অন্য ভাষায় :
শুক্রবার, ১০:২৪ অপরাহ্ন, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

উত্তরাঞ্চলে পানি কমার আশা নেই

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২
  • ৬০ বার পঠিত

দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যাকবলিত সব জেলায় নদ-নদীর পানি বেড়েছে। বেশিরভাগ নদীর পানিই প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। তিস্তার পানি বাড়ছে হু হু করে। ফুলে-ফেঁপে উঠছে যমুনাও। চোখের পলকে প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক এলাকা। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

রংপুর ব্যুরো জানায়, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। এ অঞ্চলের অন্যান্য নদ-নদীরও একই অবস্থা। ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল দুপুরে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টের পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।

নিজস্ব প্রতিবেদক (বগুড়া) ও সারিয়াকান্দি প্রতিনিধি জানান, সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। গতকাল বিকালে যমুনায় ২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭২৬ হেক্টর ফসলি জমিতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান : জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। প্রধান তিনটি নদী- পুনর্ভবা, আত্রাই ও ছোট যমুনার পানি বাড়ছে। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার জানান, বৃষ্টিপাত হলেই পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পর্যবেক্ষণকারী কর্মকর্তা মাহবুব আলম জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দিনাজপুর মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে।

ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি : পদ্মায় কয়েক দিন ধরেই পানি বাড়ছে। গতকাল বিকাল ৫টায় পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৯ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় দুই লাখ এক হাজার ৩৮৬ কিউসেক।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় সেখানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল সকালে শহররক্ষা বাঁধ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে কাজিপুর মেঘাইঘাট পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছিল বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। সদর উপজেলার পাশাপাশি কাজিপুর, চৌহালী, উল্লাপাড়া, বেলকুচি ও শাহজাদপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক (কুড়িগ্রাম) জানান, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। এ পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিক্যাল টিম, ৯টি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম এবং সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। গতকাল বিকালে বালাসীর তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার ৫৯টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। তবে তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচে রয়েছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো যে কোনো সময় বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে। গতকাল বিকালে হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে পানি বেড়ে ৬টি উপজেলার ১১৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পানি উঠেছে বাড়িঘরেও। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম জানান, গতকাল সকালে যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছিল বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। ধলেশ^রী নদীর এলাসিন পয়েন্টের পানিও বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকালে পদ্মার পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, এক সপ্তাহ ধরে অস্বাভাবিকভাবে পদ্মায় পানি বাড়ছে। পানি বাড়ায় নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিমাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পদ্মা, যমুনা, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে হরিরামপুর, শিবালয়, দৌলতপুর, ঘিওর, সাটুরিয়া ও সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অফিসের ডিএম খালেদ মিয়া জানান, পানি বাড়ায় নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথের ফেরি চলাচল।

ভোক্তা অধিদপ্তরের অনুদান

নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা) জানান, দেশের বন্যাকবলিত মানুষের মানবিক সহায়তা হিসেবে গতকাল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার কাছে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। এ সময় অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com