অন্য ভাষায় :
শুক্রবার, ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, ১০ মে ২০২৪, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :

নবজাতকের স্নান নিয়ে ভুল ধারণা ও কুসংস্কার

ডা. অমৃত লাল হালদার
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৫৮ বার পঠিত

‘ওর বয়স কত? স্নান করিয়েছেন?’- শরীর অপরিচ্ছন্ন দেখে প্রশ্ন করলাম। ‘কী বলেন স্যার!’ যেমন আকাশ থেকে পড়লেন। ‘মাত্র সাতদিন বয়স। এখনো তো নাভিই পড়ে নাই’ বলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করলেন।

হ্যাঁ, শিশুদের স্নান বা গোসল নিয়ে আমাদের দেশে প্রচলিত ভুল ধারণা ও কুসংস্কারগুলো এমনই। চলুন, এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

নাভি পড়ার আগে স্নান নয়

আসলে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। স্বাভাবিক ও সঠিক ওজনের একটি সুস্থ শিশুকে (ওজন ২.৫ থেকে ৪ কেজি) জন্মের তিন দিন (৭২ ঘণ্টা) পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই স্নান করানো উচিত। নাভি না পড়লেও করানো যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, নাভি যেন ভেজা না থাকে। সুতি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিন নাভী অঞ্চল। তবে কম ওজনের অসুস্থ, দুর্বল শিশুর অনেক সময় দেহের তাপমাত্রা বেশি কমে যেতে পারে। বিধায় আরও কিছু সময় দেরি করা যেতে পারে। তা না হলে স্বাভাবিকভাবে একটি নবজাতক শিশুকে পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত করতে তিন দিনের বেশি দেরি করার কোনো দরকার নেই। বরং সেটাই বেশি জরুরি।

ঠাণ্ডা লেগে যাবে যে!

নিয়মিত ফোটানো হালকা গরম পানিতে স্নান করালে শিশুর ঠাণ্ডা লাগার তেমন কোনো সুযোগ নেই। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় স্নান না করালেই বরং শিশু অস্বস্তি বোধ করে থাকে, বারবার ঘেমে যায়। এই ঘাম বসে গিয়ে ঠাণ্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা থাকলে চর্মরোগ বা ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে যাওয়া মোটেও অস্বাভাবিক নয়। আরও অনেক কিছুই এক্ষেত্রে হতে পারে। তাই যে কোনো আবহাওয়ায় ছোট-বড় সব শিশুকে প্রতিদিন হালকা গরম পানিতে স্নান করানো দরকার। শীতের দিন হোক কিংবা বৃষ্টির দিন, মেঘলা দিন বা আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকলে একান্তই গোসল করাতে মন না চাইলে হালকা গরম পানিতে আরামদায়ক সুতি কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিন। স্নানের সময় ও পরপরই ফ্যান বন্ধ রাখুন। দ্রুত শুকনো কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে জামা-কাপড় পরিয়ে দিন। এতে ঠাণ্ডা লাগার আশঙ্কা থাকবে না। মাথা ও চুলে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকটাও লক্ষ রাখুন।

অ্যান্টিসেপটিকের ব্যবহার

ছোট বা বড় যে কারও ক্ষেত্রেই স্নানের পানিতে সবসময় ডেটল, স্যাভলন, সেনিটাইজার বা অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ মিশিয়ে তা ব্যবহার করা উচিত নয়। অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ বা সাবান ত্বকের উপকারী জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস করে ফেলে। ফলে ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাহত হয়। শুধু তা-ই নয়, ক্ষতিকর জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়া এগুলো বেশ কড়া রাসায়নিক দ্রব্য, যা ত্বকের জন্য অবশ্যই ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমনিতেই নবজাতক শিশুরা যেহেতু বাইরের ধুলা-ময়লার সংস্পর্শে তেমন আসে না, তাই রোজ সাবান ব্যবহারেরও দরকার নেই। সপ্তাহে একদিন বা দুদিন সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এর বেশি নয়। আমাদের সোনামনিরা ভালো ও সুস্থ থাকুক- এ প্রত্যাশা রইল।

লেখক : শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

সহযোগী অধ্যাপক, শিশু ও নবজাতক বিভাগ

বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২ (মহিলা ও শিশু হাসপাতাল), সেগুনবাগিচা, ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com