শুক্রবার, ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
স্পিকারের দায়িত্ব পালন করবেন আইন উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার সাথে সংঘর্ষ : জাপার প্রধান কার্যালয়ে আগুন প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের প্রয়োজনবোধ করছে না নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়াই একমাত্র সমাধান : অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘আ’লীগ আমলে ব্যাংক, জ্বালানি, অবকাঠামো ও আইসিটি খাতে বেশি অনিয়ম হয়েছে’ আমাদের নেতা তারেক রহমান একটি সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চান-এম. জহির উদ্দিন স্বপন ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণে খাবেন যেসব খাবার প্রেমে মজেছেন অনন্যা ব্যালট চুরি : রিপাবলিকান সাবেক কংগ্রেস প্রার্থী গ্রেপ্তার

ব্যাংক খাতে টাকার সঙ্কট

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২
  • ৯১ বার পঠিত

ব্যাংকে নগদ আদায় কমে গেছে। বিপরীতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সামাল দিতে গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে তাদের জমানো টাকা উত্তোলন করছেন বেশি। কিন্তু এ অর্থের বেশির ভাগই ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। পাশাপাশি ডলারের সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার কিনছে নগদ টাকায়। সবমিলেই ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার প্রবাহে টান পড়েছে। এ সঙ্কট মেটাতে প্রায় প্রতিদিনই কিছু কিছু ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে। গত রোববার এমন কয়েকটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সর্বোচ্চ সুদ গুনতে হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সঞ্চয় ভাঙার প্রবণতা কমবে না, বরং বেড়ে যাবে। এতে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাবে। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায়ে বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের দুই বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ে বড় ধরনের ছাড় দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, কেউ ঋণ পরিশোধ না করলেও সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে ঋণখেলাপি করা যাবে না। এর ফলে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বেশির ভাগই ঋণ পরিশোধ না করে পার পেয়ে গেছেন। একই সাথে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। এর ফলে ২০২০ ও ২০২১ সালের পুরো প্রায় দুই বছর ব্যাংকে নগদ আদায়ে বড় ধরনের ধস নামে। বিপরীতে রেয়াতি সুদে দুই বছর প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এসব ঋণের বড় একটি অংশ ব্যবসায় ব্যবহার না করে পুরনো ঋণ পরিশোধ করা হয়। এতে প্রকৃত পক্ষে ঋণ আদায় বাড়েনি, বাড়েনি নগদ আদায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে আমানত প্রবাহ যেখানে কমেছে ২৯.১৪ শতাংশ, সেখানে বেসরকারি ঋণ বেড়েছিল ৭৭.৩০ শতাংশ। সাধারণত আমানত বাড়লে ঋণ বাড়ে, কিন্তু আলোচ্য পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, একদিকে আমানত কমে গেছে, বিপরীতে ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। এর প্রভাবে ব্যাপক মুদ্রা (এম২) সরবরাহ কমেছে ২১.৩৪ শতাংশ। অর্থাৎ এখানে ব্যবসায়ীরা নতুন ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধ করেছেন যেমন, তেমনি পুরনো ঋণ প্রকৃত পক্ষে পরিশোধ করেননি।

এদিকে, ব্যবসা-বাণিজ্য যখন ভালো থাকে তখন চলতি আমানত বাড়ে। বিপরীতে মেয়াদি আমানত কমে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে মেয়াদি ও চলতি আমানত দুটোই কমে গেছে। আলোচ্য সময়ে মেয়াদি আমানত কমেছে ৩০.৪১ শতাংশ। কিন্তু চলতি আমানত না বেড়ে বরং কমেছে ২৩.২৬ শতাংশ। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আমানতের এ বিপরীতমুখী আচরণের কারণ হলো, মানুষ মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পড়ে মেয়াদি আমানত তুলে নিচ্ছেন। কিন্তু ওই অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে না এসে বাজারেই ঘুরছে বা মানুষের হাতে রয়েছে। এ কারণে আলোচ্য সময়ে মানুষের হাতে নগদ অর্থ বেড়েছে ৫৪.৭৫ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে মানুষের হাতে নগদ অর্থ ছিল ১৭ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।

এ দিকে গত অর্থবছরের আগস্ট থেকে ব্যাংকিং খাতে ডলার সঙ্কট দেখা দেয়। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংকগুলো ডলার কিনে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে ডলারের সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সাড়ে সাত শ’ কোটি ডলার কিনেছিল। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সাড়ে ৬৭ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়। গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কট চলতে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গতকাল পর্যন্ত (১ জুলাই-১৭ আগস্ট) ৪৭ দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে ১৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে বাজার থেকে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।

আমানত প্রত্যাহারের পাশাপাশি ঋণ আদায় কমে যাওয়া ও নগদ টাকায় ডলার কিনে নেয়ায় ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার প্রবাহে টান পড়েছে। আর এ সঙ্কট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনেক ব্যাংকেই আমানতের জমার তুলনায় আমানত প্রত্যাহার হচ্ছে বেশি হারে। তৃতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তার ব্যাংকে আমানত প্রত্যাহার হচ্ছে বেশি। অপর একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এক দিনে ৩০০ কোটি টাকা প্রত্যাহার হয়েছে তার ব্যাংকে। এখন ব্যাংকের মূল ব্যাংকিংয়ের বাইরে অন্য শাখাগুলোর কর্মকর্তাদের আমানত সংগ্রহ করতে বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আরো কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তাকে তাদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর হাতে উদ্বৃত্ত তারল্য দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা, যেখানে ক্যাশ অর্থ দেখানো হয়েছে মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা। বাকি উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে আটকে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, জুন শেষে সরকারের কাছে ৩ লাখ ২২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড রয়েছে, অর্থাৎ এ পরিমাণ ব্যাংকের অর্থ সরকারের কাছে ঋণ আকারে রয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, তাদের কাছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড রয়েছে। কিন্তু নগদ অর্থের সঙ্কট রয়েছে। আর এ সঙ্কট মেটাতে অনেক ক্ষেত্রেই দৈনন্দিন ব্যয় মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত রোববার একটি ব্যাংক দু’দিনমেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ২৭০ কোটি ৬৪ লাখ টাকার আবেদন করেছিল। বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকটিকে ১৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা ধার দেয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যাংকটিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সুদ গুনতে হবে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে।

অপর দিকে ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় পাঁচটি ব্যাংক ৯ হাজার ৩৮৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকার ঋণ চেয়েছিল, বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়া হয় ৪ হাজার ৬৯২ কোটি ৪৭ লাখ টাকার। অপর দিকে ১৪টি ব্যাংক দু’দিনমেয়াদি বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ৭ হাজার ৪৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৪টি ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী পুরো অর্থঋণ দেয়া হয়। সব মিলে রোববারে ২০টি ব্যাংকের ১৭ হাজার ১০৮ কোটি টাকার চাহিদার বিপরীতে ঋণ দেয়া হয় ১২ হাজার ২৭৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ জন্য সুদ গুনতে হয় সাড়ে ৫ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশ পর্যন্ত। এ থেকেই অনুমেয় হয় ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সঙ্কটের চিত্র।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের তুলনায় আয় কমে গেছে। এ কারণে তাদের সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে। বিপরীতে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ঋণ আদায় হচ্ছে না। সব মিলেই ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পণ্যমূল্য সহনীয় হওয়া ছাড়া ব্যাংকগুলো থেকে আমানত প্রত্যাহারের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এজন্য ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com