে! শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উত্তাপ টেনে উত্তেজনা আর উন্মাদনার পারদ বাড়িয়ে যদিও ম্যাচটা পাকিস্তানই জিতে নিয়েছে। তবে দুই পরাশক্তির এমন লড়াই নিঃসন্দেহে গোটা বিশ্বকে থামিয়ে দিয়েছে।
শুরুর গল্পটা গেরুয়া-নীল। পাকিস্তান বোলিং লাইন-আপ যেন হঠাৎই ছন্দহীন। কে বলবে দুই রাত আগে ওরাই একটা দলকে গুটিয়ে দিয়েছে মাত্র ৩৮ রানে। নাসিম শাহ, হারিস রউফ কিংবা হাসনাইন- রোহিত-রাহুলের রঙে ওরা সাদা-কালো, মলিন। মাত্র ২৬ বলে অর্ধশতক, চার-ছক্কায় ছুটিয়েছেন আগ্রাসনের রথ। যদিও ইনিংস বড় হয়নি, তবে পাকিস্তানিদের কাঁপিয়ে দিয়েছে ওদের চোখ রাঙানি। সমান ২৮ রানে ফিরেছেন দুজনে, সম্মুখ যোদ্ধা হয়ে বীরের মতোই লড়েছেন মহারণে।
সূর্য রোববার আলো ছড়ানোর বার্তা দিলেও ঢাকা পড়েছে মেঘে; পান্ত, পান্ডিয়া, দীপক হোডাও পারেননি ইনিংস টেনে নিতে। তবে ভীত হয়নি ভারত, ওদের কোহলি মাঠে আছে৷ নিজের মতো স্বভাবজাত ইনিংস খেলেছেন সহজজাত ভঙিতে। তবে যেখানে মনে হচ্ছিল ২০০ পাড়ি দিবে বুক চিতিয়ে, সেখানে ১৮২ রানে আটকে দেয়া পাকিস্তানি বোলারদের সফলতাই বটে। কৃতিত্বটা অবশ্য শাদাব-নাওয়াজই বেশি ভাগীদার। তবে একাধিকবার বল হাত না ফসকালে আর এত অতিরিক্ত রান বিলি না করলে হয়তো আরো আগেই থেমে যেত ভারতের রথ।
বিশাল একটা লক্ষ্য তাড়ায়, পাকিস্তান জিতে গেছে একটা কূটচাল বা একটা জুয়ায়। প্রমোশন দিয়ে মোহাম্মদ নওয়াজকে ৪ নম্বরে পাঠিয়ে দেয়ায়। যেখানে পুরো সফল পাকিস্তান, ২০ বলে ৪২ রানের ঝড়ো ইনিংস ভারতের উঠিয়েছেন নাভিশ্বাস। সেখানেই ভারতের পিছিয়ে পড়া, জয়ের বন্দরে পাকিস্তানের এক পা। বাধা হতে পারত আর্শদীপের ছেড়ে দেয়া ক্যাচটা, তবে সায় দেয়নি ভাগ্যটা। তাছাড়া ফিল্ডিং ব্যর্থতায় নানা সময়ই প্রতিপক্ষ পাকিস্তান থেকে অতিরিক্ত কিছু পায়, মাঝে মাঝে কিছু বিনিময় তো শোধ করে দেয়াই যায়।
‘পুরো ম্যাচে ক্যামেরা যা করিয়াছে দৃশ্যধারণ, অর্ধেক তাহার ভারত-পাকিস্তান; অর্ধেক রিজওয়ান।’ কাজী নজরুল ইসলামের সেই অমর পংক্তি নকল করে আজকের রিজওয়ানকে এভাবেই তুলে ধরা যেতে পারে। কখনো ফাঁকি দিয়ে বল ছুটে যাচ্ছে সীমানার দিকে, কখনো লাফিয়ে উঠেও পাওয়া যায় না বলের নাগাল, কখনো ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছেন, কখনো হাসিমুখে প্রতিপক্ষকে সাব্বাশি দিচ্ছেন। আবার কখনো ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে তাদেরই পুড়িয়ে দিচ্ছেন। অতঃপর যখন সাজঘরে ফিরলেন, তখনো হাসিমুখেই ক্যামেরায় বারবার ধরা পড়লেন। অবশ্য আজ তার হাসারই দিন, ৫১ বলে ৭১ রানের ইনিংসটা যে অমলিন।