অন্য ভাষায় :
বৃহস্পতিবার, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ফেরত আনার বদলে টাকা পাচারের ফুটো বন্ধ করতে হবে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৪ জুন, ২০২২
  • ৬৪ বার পঠিত

পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার চেয়ে টাকা পাচারের ‘ফুটো’ বন্ধ করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাজেটের পর বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, বাজেটের মূল কাঠামো নিয়ে তত আলোচনা হচ্ছে না। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ সব দিক থেকেই অনৈতিক। সানেম এই নীতি সমর্থন করে না। এই প্রস্তাব অবিলম্বে বাদ দিতে হাবে। টাকা ফেরত আনার উদ্যোগের বদলে কিভাবে টাকা পাচার হলো-তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। কোনো ট্যাংকে পানি চোয়ানো বন্ধ করতে হলে তার ফুটো আগে বন্ধ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রেও টাকা পাচারের ফুটোটা বন্ধ করতে হবে সবার আগে। কারণ পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা দুরূহ ব্যাপার।

গতকাল মহাখালীতে ব্র্যাক ইনে আয়োজিত বাজেট বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করা হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, অর্থমন্ত্রী তো বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাইরে থেকে যে অর্থ নিয়ে আসা হবে তাতে মানুষের হক আছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) এই নিয়ে বিরোধিতা কইরেন না। -এ বিষয়ে সানেমের মন্তব্য জানতে চাইলে ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাজেটে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আমরা এর বিরোধিতা করছি এবং এই প্রস্তাব বাতিলের সুপারিশ করছি। আমাদের প্রশ্ন, বাইরে থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই টাকা পাচার বন্ধ করা।

তিনি বলেন, যারা দেশ থেকে অর্থপাচার করেছেন, তারা দেশের আইন অমান্য করে অন্যায় করেছেন। এখন সেই আইন অমান্যকারীদের আবার পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিয়ে আরেকটি অন্যায় কাজ সংঘটিত হবে। এ অন্যায় উৎসাহ দেয়া হলে পাচারকারীরা আরো উৎসাহিত হবেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এত বিপুল অর্থ কিভাবে বিদেশে পাচার হলো সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা না করে উল্টো ন্যূনতম করসুবিধা দিয়ে আইন ভাঙার পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিচ্ছে।

তাকে প্রশ্ন করা হয়, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ১৭টি দেশ এ ধরনের সুযোগ দিয়ে দিয়েছে এবং ইন্দোনেশিয়ার কয়েক বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে- এ বিষয়ে সানেমের কাছে কোনো তথ্য আছে কিনা-এর জবাবে সেলিম রায়হান বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখেছি, ভারতও এ ধরনের একটি সুযোগ দিয়েছিল, কিন্তু তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আর ইন্দোনেশিয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কোন সময়ে এই সুযোগ দেয়া হয়েছিল তা আমাদের দেখতে হবে।

উল্লেখ্য, আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদেশে থাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ এবং নগদ টাকা যথাক্রমে ১৫, ১০ ও ৭ শতাংশ কর দিয়ে রিটার্নে দেখানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই নিয়ে ইতোমধ্যে অর্থনীতিবিদ ও শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠন এফবিসিসিআই সমালোচনা করেছে।

এদিকে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটকে বড় ব্যবসায়ীবান্ধব বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট করে ছাড় দেয়া হয়েছে। এ সুবিধা বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু দুই বছরে করোনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত খুব বেশি সহায়তা পায়নি।

মূল প্রবন্ধে সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬০ শতাংশে ধরে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে তা কিভাবে করা হবে তা বলা হয়নি।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা প্রভাব রাখতে পারে মুদ্রানীতি। অথচ সম্প্রতি রেপোর সুদহার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি আরো বাড়াতে ভূমিকা রাখবে।

ড. সায়েমা হক বলেন, মূল্যস্ফীতির বাস্তবতায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তা কমেছে। এটি সরকারের ঘোষিত নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হবে। কিন্তু এ বছর পেনশন, বৃত্তি ও সুদ বাদে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রকৃত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে জিডিপির এক শতাংশের মতো, যা গত বছরের চেয়েও কম।

সানেমের বাজেট পর্যালোচনায় বলা হয়, মাথাপিছু সামাজিক ভাতা বাড়ানোর দরকার ছিল। ‘আমাদের প্রস্তাব ছিল, ওপেন মার্কেট সেল বা ওএমএস বরাদ্দ বাড়ানোর। কিন্তু বাস্তবে এ বরাদ্দ কমানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, কোভিডকালে বৈষম্য বেড়েছে। বৈষম্য কমাতে তিনি কর কাঠামো সংস্কারের পরামর্শ দেন। যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে, সে হারে কিন্তু কর্মসংস্থান হচ্ছে না। তা হলে ধরে নেয়া যায়, প্রবৃদ্ধির সুফল সবাই সমহারে পাচ্ছে না। আমরা দেখেছি, করপোরেট কর কমানো হয়েছে। কিন্তু তা কতখানি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েই গেছে। তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রণয়নের আহবান জানান।

সানেম ব্যক্তিপর্যায়ে কর আয়সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখে উন্নীত করার পরামর্শ দেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com