বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কৃষি আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে তেমন কোনো উদ্যোগ ও তৎপরতা নেই।’
নয়াপল্টনে আজ মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা সবসময় ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে বলেই জনকল্যাণে কোনো কাজ করে না। এর ফলে তাদের শাসনামলে বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষি খাত সবসময় বঞ্চিত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত থাকে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সবাই সবসময় বলে থাকি, কৃষি আমাদের মেরুদণ্ড। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জিয়াউর রহমান, পরবর্তীকালে খালেদা জিয়া ছাড়া কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার সে কাজগুলোই হাতে নেয়, যেখানে তাদের নিজস্ব মুনাফা হবে, কমিশন পাবে। কৃষিক্ষেত্রে কৃষকদের স্বার্থে তারা এক ধরনের কার্ড নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু তা কৃষকের হাতে পৌঁছে দিতে পারেনি। এমনকি কৃষি উপকরণ মেশিন শুধু আওয়ামী লীগ নেতাদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘চলতি বছরে সুনামগঞ্জ জেলায় বাঁধ নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ ছিল ১২২ কোটি টাকা এবং গত পাঁচ বছরে এ অর্থের পরিমাণ ছিল ৬২১ কোটি টাকা, যা বাঁধ রক্ষায় তেমন কোনো কাজে আসেনি। বরং, এ বরাদ্দকৃত টাকা ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ টাকা হরিলুট করেছে। যে সব বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, তা এতই দুর্বল যে, মাত্র ২৪ ঘণ্টার পানির চাপ সামলাতে পারেনি। প্রতি বছর এভাবে বাঁধ নির্মাণের নামে হাওড় অঞ্চলে সরকারি অর্থ লুটের মহোৎসব চলে। এর ফলে কৃষকেরা হয় সর্বস্বান্ত, অপরদিকে সরকারি দলের লোকজন ও তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা হয় আঙুল ফুলে কলাগাছ।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু দেশের হাওড় অঞ্চলই নয়, এই চিত্র দেশের সার্বিক কৃষি সেক্টরে। বর্তমান অবৈধ সরকারের আমলে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির কারণে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।’
ফখরুল বলেন, ‘সরকার দুর্নীতিরোধ, হাওরের কৃষকদের দুর্দশা লাঘব ও শস্য নিরাপত্তা রক্ষায় জাতীয়তাবাদী কৃষক দল থেকে আটটি সুপারিশ হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করতে হবে। এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া বছর বছর বাঁধ নির্মাণ না করে সিমেন্ট ও বালু দিয়ে তৈরিকৃত ব্লক ফেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনা সুদে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং ঋণগ্রস্ত কৃষকের ঋণের সুদ মওকুফ এবং স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরা পর্যন্ত ঋণের কিস্তি নেওয়া বন্ধ করতে হবে। হাওড় অঞ্চলে শস্য বীমা চালু করতে হবে, হাওড় অঞ্চলের কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য গণমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।