মঙ্গলবার, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ঢাকায় গণপরিবহণে ‘ভাড়া সন্ত্রাস’

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২
  • ৮৪ বার পঠিত

তেলের দামের কারণে ঢাকার গণপরিবহণে ১৬.২৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে দূরত্বভেদে দ্বিগুণেরও বেশি আদায় করা হচ্ছে। বেশি ভাড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। যাত্রীদের অভিযোগ, গণপরিবহণে ‘ভাড়া সন্ত্রাস’ চলছে। ন্যায্য ভাড়া দিতে চাইলে হুমকি দিয়ে ভাড়া আদায় করা হয়। কখনো কখনো বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

এদিকে মালিক সমিতি গত বুধবার ওয়েবিল প্রথা বন্ধের ঘোষণা দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। স্থানে স্থানে চেকিং করা হচ্ছে। আর এ সুবাদে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। পাশাপাশি স্টপেজ বাদেও খোলা থাকছে বাসের দরজা। চলছে যাত্রী ওঠানামা। সিট হিসাব করেই বাড়তি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ প্রায় প্রতিটি বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। ভাড়ার তালিকাও সুবিধাজনক স্থানে না টানিয়ে চালকের সামনে টানিয়ে রাখা হচ্ছে। এদিকে নতুন ভাড়া নির্ধারণের পর গ্যাসচালিত গাড়িগুলো এখন দেখা যাচ্ছে না। এসব গাড়িও তেলের গাড়ির মতোই বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।

ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, বর্ধিত ভাড়া সারা দেশে কার্যকর হয়েছে। শুধু ঢাকা মহানগরীতে একটু সমস্যা আছে। বর্ধিত ভাড়া কার্যকর ও ওয়েবিল চেক বন্ধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা রাখি শিগগিরই একটা শৃঙ্খলায় আসবে। অন্য সময়ের চেয়ে এবার নৈরাজ্য কম বলে দাবি করেন তিনি।

আর যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সরকার চাইলে পরিবহণ নৈরাজ্য থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে পারে। দেশ ডিজিটালাইজেশন হলেও পরিবহণ সেক্টরটি এখনো এনালগ পদ্ধতিতে চলছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাড়া বৃদ্ধি ও আদায়ের ব্যবস্থা করা হলে নৈরাজ্য থাকত না। তিনি বলেন, বিআরটিএ দুয়েকটি অভিযান করছে। কিন্তু অবস্থার কেনো পরিবর্তন নেই। তিনি বলেন, আমরা মনে করি দেশে ২০ শতাংশ গণপরিবহণ গ্যাসে চলে। আর মালিক সমিতির দাবি ৫ থেকে ৭ শতাংশ গাড়ি গ্যাসে চলে। যদি ৫ শতাংশও গ্যাসে চালানো হয়, তবে সেই গাড়িগুলো কোথায়? মূলত সেই গাড়িগুলোও তেলে চালিত গাড়ির মতোই ভাড়া আদায় করছে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়কারী গণপরিবহণের রুট পারমিট বাতিলেরও ঘোষণা দেনে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তবে রোববার বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, তেলের দাম বাড়ানোর পর ৭ আগস্ট বিআরটিএ মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে গণপরিবহণের ভাড়া বর্ধিত করে। দূরপাল্লার বাস ভাড়া ২২ দশমিক ২২ শতাংশ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাস ভাড়া ১৬ দশমিক ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ হয় মিনিবাসে ৮টাকা, বাসে ১০ টাকা। এতে মহানগরীতে মিনিবাসে প্রতি কিলোমিটারে আগের ভাড়া ২ টাকা ০৫ পয়সার স্থলে বর্ধিত করে ২ টাকা ৪০ পয়সা, বাসে ২ টাকা ১৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে।

গত শনি ও রোববার নগরীর বিভিন্ন রুটে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নতুন ভাড়ার পরিবর্তে বাসগুলো অনেক বেশি আদায় করছে। প্রতি মাইলে ভাড়া আদায় করা হয়েছে তিন থেকে পাঁচ টাকা। নতুন তালিকা ধরে ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়নি। শনিবার খিলক্ষেত থেকে বসুমতি পরিবহণের বাসে কালসী মোড়ে নামেন আমান উল্লাহ। সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে তাকে ভাড়া গুনতে হয় ৩০ টাকা। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া আসে ১৩ টাকা ২০ পয়সা। আদায়ের হিসাবে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। শুধু বসুমতিই নয়, এ রুটে চলাচলকারী প্রজাপতি ও পরিস্থানসহ অন্য পরিবহণগুলো একই হারে ভাড়া নিচ্ছে।

মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কুড়িল চৌরাস্তার দূরত্ব সাড়ে ৭ কিলোমিটার। রোববার রাজধানী পরিবহণের বাসে এ দূরত্বে ভাড়া আদায় করা হয় ৩০ টাকা। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া আসে ১৮ টাকা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, ২০ টাকা ভাড়া দিতে চাইলাম, নেয়নি। ৩০ টাকা না দিলে নামিয়ে দিতে চায়। পরে বাধ্য হয়েই বাড়তি ভাড়া দিয়েছি। তিনি জানান, অছিম, নূরে মক্কাসহ এ রুটে চলাচলরত অন্য পরিবহণগুলো এরকম ভাড়া আদায় করছে। এখানেও প্রতি কিলোমিটারে গড়ে ভাড়া আদায় হচ্ছে ৪ টাকা করে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সড়কে প্রকাশ্যে এমন ‘ভাড়া সন্ত্রাস’ দেখার কেউ নেই। মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড় থেকে কলাবাগান পর্যন্ত দূরত্ব ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার। এ দূরত্বে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১২ টাকা ৪৮ পয়সা। দিশারী, বাহন, ট্রান্স সিলভা, সাভার পরিবহণ, মৌমিতা পরিবহণে এ দূরত্বে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা।

অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩ টাকা ৮৫ পয়সা করে। মালিবাগ মোড় থেকে মধ্য বাড্ডার দূরত্ব ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এ দূরত্বে ভিক্টর, রাইদাসহ বিভিন্ন পরিবহণে ভাড়া আদায় করা হয় ১৫ টাকা। অথচ এ দূরত্বে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১০ টাকা ৫৬ পয়সা। অর্থাৎ এ দূরত্বে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীদের কাছ থেকে ৩ টাকা ৪০ পয়সা হিসাবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। রামপুরা ব্রিজ থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারের দূরত্ব ৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার। এ দূরত্বে যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে ২০ টাকা। অথচ সরকার নির্ধারিত ভাড়া আসে সাড়ে ১৫ টাকা ৮৪ পয়সা। এ দূরত্বে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৩ টাকার বেশি।

এদিকে প্রতিটি বাস-মিনিবাসে ভাড়ার চার্ট টানানোর কথা থাকলেও অনেক বাসেই তা দেখা যায়নি। আবার যেসব বাসে তা দেখা গেছে, সেখানেও রয়েছে ফাঁকি। মিনিবাসগুলোতে টানানো হয়েছে বাসের ভাড়ার চার্ট। সূত্রমতে, বাস ও মিনিবাসের ভাড়ার মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। মিনিবাসে যেখানে নিম্নতম ৮ টাকা, সেখানে বাসের ১০টাকা। আর কিলোমিটারে ভাড়া মিনিবাসে যেখানে ২ টাকা ৪০ পয়সা সেখানে বাসের ভাড়া ২টাকা ৫০ পয়সা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com