পাকিস্তান-ভারত মহারণ। গা ছমছমে অধ্যায়। সীমান্তের সঙ্ঘাত ক্রিকেটের মাঠে। লড়াইটা সম্মান, ইতিহাস, ঐতিহ্যের; লড়াইটা মতবাদ, মতভেদ আর বিশ্বাসের বৈপরীত্যের। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলে না, চোখে চোখ রাঙায় তারা। মাঠের বাহিরে যদিও ভিন্ন কথা, ব্যাট-বলেই যত ঔদ্ধত্য।
পুরো ক্রিকেট বিশ্ব যায় এক হয়ে, একই সুতায় গেঁথে। সবাই চেয়ে থাকে একই দিকে, একই আবেগে, একটাই উদ্দেশ্যে। মহারণের লোম দাঁড়ানো, দাঁতে দাঁত চাপানো শিহরণ পেতে। কারণ, শুধুই খেলার জন্য খেলা নয়, শির উঁচু রাখতে চাই বিজয়। দেশ আর ঐতিহ্য যেখানে আছে মিশে, ক্রিকেটটা যেখানে আবেগে, অনুভবে। ফলে খুব সাধারণ একটা ম্যাচও যেন অঘোষিত ফাইনালের মতো।
কতটা আবেগ মিশে আছে তাতে, ১৯ বছর বয়সী নাসিম শাহ তার উপমা হতে পারে৷ হাঁটতেই পারছেন না ঠিকমতো, চলছেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, তবুও কিনা বল ছুড়ছেন ১৪০ কিলোমিটার গতিতে! প্রতিটি বল করে বসে যাচ্ছেন, কখনো শুয়ে পড়ছেন, ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। কিন্তু দেশকে জেতাবেন বলে তবুও লড়ে যাচ্ছেন। জয় আসুক, না আসুক; যে আত্মবিশ্বাস দেখিয়ে দিলেন এই তরুণ, পেতেই পারেন একটা স্যালুট।
এবার খেলায় ফিরি। খেলাটা যদি হতো স্ক্রিপ্টরূপে, তবে হয়তো ‘যাদের হার্ট দুর্বল তারা খেলা থেকে দূরে থাকি!’ লেখা থাকত ম্যাচ শুরুর আগে। টানটান উত্তেজনা, পয়সা উসুল ১৬ আনা। শেষ ছক্কার আগ পর্যন্ত যেন ভাগ্য দুই নৌকাতেই রেখেছিল পা। কার নৌকা ভিড়বে জয়ের বন্দরে, বার বার প্রশ্ন উঠে উঠছিল জেগে। এক কথায় দমবন্ধ অস্থিরতা।
রোববার বেদনার রঙ নীল নয়, সবুজের আড়ালে নীলেই এঁকেছে বিজয়। জয়ের নায়ক হার্দিক পান্ডিয়া, ফলে ভুল হয়নি আনার ধারণা। সেদিন লিখেছিলাম এখানে, রোহিত-কোহলিকে ছাপিয়ে, পান্ডিয়াই নায়ক হতে পারেন এশিয়া কাপে। হলোও তাই, বল ৩ উইকেটের পাশাপাশি, কাঁপতে থাকা ভারতীয় বাহিনীর জয়ের নায়ক তিনি৷ দলের দুঃসময়ে ব্যাট হাতে তার ১৭ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটাই জয় ছিনিয়ে এনেছে। মাত্র তো শুরু, পান্ডিয়ার আগুনে রূপ এবার দেখা যাবে।
একটা বিষয়ে তবে অবাক হয়েছি বটে। পাকিস্তানের ফিল্ডিং হঠাৎ এতো বদলে গেল কী করে? হাসি পেলেও সত্যি বলছি, “একটা সময় নিজেরে সান্ত্বনা দিতাম। বলতাম ‘ব্যাপার না, আমাদের থেকেও বাজে ফিল্ডিং করে অন্তত এমন একটা দল আছে।’ অতঃপর আজ পাকিস্তানের ফিল্ডিং দেখে মনে হলো নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার শেষ অবলম্বনটাও হারিয়ে ফেললাম!”
অন্যের চিন্তা বাদ দিয়ে, এবার ফিরি নিজ অবস্থানে। আজ দিন পরে আগামীকালই তো তারা মাঠে নামবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দেখি সাকিব বাহিনী কী করতে পারে। পরের ধাপে যেতে হলে, একটা জয় যে অন্ততপক্ষে চাইই চাই৷ ওই জয়টা প্রথম ম্যাচেই আসবে কিনা, সেই জন্য যে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।