অন্য ভাষায় :
শনিবার, ০৬:৪১ অপরাহ্ন, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

মহাসচিবের পদ হারাচ্ছেন ফখরুল!

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪
  • ১০ বার পঠিত

একাদশ সংসদ নির্বাচন এবং দ্বাদশে বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুটো নির্বাচনে তার নেতৃত্বের সফলতা কী- বিএনপির তৃণমূল থেকে এমন প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। বিদেশ থেকে এসে তিনি এখন বাংলাদেশে। চিকিৎসকদের ভাষ্য, তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে রাজপথের কর্মসূচিগুলোতে ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত। এ ছাড়া স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া অন্যের সহযোগিতা ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। দলে এখন এই নেতারও কোনো ভূমিকা নেই। নব্বই-ঊর্ধ্ব জমির উদ্দিন সরকার সব সময় বৈঠকে থাকেন না। বার্ধক্যজনিত কারণে এখন তিনি অনেকটা নিষ্ক্রিয়। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও আন্দোলনের সময় দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ মামলার কারণে ভারতে অবস্থান করছেন। তবে তিনি অনলাইনে বৈঠকগুলোতে যুক্ত থাকছেন।
শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যর্থতায় ঘরে-বাইরে অশান্তিতে বিএনপি। তৃণমূলের বড় শক্তিও ভেঙে পড়ছে। রাজপথের আন্দোলনে দলটির যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল- কেউ ভূমিকা রাখতে পারেনি। মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যারা মাঠের আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন, তাদের কাছ থেকে পরিকল্পনা আসেনি। দেওয়া হয়নি ভবিষ্যতের রূপরেখা। সভা-সমাবেশ থেকে এসেছে শুধু অনুকরণ, এসেছে ভিত্তিহীন হুংকার। দ্বাদশে মাঠপর্যায়ের নেতাদের এক মঞ্চের আন্দোলনের যে বিষয়টি বড় চাওয়া ছিল, তা হাইকমান্ড করতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, দলের ভেতরে অজানা গুপ্তচরের বাধায় তা বাস্তবায়ন হয়নি। তৃণমূলের মূল শক্তিকে বাদ দিয়ে আন্দোলনে বামদের যুক্ত করায় ডানরা আসেনি। ডানরা ছিল স্বরূপে উল্টো অবস্থানে। আন্দোলনের শুরুতে ১৫ ছাত্র সংগঠনের নতুন জোট ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য’ গঠন করা হয়, তাতে ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ ডান ছাত্রসংগঠনের অনেককেই যুক্ত করা হয়নি বামদের চাপে। এরপর গণতন্ত্র মঞ্চসহ আরও বামদের নিয়ে আন্দোলনের চূড়ান্ত যাত্রা শুরু হলে জামায়াতের ভূমিকাও কালো মেঘে ঢেকে যায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সরকারের দেওয়া গুপ্তচররা বামদের ছায়ায় ডান-বামের এক মঞ্চের আন্দোলন ঠেকাতে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ২০ দলকে শক্তিশালী না করে একাদশে ড. কামালের মঞ্চে উঠে পরাজয় আর দ্বাদশে গণতন্ত্র মঞ্চে ওঠার মূল নায়ক হিসেবে ফখরুলই বড় ভূমিকা পালন করেছেন। এ অবস্থায় দলটির বড় অংশ থেকে দাবি উঠেছে, মহাসচিবসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতে নেতৃত্বের পরিবর্তন না এলে দলটির ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। তাই বিএনপির গঠনতন্ত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে নেতৃত্বের পরিবর্তন হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন দলের কোনো কোনো নেতা। এমন পরিস্থিতিতে পুরোনোদের জন্য সম্মানজনক পথ তৈরি করে ছাত্রদল-যুবদল করা মাঠের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করার বিষয়ে হাইকমান্ডে আলোচনা চলছে। তৃণমূল ও মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের মহাসচিব ছাত্রজীবন থেকেই করে এসেছেন বাম রাজনীতি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়ে এসেছেন ঐক্য-শান্তি-প্রগতি নিয়ে বাম রাজনীতির স্লোগান। সেই ফখরুল অজানা কারণে গায়েবি আশীর্বাদে হুট করেই হয়ে যান বিএনপির নীতিনির্ধারক। বিএনপির আদর্শ সৃষ্টিকর্তার ওপর পূর্ণ বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন। জনগণের কল্যাণে সরকারের কাছে যৌক্তিক দাবি তুলে ধরে এবং সেই দাবির বাস্তবায়নে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনে বিএনপি যে অনেকটাই ব্যর্থ, তা এখন স্পষ্ট। দলের মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তা বাস্তবায়নে কী ভূমিকা পালন করেছেন, সে প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠেছে। নানা কারণে দলটি কার্যত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবে মির্জা ফখরুলের মার্জিত কথাবার্তা তাকে জনগণের একটি অংশের কাছে অনন্য গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের কাছেও তিনি পছন্দের মানুষ। এটি ব্যক্তি ফখরুলের জন্য গৌরব হলেও দলের জন্য হুমকি বলেও মনে করা হচ্ছে। বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার অভিযোগ, ফখরুলের শান্তি-প্রগতির বাম রাজনীতির আদর্শের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী আদর্শের অনেক কিছুই মিলছে না। নেতাকর্মীরা ভরসা করতে পারছেন না তার ওপর। তাদের অভিযোগ, ২০১৩-১৪ এর আন্দোলন, বিডিআর বিদ্রোহ থেকে ব্যাংক লুট, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কিশোর আন্দোলন, খালেদা জিয়ার বন্দী ও সাজা এবং মুক্তির আন্দোলন, সর্বশেষ ২৮ অক্টোবরের আগে-পরে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে নীরব ছিলেন ফখরুল! ২০১৩ সালে বেগম খালেদা জিয়া দেশ অচল আন্দোলনের নির্দেশ দিলেও মহাসচিবের পরামর্শে পিছু হটতে বাধ্য হয় বলেও দলের একাংশের অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চে কাউন্সিল করে বিএনপি। ওই বছরের আগস্টে ১৭ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ঘোষণা করে দলটি। স্থায়ী কমিটিতে পদ রয়েছে ১৯টি। তখন থেকেই দুটি পদ এখনো শূন্য রয়েছে। এরপর এম কে আনোয়ার, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও মওদুদ আহমদ মারা গেলে ছয়টি পদ শূন্য হয়। সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করায় শূন্যপদ দাঁড়ায় সাতটিতে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২২ জুন সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এখন পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। বর্তমানে স্থায়ী কমিটিতে রয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের হাইকমান্ডের অন্যতম এক নেতা বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং অসুস্থ নেতাদের জন্য সম্মানজনক পথ তৈরি করে নতুন নেতৃত্বের জন্য আলোচনা হচ্ছে ভেতরে-বাইরে। আন্দোলনকে সক্রিয় করতে তাদের বাদ দিলেও স্থায়ী কমিটির সমমানের একটি পদ তৈরি করা হতে পারে। দলের গঠনতন্ত্রেও এই পদের সুযোগ সৃষ্টি করা হতে পারে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সূত্রে মহাসচিবের আলোচনায় প্রধান দুজনের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ভারতে অবস্থান করা সালাহউদ্দিন আহমেদ ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দ্বিতীয় সারিতে আলোচনায় রয়েছেন মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (অব.), সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবেদিন ফারুক। এ ছাড়া অন্য আরেকটি সূত্র বলছে, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদকেও নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ হিসেবে দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ (অব.), বরকতউল্লা বুলু, জয়নুল আবেদিন ফারুক, আসাদুজ্জামান রিপন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল কবির রিজভী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ডা. এজেডএম জাহিদের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। নারী সদস্যদের মধ্যে রুমিন ফারহানা, শামা ওবায়েদ ও নিপুণ রায় চৌধুরী- এই তিনজনের যেকোনো একজন স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। বিএনপির আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক চাপ এবং নেতাকর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত বিএনপির মূল নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে পারেন জিয়া পরিবারের সদস্যরা। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে, তারেক রহমান বিএনপির নির্বাহী দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন। তবে বিএনপির নির্বাহী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেও দলের সঙ্গে জিয়া পরিবারের সম্পর্ক থাকবে। আর এই সম্পর্কটা এতটাই মজবুত থাকবে যে তাদের কথাই হবে দলের শেষ কথা। সে ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়াকে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং তারেক রহমানকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মনে করেন, জিয়া পরিবারের বাইরে বিএনপির অস্তিত্ব নেই। ফলে দলের নেতৃত্ব থেকে তাদের কোনোভাবেই বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com