শুক্রবার, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা রাজনীতিবিদ সাদেক হোসেন খোকা এর ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী শ্রদ্ধাঞ্জলি

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২
  • ৯৯ বার পঠিত

শুক্রবার, নভেম্বর ৪, ২০২২, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান, অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সফল মেয়র, সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক সাদেক হোসেন খোকার ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী।

সব পরিচয় ছাপিয়ে সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন খ্যাতিমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। মেয়র থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ঢাকার বিভিন্ন সড়কের নামকরণ করেছিলেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধারা কে কোন দল করে তা কখনও দেখেননি খোকা।

একজন মুক্তিযোদ্ধার কাছে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ই ছিল সবচেয়ে বড়।

১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক অপারেশন পরিচালনা করেন সাদেক হোসেন খোকা।

নিজের লেখা একটি প্রবন্ধে খোকা লিখেছেন, পরিবারের অন্য কাউকে কিছু না জানিয়েই গোপনে মুক্তিযুদ্ধে চলে যান তিনি।

‘‘পরে মেলাঘরের ট্রেনিং ক্যাম্পে ট্রেনিং শেষে ঢাকায় অপারেশনের ফাঁকে গোপনে একবার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাই। কিন্তু তার মা বলে দিয়েছেন, ‘আর যুদ্ধে যেতে পারবে না। কারণ তোমার হাতে কোনো মানুষ খুন হোক তা আমি চাই না।’’

নিজের প্রবন্ধে খোকা লিখেন, ‘‘আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম, মা আমাকে যেতে হবে। আর আমরা তো যুদ্ধই করছি পাকিস্তানি দখলদারদের মেরে ভয় দেখিয়ে এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে। তিনি যখন দেখলেন আমাকে ফেরানো যাবে না তখন বললেন, ‘আমাকে কথা দাও অন্যায়ভাবে ঠাণ্ডা মাথায় কাউকে হত্যা করতে পারবে না।’ মায়ের কথায় রাজি হয়ে আবার ফিরে যাই রণাঙ্গনে।’’

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার দল বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫শে এপ্রিল অভিবক্ত ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকার মেয়র ছিলেন।

বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আশির দশকে বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন খোকা। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন খোকা। ওই সময় নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা হলেও তা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন খোকা। এতে খোকা পুরান ঢাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেন।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) থেকে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকাই নির্বাচিত হন। পরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে প্রায় পাঁচ বছর একক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন। সেসময় ঢাকার রাজপথে রক্ত রঞ্জিত খোকার ছবি এখনও অনেকের চোখেই দৃশ্যমান।

২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। সাদেক হোসেন খোকা পুরান ঢাকার গোপীবাগে তার পৈতৃক বাড়িতে থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

তিনি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি শুধু রাজনীতিতে নন, মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরেই ১৯৭২ সালে ব্রাদার্স ইউনিয়নের দায়িত্ব নিয়ে ক্লাবকে তিন বছরের মধ্যে তৃতীয় থেকে প্রথম বিভাগে উন্নীত করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খোকা ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ও ফরাশগঞ্জ ক্লাবের গভর্নিংবডির চেয়ারম্যান ছিলেন। জনবান্ধব নেতা হিসেবে যথেষ্ট সুনাম ছিল খোকার।

পুরান ঢাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ খোকাকে তারা সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাশে পেতেন। যখনই ডাক পড়েছে, তখনই তিনি ছুটে গেছেন পুরান ঢাকাবাসীর কাছে। এজন্য তিনি পেয়েছেন ঢাকাবাসীর বিপুল সমর্থন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com