অন্য ভাষায় :
মঙ্গলবার, ০১:২৪ অপরাহ্ন, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

আজ কুসিক নির্বাচন: ইসির ‘এসিড টেস্ট’

খোন্দক‍ার কাওছার হোসেন
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২
  • ৮২ বার পঠিত
আজ বুধবার ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আর এ নির্বাচনকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন ইসির জন্য ‘এসিড টেস্ট’ হিসেবে দেখছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। দায়িত্ব নেয়ার পর ইসির অধীনে প্রথম এ নির্বাচন ঘিরে সারা দেশের চোখ এখন কুমিল্লার দিকে। নির্বাচন সুষ্টু ও নিরপেক্ষ করতে ইসি বদ্ধ পরিকর বলে ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন সিইসি। কুসিক ভোট সুষ্ঠু করতে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট, কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নির্বাচনকে সুষ্টু ও নিরপেক্ষ করে ভোটারদের আস্থা অর্জনে চেষ্টায় ত্রæটি রাখছেনা ইসি।
এদিকে কুসিক নির্বাচন ঘিরে নির্বাচনী বিধি ভাঙার দায়ে এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কুমিল্লা ত্যাগ করতে বাধ্য করতে না পারায় ইসির নমনীয়তার বিষয়ে কমিশনের অসহায়ত্বের সমালোচনা করেছেন সাবেক কয়েকজন নির্বাচন কমিশনার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি, সুজনসহ নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে কুসিক নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হলে আউয়ালের ইসির সক্ষমতা প্রকাশ ঘটবে বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বর্তমান ইসির প্রথম নির্বাচন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ভোট যদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে কমিশনের ওপর জাতির আস্থা তৈরি হবে। এর আগের অন্তত ২টি ইসির কর্মকাণ্ডে ভোটাররা যে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতায় ভুগছিলেন তা অনেকাংশে দুর হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, কাজী হাবিবুল আউয়ালের ইসি তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সফল প্রয়োগ করতে প্রথমেই ব্যর্থ হয়েছে। এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিষয়ে ইসির সৎসাহসের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কুমিল্লা থেকে এমপি বাহারকে সরিয়ে আনতে তাদের তার বিরুদ্ধে মামলা করে আরপিও অনুযায়ী সাজা দেবার মত সক্ষমতা প্রকাশের দৃষ্ঠান্ত স্থাপনের সুযোগ ছিল, তবে এটা না করায় দেশবাসির উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।  বাস্তবে কতটুকু নিরপেক্ষ অবস্থান ও সাহসীকতা এ নির্বাচন কমিশন নিতে পারছে তা নিয়ে জনগণ সন্দেহ প্রকাশ করেছে। এর ফলে কিছুটা ইসির কিছুটা অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের বিষয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ সিটি নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয়, অংশগ্রহণ মূলক হয়, সত্যিকার অর্থে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়া যদি জনগণ ভোট দেবার সুযোগ পায়, তাহলে অনেকটা আস্থা ফিরে আসবে জনগণের। তবে তার মানে এই নয় একটা নির্বাচন সুষ্টু হলে বাকি সব নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বা এটা খারাপ হলে বাকিগুলো সুষ্ঠু হবে না।
এদিকে কুসিক নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, শুধু কুমিল্লা নয়, ইসির কাছে সব নির্বাচনই চ্যালেঞ্জিং। আমরা চেষ্টা করছি সব নির্বাচন সুষ্টু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে। কুমিল্লায় এখনো পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনী আবহ বা পরিবেশ বিরাজ করছে। সব নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে। তার জন্য নির্বাচন কমিশন, ভোট কর্মী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাই প্রস্তুত রয়েছে। এ নির্বাচন আপনাদের কাছে এসিড টেস্ট কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব নির্বাচনই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, চ্যালেঞ্জিং। সুতরাং কুসিক নির্বাচনসহ সব ভোট সুষ্ঠু করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। তিনি জানান, এবারই প্রথম প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে, তাদেরকে কঠোর হাতে বিশৃঙ্খলা দমন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে কোন ধরনের গণ্ডোগোল হলে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতায় আনার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া প্রয়োজনে ভোট বন্ধ করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ-প্রতিটি নির্বাচনই ইসির কাছে সমান গুরুত্বপূণ। কমিশন নিয়মিত সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছে, যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব না হয়। বিএনপি না থাকায় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আহসান হাবিব খান বলেন, দলীয়ভাবে না থাকলেও বিএনপির নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সব নির্বাচনেই লড়ছেন, কুসিকেও মেয়র পদে লড়ে যাচ্ছেন বিএনপির সাবেক এক মেয়র। এছাড়া আরো কয়েকজন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। সে হিসেবে বলা চলে নির্বাচন অংশ গ্রহণমূলক হচ্ছে।
এদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো শাহনেওয়াজ  বলেছেন, একটা নির্বাচন দিয়ে কোন কমিশনের আস্থা বা আস্থাহীনতা এমন প্রমান করা যায় না। তবে এখনো পর্যন্ত নতুন সিইসি আউয়াল কমিশন যেসব কাজ করে যাচ্ছে তা প্রশংসার যোগ্য। যদিও কুসিককে এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকে তারা এলাকা ছাড়ার নোটিশ দিলেও তাকে তা মনতে বাধ্য না করতে পারা ইসির জন্য কিছুটা দুর্বলতা বলা চলে । তবে এই এম পির ওপর ইসি নজরদারি করছে এবং এমপি বাহার তার পর থেকে আর কোন প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে না বলেও জেনেছি। এরকম দু একটা ঘটনা ছাড়া কুমিল্লা নির্বাচন সুষ্টু হবে বলে আশা করছি। তা ছাড়া এবারই তারা প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষনের আওতায় এনেছে, এটা ভালো ও প্রশংসার মত উদ্যোগ। আমি মনে করি বর্তমান ইসি এ নির্বাচনটি স্ষ্টুু করতে সমর্থ হবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম  বলেন, শুনছি নির্বাচন কমিশনের ‘ব্যাপক’ প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা সব কেন্দ্রে সিসিটিভি বসাচ্ছে। তবে এত সংখ্যক সিটিটিভি বসিয়ে সেটার মনিটরিংসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনাটা সহজ নয়, বেশ কঠিন বিষয়। তাছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা কতটা দক্ষ সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। বিজিবি ও আইন শৃঙ্খলা মোতায়েন প্রসঙ্গে সাবেক এই কমিশনার বলেন, আগেভাগে বিজিবি মোতায়েন হলেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে এটা বিশ্বাস করা যাবে না যতক্ষণ নাকি সুষ্ঠুভাবে ভোট শেষ হচ্ছে, তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com