অন্য ভাষায় :
রবিবার, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, ১৬ জুন ২০২৪, ২রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

কলকাতায় আজীম হত্যা : যা জানালেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪
  • ৬ বার পঠিত

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার তদন্তে নেমে কলকাতায় পুলিশ দুটি গাড়ি আটক করেছে। এর মধ্যে একটি গাড়িতে খুন হওয়ার আগে আজীমকে দেখা গেছে সিসিটিভি ফুটেজে।

অন্য গাড়িটিতে করে খুনের পরে দুষ্কৃতীকারীরা বেরিয়ে গিয়েছিল বলে পুলিশের সূত্রগুলি জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার জুবেইর ওরফে জিহাদ নামে এক দুষ্কৃতীকে কলকাতায় জেরা করা হয়। এর আগে এখনো তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।

অন্য দিকে কলকাতা থেকে সিআইডির তিনজন তদন্তকারী অফিসার ঢাকায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সাথে বৈঠক করেছেন। তদন্তে যে সব নথি ও তথ্য প্রমাণ সিআইডি যোগাড় করতে পেরেছে, সে সবও নিয়ে এসেছেন তারা।

সিআইডির সূত্রগুলি জানিয়েছে আটক জুবেইর বাংলাদেশের নাগরিক।

ওই সূত্র এটাও নিশ্চিত করেছে, যে সাতজনের নামে এফআইআর হয়েছে, এই জুবেইর ওরফে জিহাদের নামও তার মধ্যে আছে।

জিহাদ ছাড়া অন্য যাদের নাম এফআইআরে রয়েছে তারা হলেন আখতারুজাম্মান, আমানুল্লাহ, সিয়াম, মুস্তাফিজুর, ফয়সাল এবং শিলস্তি রহমান। এদের তিনজনকে ঢাকায় আটক করা হয়েছিল বুধবারই।

আজীমকে হত্যা করার পরে লাশ টুকরো করে কোথায় ফেলে দেয়া হয়েছিল, সে ব্যাপারেই জুবেইর ওরফে জিহাদকে মূলত জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। কিন্তু সেই জায়গাগুলি এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, যে আবাসিক কমপ্লেক্সে খুন হয়েছে সেখানকার সিসিটিভি দেখে তারা নিশ্চিত অভিযুক্তরা বড় বড় ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়েছিলেন। এরা যখন কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেন, তখন ওই ব্যাগগুলি তাদের সাথে ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রের নথি দিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া
ভারতে বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে হলে মালিক এবং ভাড়াটিয়া, আর যে দালালের মাধ্যমে ভাড়া নেয়া হচ্ছে, সব পক্ষের ছবিসহ নথি স্থানীয় থানায় জমা দিতে হয়।

মুহম্মদ আখতারুজ্জামান, আমানুল্লা সৈয়দ এবং সেলেস্তি রহমান ওই ফ্ল্যাটে থাকবেন বলে সেটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল।

মে মাসের ১ তারিখে নিউ টাউন থানায় এই নথি জমা করা হয়।

তার আগেই তারা কলকাতায় চলে এসেছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

তিনজন থাকবেন বলে থানায় জমা দেয়া নথিতে লেখা থাকলেও ফ্ল্যাটটি সল্ট লেক অঞ্চলের এক দালালের মাধ্যমে ভাড়া নিয়েছিলেন মুহম্মদ আখতারুজ্জামানই।

ভাড়া নেয়ার সময়ে নথি হিসেবে তিনি নিউ ইয়র্কের ড্রাইভিং লাইসেন্সের নম্বরও জমা দিয়েছিলেন। রয়েছে তার ছবিও।

পেশা হিসেবে তিনি সেখানে লিখেছেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।

সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন,‘ওই ফ্ল্যাটটি সন্দীপ রায় নামের পশ্চিমবঙ্গের শুল্ক বিভাগের এক অফিসারের।’

হত্যাকারী আখতারুজ্জামানকে চেনেন না বন্ধু গোপাল বিশ্বাস
যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছিল বলে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি জানিয়েছে, সেই ফ্ল্যাটটি মে মাসের গোড়ায় ভাড়া নিয়েছিলেন আজীমের বন্ধু ও ব্যবসার সঙ্গী, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান, সেটাও বলেছেন সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদী।

তবে কলকাতার সিঁথি অঞ্চলের বাসিন্দা, গয়না ব্যবসায়ী আজীমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও আখতারুজ্জামানকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন গোপাল বিশ্বাস।

তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, যে তার সাথে নিহত সংসদ সদস্যের প্রায় আড়াই দশকের ঘনিষ্ঠতা হলেও আখতারুজ্জামান বলে কারো কথা তিনি শোনেননি।

গোপাল বিশ্বাস বলেন,‘আমি আসলে তার ব্যবসা বা রাজনীতির জগতের পরিচিতদের চিনতাম না, এসব ব্যাপারে তার সাথে আমার কথাও হত না।’

বুধবার সকালে বন্ধুর খুন হওয়ার খবর পাওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবেই কারো সাধে কথা বলেননি তিনি, বাড়িতে ছিলেনও না।

বৃহস্পতিবারও তিনি বাড়ি ছেড়ে অন্য কোনো জায়গায় আছেন।

তিনি বলেন,‘আমি যেহেতু আজীমের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ডায়েরি করেছিলাম থানায়, তাই তিনি খুন হওয়ার পরে পুলিশ আমাকে নিউ টাউন থানায় গিয়ে খুনের মামলার ডায়েরি করতে বলেছিল।’

গোপাল বিশ্বাস বলেন, ‘তবে আমি অনলাইনে সেই ডায়েরি করেছি বরাহনগর থানা আর ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে।’

তার দায়ের করা ডায়রির ভিত্তিতেই পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত খুনের মামলা রুজু করেছে।

এর আগে বুধবার গোপাল বিশ্বাস বলছিলেন,‘এবারে তিনি এসে আমাকে বলেছিলেন যে- স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবেন। কোন ডাক্তার ভালো হবে, সেটাও জানতে চেয়েছিলেন, কিন্তু আমার জানাশোনা কোনো স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ নেই, তাই আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম সল্ট লেকের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেন।’

‘আমরা একসাথে সকালের খাবার খেয়েছিলাম। তারপরে এটাও তাকে বলেছিলাম যে- আমার গাড়ি সেদিন নেই, উনি যেন গাড়ির বন্দোবস্ত করে নেন। এরপরে আমি বাড়ির একতলায় অফিসে চলে

‘এরপর আমি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুপুরে বেরনোর সময়ে আমাকে বলে যান যে- তিনি সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবেন। তার খোঁজ না পাওয়ার পরে আমি যখন সিসিটিভি ফুটেজ দেখি, তখন জানতে পারি যে- উনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দুপুর একটা ৪১ মিনিটে,’ বলছিলেন গোপাল বিশ্বাস।

বরাহনগর থানায় যে নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন গোপাল বিশ্বাস সেখানে তিনি লিখেছেন, তার বাড়ির অদূরে বিধান পার্ক এলাকা থেকে ভাড়ার গাড়িটিতে ওঠেন আনোয়ারুল আজীম। তাকে গাড়িতে উঠতে দেখেছেন, এমন একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কথাও পুলিশকে জানিয়েছেন বিশ্বাস।

সন্ধ্যায় বন্ধুর বাড়িতে ফিরে আসার কথা থাকলেও সেখানে ফেরেননি আজীম।

হোয়াটস্অ্যাপে ১৩ মে তিনি মেসেজ পাঠান যে ‘বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছি এবং পৌঁছে ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।’

ডাক্তার দেখাতে বের হয়ে দিল্লিতে?
কলকাতার গোপাল বিশ্বাস বলেন,‘বাংলাদেশে বিএনপির জমানায় আজীম ভারতে থাকত। আমাদের বাড়ি মাঝদিয়ায়। সেখানে সুভাষ আগরওয়ালের বাড়িতে থাকত আনার। আমার সাথে সেখানেই পরিচয়, তারপরে বন্ধুত্ব। সম্পর্কটা এখন পারিবারিক স্তরে চলে গেছে,’ জানালেন গোপাল বিশ্বাস।

সে কারণেই চিকিৎসা করাতে এসে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজীম।

সেদিন দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরে আজীম যে ভাড়াচালিত গাড়িতে উঠেছিলেন সেটির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

এরপর গোপাল বিশ্বাসকে পুলিশ জানিয়েছে, আজীমের সাথে আরেকজন বাংলাদেশী নাগরিককে নিউ টাউন অঞ্চলে ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন ওই চালক।

এরপর ১৫ মে সকালে গোপাল বিশ্বাস আজীমের কাছ থেকে আবারো একটি হোয়াটস্অ্যাপ মেসেজ পান যে- তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং তার সাথে ‘ভিআইপিরা’ আছেন, তাই তাকে যেন ফোন না করা হয়।

এর দু’দিন পরে, ১৭ মে গোপাল বিশ্বাসকে আজীমের মেয়ে ফোন করে জানান যে, তার বাবার সাথে কিছুতেই তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না।

‘ওই খবর জানতে পেরে কলকাতায় ওর যত ঘনিষ্ঠ মানুষ আছেন বলে আমি জানি, সবাইকে বিষয়টা জানাই। তারাও খোঁজ খবর করতে শুরু করেন। কিন্তু কোনোভাবেই আজিমকে ফোনে পাওয়া যায়নি,’ বলছিলেন বিশ্বাস।

পরের দিন, ১৮ মে বরাহনগর থানায় যান তিনি।

বিশ্বাস বলেন,‘সেখানে আমাকে সারাদিন বসিয়ে রাখা হয়। পুলিশ আমার বাড়িতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। সেসব খতিয়ে দেখে আমার নিখোঁজ ডায়েরি নেয়া হয়। তারা ওই ভাড়ার গাড়িটির নম্বরও পেয়ে যায়। চালকের সাথে কথা বলেছে। নিশ্চয়ই পুলিশ খোঁজখবর করছে, আমাকে তো আর সব তথ্য জানাচ্ছে না।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস যে তথ্য পেয়েছিল, সে অনুযায়ী ১৭ মে আজিমের মোবাইল নম্বরটি কিছুক্ষণের জন্য বিহারে অবস্থান করছিল।

আবার এটাও জানতে পেরেছে তারা যে মোবাইল সেট থেকে সিম কার্ডটি আলাদা করে রাখার কারণে সঠিক অবস্থান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এর আগে, ঢাকায় ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘তার দুটি বাংলাদেশী নম্বর আছে আর একটি ভারতের নম্বর। আমরা ভারতীয় পুলিশের সহযোগিতায় তার ভারতীয় নম্বরটি দেখলাম মুজাফফরাবাদ অর্থাৎ বিহারের দিকে।’

ঘটনাচক্রে বিহারে মুজাফফরাবাদ নামের জায়গা নেই। পাকিস্তান শাসিত জম্মু-কাশ্মিরের রাজধানীর নাম মুজাফফরাবাদ, আর প্রায় কাছাকাছি যে নামের জায়গা বিহারে আছে, সেই জায়গার নাম মুজফ্ফরপুর।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com