গত প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর আগ্রহ, উৎসাহ এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছিলো, তাতে মনে হচ্ছিলো তাদের ঘুম নেই। প্রতিবেশী দেশের নিদ্রাহীনতা ছিলো সহজে দৃষ্ট। ভারতীয় বিশ্লেষকদের অহর্নিশ কথাবার্তায় এমন ধারণাই তৈরি হচ্ছিলো। এই নির্বাচন যখন সাজানো নির্বাচনে রূপান্তরিত হচ্ছিলো সেই সময়ে সারাবিশ্বের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো উদ্বেগ-আশঙ্কা দেখতে পাওয়া গিয়েছিলো। ভোটকেন্দ্রগুলো খোলার পর থেকে আমার জানামতে এমন কোনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নেই- যারা প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। কিছু কিছু গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
এই নির্বাচনের সাংবিধানিক দায়িত্ব ছিলো বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের। তার প্রধান কাজী হাবিবুল আওয়াল নির্বাচনের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন এমন ধারণা দিয়ে একাধিকবার কথাবার্তা বলেছেন। ২৭ নভেম্বর ২০২৩-এ বলেছিলেন ‘নির্বাচন নিয়ে দেশ সংকটে। গণতন্ত্র বাঁচাতে হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে’।
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩-এ বলেছিলেন ‘নির্বাচন নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে যেমন বাগবিতণ্ডা হচ্ছে, সহিংসতাও হয়েছে।
অথচ এই সিইসি ঘুম নিয়ে আগে কি বলেছিলেন অনেকের তা মনে থাকবে। ১৪ অক্টোবর তিনি বলেছিলেন ‘তফসিল ঘোষণার পর ঘুম অনেকটাই হারাম হয়ে যাবে’ (ডিবিসি, ১৪ অক্টোবর ২০২৩)। সেই সিইসি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলছেন তিনি দিনের বেলা একটানা আট ঘণ্টা জেগে থেকে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। অথচ এই সিইসি ১৪ অক্টোবর দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে তাদের দায়িত্ব কী।
সিএইসি এখন যা-ই বলুন না কেন, তার এই দিবানিদ্রার দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে; প্রথমত কে ভোট দিলো না দিলো সেই বিষয়ে তার আগ্রহ ছিলো না, কেননা ফলাফল ছিলো পূর্ব-নির্ধারিত; দ্বিতীয়ত তিনি তার দায়িত্ব পালনে আগ্রহী ছিলেন না। ৭ই জানুয়ারি কথিত নির্বাচনকে যে ছেলেখেলায় পরিণত করা হয়েছিলো এরচেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে? ফলে এটা মোটেই বিস্ময়কর নয় যে, দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সম্পাদকীয় এই ‘নির্বাচন’কে বলেছে ‘ফোনি’-মেকী নির্বাচন।
[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]