অন্য ভাষায় :
শনিবার, ১২:১১ অপরাহ্ন, ১৮ মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

শুটকি মৌসুম শুরু, দুবলার উদ্দেশে রওনা জেলেদের

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২
  • ৬৭ বার পঠিত

শুটকি মৌসুমের শুরুতে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মধ্যেও জীবন-জীবিকার তাগিদে সাগর পাড়ের চরাঞ্চালে পৌঁছাতে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। আজ শনিবার ভোররাত থেকে দুবলা চরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন অনেক জেলে।

বনবিভাগ জানায়, ১ নভেম্বর থেকে শুটকি আহরণ মৌসুমে বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষা সুন্দরবনের দুবলার চারটি চরে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ১০ হাজার জেলে অবস্থান করবেন। সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করে সুন্দরবনের চরে নিয়ে এসে শুটকি তৈরি করবেন তারা। তাই শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় উপকূলের জেলে-মহাজনেরা। সাগরে যেতে যে যার মতো প্রস্তুত করছেন জাল, দড়ি, নৌকা-ট্রলার। কেউ কেউ গড়েছেন নতুন ট্রলার, আবার কেউ পুরাতনটিকে মেরামত করে নিয়েছেন। সাগরে যাওয়ার শেষ প্রস্তুতি নিয়ে তৈরি তারা।

অনেক জেলেই আবার চড়া সুদে টাকা নিচ্ছেন। কেউবা টাকা গ্রহণে এনজিও, বিভিন্ন ব্যাংক ও সমিতি থেকে ঋণ করছেন। ঋণ, সুদের বোঝার সঙ্গে এমন দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই ৫ মাসের এক অনিশ্চিত জীবন শুরু করতে চলছে এসব জেলের প্রস্তুতি।
বনবিভাগের পাস নিয়েই তারা রওনা হয়েছেন সাগর পাড়ের দুবলার চরে। সাগরে এখন আর দস্যুদের উৎপাত না থাকলেও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি মাথায় নিয়েই দুবলায় যাত্রা শুরু করবেন হাজার হাজার জেলে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন অভ্যন্তরে কমপক্ষে ১৫টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে এই দুবলা জেলেপল্লী। এ বছরও প্রায় ১০ হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী জড়ো হবে বঙ্গোপসাগর উপকূল পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলাসহ চারটি চরে। ৫ মাসব্যাপী চলবে এ শুটকি আহরণ মৌসুম। দুবলা জেলে পল্লীর জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুটকি তৈরির জন্য প্রতি বছর অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করে থাকে। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বেহুন্দীসহ বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে মাছ শিকার করে তা বাছাই করে জাত ওয়ারী মাছগুলো শুটকি করে থাকে। জেলে পল্লীতে জেলেদের ঘর তৈরি ও জ্বালানি ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত রাজস্ব আদায় করে থাকে সুন্দরবন বন বিভাগের দুবলা টহল ফাঁড়ি।

বনবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী চরের উদ্দেশে যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া সকল জেলে তাদের ট্রলারে করে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী। আর এ সকল প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগেরহাটসহ উপকূলের কয়েক জেলার জেলে-মহাজনেরা।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনে এখন আর দস্যুতার ভয় নেই। তাই অনেকটা স্বস্তি নিয়েই সাগরে যান জেলেরা। তবে বনবিভাগ থেকে এখনো সব পাস পারমিট পাওয়া যায়নি। শুটকি মৌসুমকে ঘিরে এবারও উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় এক হাজার বহরদারের অধীনে প্রায় ৯-১০ হাজার জেলে সমবেত হবেন দুবলার চরে। ট্রলার নিয়ে গভীর সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুটকি করবেন তারা। বনবিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে আজ থেকে তারা সাগরে যেতে শুরু করবেন।’

সমুদ্রগামী জেলে সমিতির সভাপতি মল্লিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিকল্প কোনো কাজের সুযোগ না থাকায় ধার-দেনা করে হলেও শুটকি আহরণের এই অনিশ্চিত যাত্রায় ছুটতে হয় জেলেদের। শুটকি থেকে বড় অঙ্কের রাজস্ব পায় সরকার। তবে সব থেকে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন চরে মহাজনদের কাছে মাছ বিক্রিতে আমরা সঠিক মূল্য পাই না।’

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘এ বছরও চরে জেলেদের থাকা ও শুটকি সংরক্ষণের জন্য এক হাজার ৩০টি ঘর, ৬৩টি ডিপো এবং ৯৬টি দোকান স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। গত শুটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে বনবিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল তিন কোটি ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ টাকা। এবারও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তার চেয়েও বেশি রাজস্ব আদায় সম্ভব।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com