অন্য ভাষায় :
সোমবার, ০৬:১৪ পূর্বাহ্ন, ২০ মে ২০২৪, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

আশ্রয়কেন্দ্রেও টেকা দায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২
  • ৮৮ বার পঠিত

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ভিটেমাটি ছেড়ে আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন দেশের কয়েক লাখ মানুষ। কিন্তু এসব আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আরও মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নেই। অনেকেই না খেয়ে আছেন। কোনো কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের এতটাই গাদাগাদি যে শ্বাস ফেলার জায়গাটুকুও নেই।

প্রায় ১৫টি জেলার মানুষ বন্যাকবলিত হলেও সরকারের বরাদ্দ একেবারেই কম। গতকাল সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের একাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মানুষজন ত্রাণসামগ্রীর জন্য পথের দ্বারে দাঁড়িয়ে আছেন। যে কোনো ধরনের গাড়ি দেখলেই তারা ত্রাণের আশায় দৌড়ে যাচ্ছেন। সরকার কিংবা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে যতটুকু ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম।

ত্রাণকর্মীরা বলছেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তিলধারণের জায়গা নেই; শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষে-পশুতে একাকার। খাওয়ার পানি নেই, খাবার নেই। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত ভিটেমাটি ছেড়ে মানুষজন এসব আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছেন। অসুস্থ মানুষ শুয়ে আছেন খোলা আকাশের নিচে। চিকিৎসাসেবা তো দূরের কথা, এক বেলা খাবার নিয়েও দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে তাদের।

সিলেট জেলা প্রশাসনের বরাত দিয়ে দৈনিক আমাদের সময়ের সিলেট ব্যুরো জানায়, সিটি করপোরেশন, ৫ পৌরসভা ও ১৩ উপজেলায় ৪৯৭ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে আছে ৩১ হাজার গবাদিপশুও। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নগরীর দুর্গকুমার পাঠশালায় আশ্রয় নিয়েছেন ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম। কয়েক দিন হলো সেখানে আছেন তিনি। বৃহস্পতিবার কিছু ত্রাণকর্মী এসে রান্না করা খাবার দিয়ে যান। এর পর আর কোনো সহায়তা তিনি পাননি। শহীদুল বলেন, ‘এখানে আসার পর একদিন খাবার পেয়েছিলাম। আর কিছু পাইনি।’

সিলেটের অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রের বানভাসিরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তারা খুবই সামান্য পরিমাণে ত্রাণ পেয়েছেন। এ ছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিধিরা কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, তেলিখাল এলাকার ফায়ার সার্ভিস ভবনটি এখন বন্যাকবলিত কয়েক শতাধিক মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল। সেখানে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছে না ত্রাণসামগ্রী। অনেকেই না খেয়ে আছেন। আশপাশের সব নলকূপ ডুবে যাওয়ার কারণে বিশুদ্ধ পানিও পাচ্ছেন না তারা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত ওই আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। কোমর পর্যন্ত ভেজা কাপড় পরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ছোট-বড় অনেকেই। অনেক নারী সন্তানকে কোনোরকম নিজের ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছেন, আর তাকিয়ে আছেন কখন একটু শুকনো খাবার কিংবা ত্রাণসামগ্রী হাতে আসবে। গত রবিবার রাত থেকে কিছু খাননি অনেকেই। কারও কাছ থেকে কোনো খাদ্যসহায়তাও পাননি এসব বন্যাপীড়িত মানুষ। মায়ের কোলে থাকা ছোট ছোট শিশু খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে।

কান্নাকণ্ঠে একজন জানান, তিনিও ওই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। তার গরু আছে পাঁচটি। দুটি বাছুরও ছিল, কিন্তু পানিতে ভেসে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রের সামনেই রাস্তায় তাঁবু টাঙিয়ে রাখা হয়েছে গরুগুলো। আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা মানুষের গবাদিপশু এখানে রাখা হচ্ছে। গত রবিবার দুপুরে একটু চিড়া খেয়েছিলেন। একজন এসে ওই চিড়া আর সামান্য গুড় দিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা এখন শেষ। খাওয়ার জন্য আর কিছুই নেই তাদের কাছে।

চোখের সামনে ঘর ভেঙে বাছুর আর ঘরের ধান সব ভেসে গেছে জানিয়ে আমিরা বেগম বলেন, টিনের বেড়ার ঘরটি ভেঙে গেছে। সেখানে ৮ মণ ধান ছিল। সেটাও পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ঘরের ভিটার মাটিও আর নেই।

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কিছু কিছু খাদ্যসহায়তা গেলেও পরিমাণে ছিল অল্প। কেউ কেউ আবার শুকনা খাবার নিয়ে গেলেও নৌকায় করে সেগুলো ভেতরের কোনো বন্যাদুর্গত গ্রামে নিয়ে যাচ্ছেন।

গতকাল বেলা ১১টার পর থেকে ভোলাগঞ্জের টুকের বাজার এলাকা এবং কোম্পানীগঞ্জের খাগাইল, ছোট বর্নি, বর্নি, পূর্ব ও পশ্চিম বর্নি, তেলিখাল ও থানাবাজার-সংলগ্ন এলাকায় শত শত মানুষকে সড়কের পাশে ত্রাণের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো কাজ নেই এদের। বেশির ভাগ মানুষের হাতের টাকাও ফুরিয়ে গেছে। বর্তমানে সেখানে আরও প্রায় ৪৫০ জন বন্যাদুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শহরের প্রতিটি পাকা বাড়িই একেকটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। পাঁচ দিন ধরে সুনামগঞ্জ শহরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোমবাতি, খাদ্য ও নিরাপদ পানির সংকটে পড়েছে সুনামগঞ্জবাসী। শুকনো খড় পানিতে ডুবে যাওয়ায় মানুষের পাশাপাশি গোখাদ্য সংকটও তীব্র হয়েছে। দুদিন ধরে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি কমছে, তবে খুব ধীর গতিতে।

সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাশেম জানিয়েছেন, বন্যাকবলিতদের মাঝে ৫০ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি ও চার লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। অফিস থেকে মোবাইল ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে লোকজনকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘৬৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ উঁচু বাসাবাড়িতে এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের সঙ্গে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ কাজ করছে। ৪৫০ টন চাল, ৮০ লাখ টাকা ও ১০ হাজার বস্তা শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ শহরে প্রতিদিন ৪০ হাজার মানুষকে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিতদের সহায়তায় সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com