বরগুনার পাথরঘাটায় আসর নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন ফুয়াদকে (৪৫) কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে।
রোববার বিকাল ৪টার দিকে উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের জোমাদ্দার বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা থানার ওসি মোহাম্মদ মেহেদী হাসান।
আহত আবুল হোসেন ফুয়াদ কাকচিড়া ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল হালিম জোমাদ্দারের ছেলে। অভিযুক্ত গোলাম মাওলা কাকচিড়া ইউনিয়নের ইউসুফ জোমাদ্দারের ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা।
ফুয়াদের স্ত্রী শিউলি বেগম জানান, বাড়ি থেকে আসরের নামাজ পড়তে মসজিদের দিকে যায় ফুয়াদ। কিছু দূর গেলেই গোলাম মাওলাসহ বেশ কয়েকজন ফুয়াদকে হত্যার উদ্দেশে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফুয়াদের বোন মর্জিনা জানান, ঘটনা দেখে আমি দৌঁড়ে গিয়ে গোলাম মাওলার পা ধরে আমার ভাইয়ের জীবন ভিক্ষা চাইলে আমাকেও লাথি দিয়ে ফেলে দিয়ে আমাকেও কোপ দিতে আসেন। এ সময় আমি সরে যাই।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার সময় ফুয়াদ জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কাকচিড়ার বিভিন্ন স্থানে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা, বিজয় আসবেই’ এমন স্লোগানের পোস্টার লাগালে সেগুলো শুক্রবার সকালে আমরা ছিঁড়ে ফেলি। এর জেরে আমার ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মাওলা, রুমন, রাশেদ, ওমর, ইউসুফসহ আট থেকে ১০ জন।
কাকচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন জানান, ফুয়াদ বিএনপির সক্রিয় কর্মী হওয়ার কারণে গোলাম মাওলাসহ ছাত্রলীগের সমর্থকদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। এর জেরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফুয়াদের ওপর হামলা করেছে।
তিনি জানান, গোলাম মাওলা ছাত্রলীগের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও কাকচিড়া সাংগঠনিক থানা ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন পহলানের একান্ত সহচর।
পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, প্রকাশ্যে আসতে না পেরে আওয়ামী লীগ গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে। আসরের নামাজ আদায় করতে যাওয়ার পথে ফুয়াদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে। এর এক মাস আগে পাথরঘাটা উপজেলা যুবদল নেতা নাসিরকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। নাসির হত্যাকাণ্ডের আসামিদেরকেও পুলিশ আটক করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়াও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
অভিযুক্ত গোলাম মাওলার ফুফু তাসলিমা বেগম জানান, ফুয়াদ ও গোলাম মাওলার বাবা ইউসুফের সঙ্গে বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য টাকা ও জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ৫ আগষ্টের পর ফুয়াদ জোমাদ্দার বাজারে চায়ের দোকানে গোলাম মাওলা ও তার বাবা ইউসুফকে চড়থাপ্পড় মারছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এর জেরে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক আরিফুল আহসান জানান, ফুয়াদের শরীরে পাঁচটির মতো গুরুতর কোপ রয়েছে। কোপগুলো অনেক গভীর। এছাড়াও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আহত ফুয়াদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পাথরঘাটা থানার ওসি মোহাম্মদ মেহেদী হাসান জানান, ফুয়াদ ও গোলাম মাওলাদের মধ্যে বিদেশে লোক পাঠানোর বিষয়ে টাকা-পয়সা লেনদেন ছিল। হামলাকারীদের আটকের জন্য অভিযান চলছে।