ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশস্থল নিয়ে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। গত কয়েক দিন ধরে এ নিয়ে বিএনপির সাথে মহানগর পুলিশের টানা দেনদরবার চলছে। নয়াপল্টনের বাইরে বিকল্প স্থান হিসেবে বিএনপি রাজধানীর আরামবাগ মোড় ব্যবহারের অনুমতি চাইলেও তাতে সম্মতি দেয়নি পুলিশ। সরকার ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উন্মুক্ত মাঠ ছাড়া কোনো সড়ক ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। বিএনপি বলছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে না তারা। নয়াপল্টনের আশপাশে উপযুক্ত কোনো স্থানে অনুমতি দিলে সমাবেশ করবে তারা।
স্থান নিয়ে এমন অনিশ্চয়তার মধ্যেই বিএনপি সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে দিনে দিনে উত্তেজনাও বাড়ছে। দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেফতার এবং নতুন মামলার কারণে আতঙ্কও তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দূরের জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে অধিকাংশ নেতা-কর্মী ঢাকামুখী হবেন বলে জানা গেছে।
সমাবেশের স্থান নিয়ে কঠোর মনোভাবের মধ্যে গত রোববার বিকল্প স্থানে সমাবেশ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন দলের নেতারা। গতকাল সোমবারও এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেন। তবে সঙ্কটের সুরাহা হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে বিকল্প হিসেবে উন্মুক্ত মাঠ ব্যবহার চাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
বিএনপির একজন নেতা জানান, উন্মুক্ত মাঠ হিসেবে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠ চাওয়া হতে পারে। সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে আলোচনা করছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুমতি পাওয়া গেলে হয়তো ঈদগাহ মাঠ ব্যবহারে অনুমতি চাওয়া হবে। এ সব বিষয়ে গত রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় আলোচনা হয়। সেখানেও কমিটির সদস্যরা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির আলোকে তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন।
জানতে চাইলে ঢাকার সমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এটা সরকার পতনের সমাবেশ নয়। তাহলে কেন সরকারের সমাবেশ স্থান নিয়ে এত ভয়? আমরা বিকল্প উপযুক্ত স্থানেরও কথা বলেছি। কিন্তু তাতেও সরকার সাড়া দিচ্ছে না।’
বিএনপি নেতারা জানান, ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে নেতা-কর্মী জমায়েত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য জেলা থেকে নেতা-কর্মীদের আসার ব্যাপারে বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই। তবে জেলা কমিটি, স্থানীয় সিনিয়র নেতার নেতৃত্বে কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে রাজধানীতে আসছেন। যারা ঢাকায় আসছেন তাদের অধিকাংশ নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্বজনদের বাসায় থাকছেন। গ্রেফতার এড়াতে নেতা-কর্মীরা ঢাকার আবাসিক হোটেলে থাকছেন না।
গত রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিগত নির্বাচনে ঢাকা বিভাগ থেকে যারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মূলত ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে যেন সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতা-কর্মী আসেন, সেই নির্দেশনা দেন তিনি। এর আগে বিকেলে গুলশান চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পেশাজীবীদের এক সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। এই সমাবেশ আমাদের যেকেনো মূল্যে সফল করতে হবে, যেকোনো মূল্যে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিভাগীয় গণসমাবেশে গোটা বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। মানুষ শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে গণসমাবেশ সফল করেছে। সাঁতরিয়ে নদী পার হয়ে, ভেলাতে চড়ে, সাইকেলে চড়ে, ১০০ মাইল সাইকেলে চড়ে এসে চিড়া-মুড়ি-গুড় দিয়ে তিন রাত কাটিয়ে সমাবেশ সফল করেছে। এর আগে দুপুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার দমন-পীড়ন চালালেও ১০ ডিসেম্বরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে বিএনপি। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরে নেতারা কেউ বাসায় থাকতে পারছেন না। সরকার এরকম সন্ত্রাসমূলক আচরণ করে ঢাকায় একটি দুরবস্থা সৃষ্টি করেছে। তবুও কর্মীরা ভীত নয়।
নয়াপল্টনের বাইরে বিকল্প প্রস্তাব সম্পর্কে মির্জা আব্বাস বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর তুরাগ পাড় ছাড়া ঢাকার ভেতরে সন্তোষজনক স্থান দিলে চিন্তা করে দেখব। সকালে শাহজাহানপুরের নিজ বাসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘেরাও করে রাখার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে একটি কর্মিসভা ছিল। পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করে সভা করতে দিলো না।
দুপুরে বেইলি রোডে সমাবেশের সমর্থনে প্রচারপত্র বিলি করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সমাবেশ বানচাল করতে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সরকারের গ্রেফতার, নির্যাতন উপেক্ষা করে গণসমাবেশ সফল করা হবে।
সড়কে সমাবেশের অনুমতি পাবে না বিএনপি : ডিএমপি কমিশনার
নয়াপল্টনে বিএনপি সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে না, সেটি আবারো স্পষ্ট করলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নাকি নয়াপল্টন- এ নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে এ কথা জানালেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নাকি নয়াপল্টন, বিএনপিকে কোথায় সমাবেশ করতে দেয়া হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মাঠ ছাড়া রাস্তাঘাটে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাদে অন্য কোনো স্থানের নাম এখনো প্রস্তাব করেনি বিএনপি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে আমার কোনো কথা হয়নি। আমরা মাঠে অনুমতি দেবো। একজন অফিসিয়াল হয়ে আমি তো রাস্তায় অনুমতি দিতে পারি না। আর রাস্তার মালিক তো আমি না।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিএনপির ধারাবাহিক যে সমাবেশ হচ্ছে, তা শেষ হচ্ছে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে। এই সমাবেশ কোথায় হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরোধ। বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়। ২০ নভেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্র জমা দেয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে।
গত রোববার বিকেলে এ বিষয়ে আলোচনা করতে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারের সাথে দেখা করে। আলোচনা শেষে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ বলেছিলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি নয়াপল্টনে সমাবেশ করব। এ বিষয়ে আজ (গতকাল সোমবার) আলোচনা করতে এসেছিলাম। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। ভেন্যুর বিষয়ে তারা আলোচনা করবেন।