অন্য ভাষায় :
রবিবার, ০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, ১৯ মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ক্যাম্পাসে খেলনা বিক্রি করেই সংসার ও সন্তানদের পড়ান সাবিনা

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩
  • ২৯ বার পঠিত

হাজার কষ্টের মধ্যেও পরিবারের হাল ধরেন। স্বামী থেকেও যেন না থাকার মতো। তিনি হাল না ধরলে হয়তো থেমে যেত তার সন্তানদের পড়াশোনা। অভাব অনটনে ভেঙে না পরে উত্তরণের জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। অভাবের গণ্ডি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য একাই লড়ে যাচ্ছেন তিনি। যিনি খেলনা বিক্রি করে পরিবারের খরচসহ পড়াশোনা করান ছেলে-মেয়েকে।

বলছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) খেলনা বিক্রেতা সাবিনার কথা। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর মৌলভী বুধপাড়ায়। স্বামী-সন্তান দিয়ে চার সদস্যের পরিবার তার।

স্বপ্ন ছিল ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করানোর। কিন্তু নিয়তি তার সহায় হয়নি। স্বামী রিকশা চালালেও পরিবারের কোনো খরচ বহন করেন না। দুইবেলা খাবার জোগাড় করতেও পারতো না সাবিনা। বাধ্য হয়েই ক্যাম্পাসে খেলনা বিক্রি শুরু করেন। আগে শুধু বাদাম বিক্রি করলেও ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তার এই অসহায়ত্ব দেখে ওজন মাপার যন্ত্রসহ কিনে দেন দোকানের বেশ কিছু মালামাল।

এছাড়াও তার বাড়ির টিনের চালাটাও হয়ে গেছে ফুটা। যখন বৃষ্টি হয় টিনের চাল দিয়ে পানি পরে। বৃষ্টি শুরু হলে গামলা, ডিশ পেতে বসে থাকতে হয় তাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাবিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে রাস্তার পাশে সাজিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন ধরনের খেলনা। এছাড়াও সামনে সাজানো রয়েছে বাদাম, ছোলাসহ কয়েক প্রকার খাবারের কৌটা। পাশেই রাখা ওজন মাপার যন্ত্র। ওজন মাপার জন্য তিনি নির্ধারিত কোনো টাকা নেন না। যে যা দেয় তাতেই হয়ে যায় তার।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে টিউবওয়েল নাই। অনেকে আশ্বাস দিলেও কেউ সাহায্য করেনি। ওজন মাপার যন্ত্র কিনে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মামারা। আর খেলনাগুলো পাঁচ হাজার টাকা ধার করে তুলেছি।

কেমন চলে তার দোকান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যে কয়দিন এসেছি আল্লাহ রহমতে বিক্রি হয়েছে। এভাবেই কোনো রকমে দিন চলে যাচ্ছে সন্তানদের নিয়ে। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি আমার সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যতদিন সুস্থ রাখবেন আমি যেন এভাবে সৎ পথেই কাজ করে খেতে পারি।

তিনি আরও বলেন, এখন প্রায় রাতে বৃষ্টি হচ্ছে। যতক্ষণ বৃষ্টি হয় টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে। তাই ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। বৃষ্টি শুরু হলে গামলা, ডিশ পেতে বসে থাকতে হয়।

সাবিনার বিষয় সত্যতা যাচাই করতে কথা হয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী পারভেজ আহমেদ জয়ের সঙ্গে তিনি বলেন, সাবিনাকে প্রথমে দেখতাম বাদাম আর বিস্কিট নিয়ে বসতে। তখন ২ থেকে ৩শ টাকার মতো মালামাল নিয়ে বসে থাকতেন। এটা চোখে পড়লে আমি আর আমার ভাই রেজোয়ান ইসলাম মিলে সহায়তা করার চিন্তা করি এবং তাকে বলি আপনার জন্য কি করলে আপনি খুশি হবেন? তখন তিনি তার দোকানকে বড় করার কথা বলেন। পরে মহিলার পরিবারের খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তিনি আসলেই নিতান্তই গরিব।

তাকে সাহায্যের বিষয়ে কথা হয় ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রেজোয়ান ইসলামের সঙ্গে তিনি বলেন, তার আর্থিক অবস্থা ভালো না। তার স্বামী রিকশা চালায় ও নেশা করে। পরে মহিলার পরিবারের বিষয়টি জানার পর ক্যাম্পাসে টাকা কালেকশন করলাম দুইদিন। অনেকে পারসোনালি হেল্প করেছে টাকা দিয়ে। টাকা তুলে দোকানের জন্য মোটামুটি যা লাগে কিনে দেওয়া হলো তিনি যেভাবে চেয়েছিলেন। এ সময় তার বাচ্চাদের পড়াশোনার আনুষঙ্গিক কিছু বই খাতা ও একটি মোবাইল কিনে দেই।

এ বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পিন্টুর সঙ্গে তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডে আমি সবসময় চেষ্টা করি গরিব মানুষদের সহযোগিতা করার। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবেও আমি সহযোগিতা করি। নলকূপের বিষয়গুলো এখন সরাসরি সিটি কর্পোরেশন দেখে। তাই আমরা কিছু করতে পারি না। আমরা আগেও চেষ্টা করেছি সবার সহযোগিতা করার। এখনো সেই কাজ করে যাচ্ছি। অসচ্ছল কেউ থেকে থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা অবশ্যই সাহায্য করবো তাকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com