অন্য ভাষায় :
শনিবার, ০১:৫০ অপরাহ্ন, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

প্রাণিসম্পদের গরুর মাংস ২০ জনকে দিতেই ৭০ কেজি উধাও

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪
  • ৮ বার পঠিত

রমজান উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে গরুর মাংস, মুরগি, দুধ ও ডিম বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রতি গাড়িতে ২০০ লিটার দুধ, ৪ হাজার পিস ডিম, ১০০ কেজি গরুর মাংস, ১০ কেজি খাসির মাংস থাকার কথা থাকলেও হিসেব নিয়ে নয় ছয় তথ্য দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ দীর্ঘ লাইন থাকার পরেও মাত্র ২৫ কেজি গরুর মাংস বিক্রি করেই বলা হচ্ছে মাংস শেষ।

সরজমিনে এ অভিযোগের সত্যতা মিলেছে রাজধানীর রামপুরা এলাকায় অবস্থান করা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা, গাড়ি আসলে ক্রেতারা লাইনে দাঁড়ান। সব কিছু গুছিয়ে ১০টা ২০ মিনিটে পণ্য বিক্রি শুরু হয়। নারী ও পুরুষ দুটি লাইনে সর্বচ্চ চল্লিশ জন ক্রেতা ছিলেন। এদের মধ্যে দুই সারিতে দাঁড়ানো সামনের ২০ জনকে পণ্য দেওয়ার পরেই ঘোষণা দেওয়া হয় গরুর মাংস শেষ। প্রতি একজন ১ কেজি করে মাংস নিলেও বিশ কেজি মাংস বিক্রি হওয়ার কথা, অথচ বিক্রয় কর্মীরা জানান ৭০ কেজি মাংস শেষ। ঘড়ির কাটায় তখন সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট। ডিম, দুধ, মুরগীর মাংস থাকলেও নেই গরুর মাংস। রোদের মধ্যে, রোজা রেখে দীর্ঘ সময় লাইনে অবস্থান করা বাকি ক্রেতরা এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা মাংসের হিসাব জানতে চাইলে গাড়িতে অবস্থানরত বিক্রয়কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে চড়াও হয়ে ওঠেন। মূহুর্তেই সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতা সোহাগ আমাদের সময়কে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি সকাল ১০টার আগে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার সামনে ১০ থেকে ১২ জন পুরুষ ছিলেন। আমার পাশের লাইনে ১০ জন নারী ক্রেতা ছিলেন। গাড়ি সাজিয়ে সাড়ে দশটায় বিক্রি শুরু হয়। ২০ মিনিট যেতেই বলে গরুর মাংস শেষ।’

এ সময় আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে বিক্রয়কর্মীর কাছে জানতে চওয়া হয়, কত কেজি গরুর মাংস নিয়ে বিক্রি শুরু হয়েছে? প্রথমে এর জবাব দিতে চায়নি বিক্রয়কর্মীরা। পরে কয়েক দফা হিসেব চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে শুনে আসেন’।’

এক পর্যায়ে সবাই মিলে জানতে চাইলে তারা জবাব দেন যে, ৭০ কেজি মাংস নিয়ে বিক্রি শুরু হয়েছে। লাইনে দাঁড়ানো সবাই জানান, সর্বচ্চ ২৫ জনকে মাংস দিয়েছে, তাহলে বাকি মাংস গেলো কোথায়?

পরে উপস্থিত সকলে বিক্রয়কর্মীদের কাছে বিক্রির হিসেব দেখতে চাইলে আরও চড়াও হয়ে ওঠেন তারা।

৭০ কেজি মাংস নিয়ে এসেছেন, ২০ জনকে দিয়েছেন বাকি মাংস কোথায়- গাড়িতে অবস্থান করা হিসেব রক্ষককর্মীর কাছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি খেয়ে ফেলেছি।’

এ সময় আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে হিসেব দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন দেখানো যাবে না। আপনরা প্রাণিসম্পদে গিয়ে যোগাযোগ করেন।’

জানা গেছে, ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯০০ টাকা, ড্রেসড (চামড়া ছাড়া) ব্রয়লার প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও ডিম প্রতি ডজন ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী), খামারবাড়ী (ফার্মগেট), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গনি রোড), সেগুন বাগিচা (কাঁচা বাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালসী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), বসিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (সেকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), আরামবাগ (মতিঝিল), কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর ১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়া), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার), কাকরাইল এলাকায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এসব পণ্য বিক্রি করছে।

এছাড়া মিরপুর শাহ আলি বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর, কাজি আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার) স্থায়ী বাজারে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতি গাড়িতে থাকবে ২০০ লিটার দুধ, ডিম ৪ হাজার পিস, গরুর মাংস ১০০ কেজি, খাসির মাংস ১০ কেজি। এছাড়া রাজধানীর ৮টি জায়গায় মাছ বিক্রি করা হবে। প্রতি গাড়িতে ৩০০ কেজি করে মাছ থাকবে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রাণিজাত পণ্যগুলো বিক্রয়ের জন্য সুসজ্জিত পিকআপ কুলভ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি বিক্রয় কেন্দ্রে সকাল নয়টার মধ্যে প্রাণিজাত পণ্য নিয়ে কুলভ্যানগুলো পৌঁছে যাবে এবং সকাল ১০টা থেকে বিক্রি শুরু হয়।

কার্যক্রমটি তদারকি ও মনিটরিং করার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সার্বক্ষণিক মাঠে থাকার কথা রয়েছে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন এবং দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে জানা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com