সোমবার, ০৫:১৮ পূর্বাহ্ন, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ৬ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে গৌরনদীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জহির উদ্দিন স্বপনের পক্ষ থেকে কম্বল বন্টন আবারও রাজনীতির লাইমলাইটে খালেদা জিয়া জাতীয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে পুতুলকে সরাতে দুদকের চিঠি পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু ১৫ বছর পর প্রথমবার জামিন পেলেন ২৫০ সাবেক বিডিআর সদস্য এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর এসকে সুরের বাসায় দুদকের অভিযান, ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে স্বস্তির প্রহর গুনছেন ফিলিস্তিনিরা

সাফারি পার্কে জননিরাপত্তা

মকবুলা পারভীন
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৯৫ বার পঠিত

খোলা জায়গার হিংস্র প্রাণী মানুষের বন্ধু নয়। বাঘ-সিংহ-ভাল্লুক মানুষকে আক্রমণ করে। শুধু আক্রমণই করে না, ছিঁড়ে কামড়ে মানুষের মাংস খায়। সেই অরক্ষিত জায়গায় দর্শণার্থীদের খোলা বাসে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ দিয়ে কর্তৃপক্ষ কি তামাশার অপেক্ষা করছে- প্রশ্ন উঠতেই পারে। জানি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে।

আবার বলছি, হিংস্র প্রাণী কখনো মানুষের বন্ধু হতে পারে না। না হলে সুন্দরবনে এত মৌয়াল, মাঝি-মাল্লা, মাছ শিকারি, পোনা শিকারি, পর্যটক বাঘের কবলে পড়ে জান যায়। হিংস্র শিকারিদের কাছে মানুষ বোকা প্রাণী। তার না আছে নখর দন্ত, না আছে প্রতিরোধেয় শক্তি। বিদ্যুৎ গতিতে এসে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া কোনো ব্যাপারই নয়।

চিড়িয়াখানার একটার সুবিধা আছে। সেখানে হিংস্র প্রাণী বন্দী থাকে। পরিদর্শনকারীরা খাঁচাবন্দী বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক-নিজেরা খোলামেলা পরিবেশে ঘুরেফিরে ইত্যাদি দর্শন করে আসে। বেষ্টনী আছে ফলে বেষ্টনীর ওপারে কারো যাবার সুযোগ নেই। এই বন্ধন অতিক্রম করে কোনো বোকা মানুষ যদি ভেতরে ঢুকে পড়ে তা হলে দুর্ঘটনা ঘটে যায়। বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ তাদের আক্রমণ করে বসে। আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বেষ্টনীর ভেতরে পাতা কুড়াতে গিয়ে বালক আক্রান্ত হয়ে জীবন দিয়েছে। ভাল্লুকের খাঁচায় তত্ত্বাবধানকারীর মৃত্যু হয়েছে ভাল্লুকের আক্রমণে। সাবধান থাকলে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকার মানুষ বাঘের চিন্তায় অস্থির থাকে। বাঘ মাঝে মাঝে খাদ্যসন্ধানে এলাকাগুলোতে হানা দেয়। তুলে নিয়ে যায় মানুষ ও গবাদিপশু। সুন্দরবন এলাকার বাড়িগুলো সুরক্ষিত নয়। মাটির চাঁই বসিয়ে ঘর। উপরে ছনের চাল। ঘরের পরিসর খুবই ছোট। বাইরের বারান্দা বড় করে করা। মানুষ বারান্দায় শোয় বা বাড়ির খোলা জায়গায়। বাঘ এলে ঘুমের ঘোরে থাকা মানুষ তুলে নিয়ে গেলে অন্যরা টের পায় না। টের পেলেই কী। খানিক হই চই ওঠে। এতে জীবনযাপনের ব্যত্যয় ঘটে না। বাঘ আরো নেয় গবাদিপশু। এগুলো ধারাবাহিকভাবেই চলছে। খালে বিলে মাছ ধরা কিশোর বা মহিলাদের তো ধরে নিচ্ছেই। সুন্দরবনের কাছে বিধবাপল্লী আছে। বিধবাদের স্বামী বনে যায়, গিয়ে চিরতরে হারিয়ে আসে। বাঘের এরিয়ায় গিয়ে বাঘের পাল্লায় পড়ে। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয় না। কারণ বনের বাঘের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করবে কে? নিয়তি হিসেবেই মেনে নেয় সবাই।

সুন্দরবন সম্পদের ভাণ্ডার। কেউ যায় ক্ষুণ্ণিবৃত্তির প্রয়োজনে, কেউ কেউ যায় মহাজনের কর্মী হিসেবে, কেউ কেউ যায় জীবনযাপনের প্রয়োজনে দাদন নিয়ে সেই দাদন শোধ করার প্রয়োজনে। তাদের যেতেই হয়। জীবনের মায়া ত্যাগ করেই যায়। না গেলে পেটের ক্ষুধা মেটে না। তারা কায়িক শ্রম দিয়ে যে মাছ, মধু, গোলপাতা সংগ্রহ করে আনে তা নিয়ে তাদের দিন সচ্ছল কাটে না। তাদের কর্মেরও আর কোনো সযোগ নেই। তাই তারা পারমিট সংগ্রহ করে বনে নামে। নামার আগে শরীর বন্ধ করে বনবিবির পূজা দেয়, পীরের দোয়া নেয়, শেষমেশ সবাই যে বন থেকে ফিরে আসতে পারে তাও নয়। সুন্দরবনের কাহিনী সুবিস্তৃত। প্রতিদিন সেখানে নতুন ঘটনা ঘটে। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত সে কাহিনীর শেষ নেই।

মানুষ খোলা জায়গায় বাঘ, সিংহ, হাতি, জিরাফ, ময়ূর দেখবে এই প্রকল্প নিয়ে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক চালু হয়েছে। বহু মানুষ প্রতিদিন সেখানে ভিড় করে, ছুটির দিনগুলোতে আরো বেশি মানুষের সমাগম হয়। এমনিতেই এবার আষাঢ়-শ্রাবণে নেই বৃষ্টি। তীব্র তাপদাহে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। বেড়ানো আরো বিড়ম্বনাকর। খুব প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়েই গরমে ঘামে অতিষ্ঠ নরগবাসী। তারপর নাকি বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের মিনিবাসগুলোর এসি নষ্ট। বদ্ধ মিনিবাসে দম আটকানো অবস্থা। এই অবস্থায় যাত্রীরা জানালা খুলে ফেলে আর খোলা জানালায় বাইরে হাত বাড়িয়ে মোবাইলে ছবি তোলে। এ অবস্থা সাঙ্ঘাতিক বলা ছাড়া আর কী বলা যায়। খোলা বাঘ, সিংহ বাসে ঝাঁপিয়ে পড়লে অবস্থা কী হবে- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন পর্যন্ত বাঘ-সিংহ বুঝেনি, বাসভরা তাদের খাদ্য মজুদ। বুঝলে খবর আছে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে দেখা যায়, খোলাপ্রান্তরে বাঘ, সিংহ ঘুরে বেড়াচ্ছে, শিকার করছে। খোলা জিপে অনেকে বসে দৃশ্য ধারণ করছে। সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে। সেকেন্ডের মধ্যে কর্মীরা সেখানে হাজির হয়ে উদ্ধারকাজে নেমে পড়ে। বাংলাদেশ কি সেই দেশ? এখানে চাওয়া মাত্র কি সাহায্য আসে? এসি বাসগুলো নষ্ট হয়ে আছে, সেগুলো কি চাওয়া মাত্র ঠিক করা হয়েছে? নষ্ট এসি বাস দিয়ে কেন পরিদর্শকদের সাফারি পার্কে পাঠানো হচ্ছে? সেখানে খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে সিংহ ও বাঘ! এরা কি নিরীহ জীব? কিছুই না। আসলে মানুষের যেন কিছুতেই কিছু যায় আসে না। কোনো ঘটনা ঘটলে কিছুদিন একটু আলোড়ন ওঠে। তদন্ত কমিটি হয়। তারপর সেটা থেমে যায়। কালের অতল গহ্বরে সেটি হারিয়ে যায়। গাছাড়া একটা ভাব জাতিকে পেয়ে বসেছে। কিছু হলে সেটি দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া খুব সহজ।

বিশ্বের কিছু চিড়িয়াখানায় একটা সীমার মধ্যে বাঘ, সিংহ খোলা অবস্থায় রাখা হয়। গুহা ও জঙ্গল বানিয়ে দেয়া হয়। তার সীমার চার দিকে দৈর্ঘ্য প্রস্থে বেশ বড় পানির নালা তৈরি করা হয় যাকে বলে পরিখা। পরিখার ধার দিয়ে ৫০ ফুটের মতো লৌহদণ্ডের বেড়া থাকে। ফলে হিংস্র প্রাণী লাফ দিয়ে পরিখা পার হতে পারে না। দর্শক বাঘ-ভাল্লুক অবলোকন করতে পারে। অনেক উন্নত দেশে হিংস্র প্রাণীদের জন্য খোলা পার্ক আছে। আর সেখানে ঐসব প্রাণীর খোলা জায়গা ঘিরে বৈদ্যুতিক তারের বেড়া থাকে। তাদের কাছে এলে বৈদ্যুতিক তারের শক লাগে বলে প্রাণীরা তা অ্যাভয়েড করে নিজস্ব পরিমণ্ডলে থাকে। দর্শকরা খোলা জায়গায় ঘুরে বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক অবলোকন করে। আসলে মানুষের যেন কী হয়েছে। অন্যের ভালো মন্দ দেখে না। নিজেরটা ঠিক থাকলে সবই ঠিক।

এই যে জনচলাচলের রাস্তায় ফ্লাইওভারের গার্ডার ক্রেনে তুলতে গিয়ে ক্রেন ছিঁড়ে গাড়িতে পড়ে মানুষ হতাহত হলো। ক্রেন ছিঁড়ে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে, ঘটেও। তাই বলে মানুষ এত অসতর্ক থাকবে যে, চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে রাস্তার কাজ করতে অনুমতি দেবে? দরকার ছিল কাজের সময় রাস্তাকে নিরাপদ রাখা, রাস্তা বন্ধ রেখে বিকল্প পথে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা, যা করা হয়নি। জীবন যার ক্ষতি তার। ক্ষতি তার পরিজনের। হাত-পা ছেড়ে দিয়ে কোনো কিছু বিবেচনা না করে কাজ করা বা করার অনুমতি দেয়া কোন মানবিক আইনের মধ্যে পড়ে, যেখানে এটা ঘটাই স্বাভাবিক!

কেন যেন মনে হচ্ছে, সাফারি পার্কেও একটা দুর্ঘটনা ঘটার অপেক্ষাতেই যাত্রীদের অনিরাপদ পরিবহনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ না করুন, কোনো মর্মন্তুদ ঘটনা যেন না ঘটে। তার সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন তো অবশ্যই করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com