১৯৬৭ সাল আমরা তখন ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে থাকতাম। বাবা একদিন অফিস থেকে এসে মাকে ডেকে বল্লেন, আমার বদলি হয়ে গেছে। মা একটু বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে বল্লেন, আবার বদলি ! তিন বছরও তো শেষ হলো না এরই মধ্যে আবার বদলি ?
বাবা বললেন, কি আর করবো, সরকারী চাকুরী তো !এবার আবার কোন গ্রামে বদলি হল ?বাচ্চাদের ভালো স্কুল আছে তো ! বাবা বল্লেন, এবার আর এই মুলুকে নয়, সাত সমুদ্দুর তের নদীর ওপারে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে !মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।কি বলছো তুমি ?
ঠিকই বলছি গিন্নি, সব গুছগাছ করে নাও ! আগামী মাসেই যেতে হবে।মা এবার মাথায় হাত দিয়ে হতাশ হয়ে বল্লেন, তাহলে তো আর আগের মত যখন তখন ঢাকায় বাবার বাসায় আসতে পারবোনা ! বাবা বললেন, কেন পারবে না ! বছরে অন্তত একবার তো আসতেই পারবে। মায়ের মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাবাকে আকুতি করে বল্লেন, কোন ভাবেই কি বদলিটা ঠেকানো যায়না ! বাবা বল্লেন, আরে না বদলির সব পেপারস সাইন করা হয়ে গেছে। আজ কালের মদ্ধে সেগুলো করাচী চলে যাবে।
মা আর কিছু না বলে মন খারাপ করে রান্না ঘরে চলে গেলেন। বাবার বদলির খবরটা শুনে আমি কিন্তু ভীষন খুশী হয়েছি। মাকে গিয়ে বোঝাতে চেস্টা করলাম , মা মন্দকি ! আমরাতো ফরিদপুর , খুলনা, বরিশাল , ময়মনশিং সব একই রকম শহর রাস্তা ঘাট দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। একটা নতুন দেশ নতুন শহর এ গেলে ক্ষতি কি ? মা কট্ মট্ করে আমার দিতে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বল্লেন, তুই এখান থেকে যাবি নাকি মার খাবি ! আমি সেখান থেকে কোন রকম ছুটে পালিয়ে আসলাম। আমার অন্যান্য ভাইয়েরাও আমার মত দারুন খুশী কারন এই প্রথম বারের মত আমরা প্লেনে চড়বো।
তাও আবার বিশাল বড় প্লেন Boeing 707! এই Boeing 707 এর শুধু গল্পই শুনেছি। মাঝে মাঝে আকাশ থেকে উড়ে যেতে দেখেছি। কিন্তু কখনো কল্পনা করিনি এই বিশাল প্লেনে একদিন চড়বো !
আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। দিন গুনতে লাগলাম আর আকাশে প্লেনের শব্দ শুনতে পেলেই ছুটে গিয়ে হা করে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম , ক’দিন পরতো আমিও ঐ প্লেনের ভিতরে থাকবো। সবার মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাব ! স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সাথে এই নিয়ে গল্প জুড়ে দিতাম।
বন্ধুরা বলতো, তুই কত ভাগ্যবান , আমাদের ভাগ্যে কি কোনদিন প্লেনে চড়া আছে ! শুধু দেখেই যাব। আমি তখন ভাবতাম, সত্যিই তো আমি কত ভাগ্যবান !
চলবে ……………
এ জাতীয় আরো খবর..