অন্য ভাষায় :
শনিবার, ০২:২২ অপরাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
রেমিট্যান্স ও প্রবাসীদের দেশে ফেরা নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে : পলক মার্কিন নির্বাচনের আগেই ইসরাইল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে! অর্থনীতিকে পঙ্গু করতেই ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারিতে আপত্তি তুলে নিলো যুক্তরাজ্য আর কত দিন কারফিউ থাকবে! তীব্র ‘তাপ মহামারি’ চলছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে ট্রলার ডুবি : ২ উদ্ধারকারীর লাশ উদ্ধার ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হবে না : ঢাবি ভিসি হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়নি, গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে : র‌্যাব বিক্ষোভ ঠেকাতে পাঞ্জাব-ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি

হজ থেকে কী নিয়ে এলেন?

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২
  • ৯৫ বার পঠিত

হে আল্লাহর মেহমানগণ! আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলিম মিল্লাতের নেতা, মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আ:-এর ডাকে আল্লাহর ঘর তথা বাইতুল্লাহ, ওয়াদিল মুকাদ্দাস বা পবিত্র উপত্যকা মক্কা-মদিনায় বেশ কিছু দিন বেরিয়ে এলেন। আল্লাহর মেহমানদারির অনেক কিছুই সেখানে উপভোগ করেছেন। দ্বীন-দুনিয়ার কল্যাণের অনেক নমুনা দেখে এসেছেন। আরাফাতের বিশাল ময়দানে মানবতার নবী সা: তাঁর শেষ বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার এ কথাগুলো পরবর্তী বা পেছনে পড়ে থাকা লোকদের কাছে পৌঁছে দিও। হতে পারে তারা তোমাদের চেয়ে অধিকতর দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে।’

হে আল্লাহর মেহমানগণ! এখন বলুন, আপনি আপনার পরিবার, আপনার সমাজ, আপনার দেশ ও জাতির জন্য কী পয়গাম বা বার্তা নিয়ে এলেন? যদি নিয়ে এসে থাকেন, তাহলে কোনো প্রকার দ্বিধা-সঙ্কোচ নয়, সব প্রকার জড়তা ছাড়াই আপনার পরিবার, সমাজ ও জাতির সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং হজরত ইবরাহিম আ:-এর মতো সগর্বে ঘোষণা দিন যে, হে আমার পরিবার! হে আমার সমাজ! হে আমার জাতি! তোমরা আজ যা করছ আমি সব কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে একমাত্র সেই প্রভুর দিকে ফিরে যাচ্ছি যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন, যার কোনো শরিক নেই, আসমান-জমিনে একমাত্র তাঁর রাজত্বই চলবে। আমি আরো ঘোষণা করছি, সৃষ্টি যার হুকুম চলবে তাঁর। কারণ হজে তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে আমি আল্লাহর কাছে সেই কথাই বলে এসেছি। আমি বলে এসেছি ‘লাব্বায়িক আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক, লাব্বায়িকা লা-শারিকা লাকা লাব্বায়িক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মূলক, লা-শারিকা লাক’-‘আমি হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই এবং রাজত্ব তোমারই তোমার কোনো শরিক নেই।’

অতএব, হে আমার জাতি! আল্লাহর মেহমানদারির সময়টাতে একবার নয়, দু’বার নয়, শতবার, হাজারবার এই কথা বলে এসেছি। বলে এসেছি রাজত্ব ও হুকুমাত একমাত্র তোমারই চলবে। পুরো ৪০টি দিন সেই ওয়াদাই তো করে এলাম। আর প্রকৃত সত্য তো এটাই যে, তাঁর সৃষ্ট জমিনে অন্যের হুকুমাত তো কখনো চলতে পারে না। অর্থাৎ সৃষ্টি যার, আইনও চলবে তাঁর।

সুতরাং হে আমার পরিবার! হে আমার সমাজ! হে আমার জাতি! আমি নিমকহারামি করতে পারি না। যদি এমনটি করি তবে আমি একই সাথে ওয়াদাভঙ্গকারী মোনাফিক, মিথ্যাবাদী ও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো। বাইতুল্লাহর চার দিকে আমার তাওয়াফের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল এই যে, আমার সব কিছুই তথা আমার জীবনাচরণ এই ঘরকে কেন্দ্র করেই পরিচালিত হবে। আজ থেকে আমার জীবনে পরিবর্তনের একটা সূচনা সৃষ্টি হবে। আমার আরো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল যে, আমি দেশে গিয়ে আমার রাজনীতি, আমার সমাজনীতি ও আমার অর্থনীতি তথা আমার সমাজ ও রাষ্ট্রকে এ ঘরের দিকে ফিরিয়ে আনার আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এ জন্য যদি আমার জান আমার মাল ও আমার পরিবার হুমকির সম্মুখীন হয় তাতে কোনো আপস ও পরোয়া কোনোটিই করব না। যেমনটি করেননি উহুদের ময়দানে শায়িত সাইয়েদুশ শুহাদা বীর আমির হামজাসহ ৭০ জন সাহাবি, যেমন সামান্যতম পিছপা হননি জান্নাতুল বাকিতে শায়িত লক্ষাধিক সাহাবায়ে কেরাম। যেমনটি জীবন-মরণ সঙ্কটেও সামান্যতম হতোদ্যম হননি গারে সওরে আশ্রয় নেয়া সারোয়ারে আলম ও তাঁর সাথী। মক্কার রাজা-বাদশাহ, ধনদৌলত ও সুন্দরী নারীর প্রলোভন যাঁর লোভকে উসকে দিতে পারেনি মক্কার কাফের সরদাররা। নিজ জাতির চরম বিরোধিতার মুখে মদিনায় হিজরত করে হলেও আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করে পৃথিবীবাসীর সামনে তার সুফল তিনি দেখিয়ে গেছেন।

হজরত ইবরাহিম আ: তাঁর পরিবার, তাঁর জাতি ও রাষ্ট্রের শিরক থেকে মুখ ফিরিয়ে বলেছিলেন, ‘ইন্নিওয়াজ জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরধা হানিফাও ওমা আনা মিনাল মুশরিকিন।’ অর্থাৎ নিশ্চয় আমি আমার সেই প্রভুর দিকে ফিরে যাচ্ছি যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। সুতরাং হে আমার জাতি তোমরা যদি তোমাদের ভুল কর্মনীতি থেকে ফিরে না আসো তাহলে আমি তোমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে কাবার মালিক মহান প্রভুর দিকে ফিরে যাচ্ছি, গত ৪০-৪৫ দিন কাবার চারপাশে তাওয়াফ করার সময় বারবার প্রভুর কাছে এই ওয়াদাই করে এসেছি।

হে আমার জাতি! আমি আমার বাস্তবচক্ষে দেখে এসেছি আল্লাহর কয়েকটি আইনের সুফল। এক. চুরির আইন : সেটি সৌদিতে আজো বলবৎ থাকায় কোটি কোটি টাকার মূল্যবান গাড়ি রাস্তায়, মাঠে ময়দানে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। উল্লেøখ্য সৌদিতে কারো বাড়িতে ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক কোনো গ্যারেজ নেই, অথচ কোনো গাড়ির ছোট্ট একটি যন্ত্রাংশও চুরি হয় না।

দুই. কিসাস বা হত্যার আইন : পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে খুনোখুনিতে নিহতের হার সৌদির তুলনায় অনেক বেশি। সৌদিতে এ সংখ্যা খুবই নগণ্য। কারণ সৌদিতে আজো কুরআনের কিসাস আইনটি বলবৎ রয়েছে। তিন. জিনা, ব্যভিচার, নারী অপহরণের ঘটনাও সেখানে কম। কারণ সেখানে আল কুরআন ও হাদিসের আলোকে রজম আইন বলবৎ রয়েছে।

চার. আল কুরআন বলছেÑ ‘নিশ্চয় নামাজ মানুষকে ফাহেশা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে’। নামাজের আজান হওয়ার সাথে সব দোকানপাঠ বন্ধ হয়ে যায়, সবাই নামাজের দিকে চলে যায়। অর্থাৎ সেখানে এখনো নামাজ কায়েম রয়েছে। ফলে রাস্তাঘাটে, বাজার ও মার্কেটে আমাদের দেশের মতো বেলাল্লাপনা নেই, দোকান বা কোনো প্রতিষ্ঠানে আমাদের দেশের মতো কোনো গান-বাজনা বাজছে না। দু-একজন নারী রাস্তাঘাটে পাওয়া গেলেও অত্যন্ত শালীনতার সাথে পথ চলছে, কেউ তাদের উত্ত্যক্ত করছে না। ক্রমাগত আল্লাহর দু-একটি হুকুম বলবৎ থাকায় সেখানে অন্যান্য অপকর্ম থেকে মানুষ পবিত্র থাকে। সুতরাং হে আমার জাতি, আমি সরাসরি কাবাকে সামনে রেখে কাবার মালিকের বরাবর নামাজ পড়ে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে যে, আমি খারাপের সাথে আপস করব না।

হে আমার জাতি! আমি আরো রাতে কান পেতে শুনেছি, এই বুঝি মহাকালের মহান রাষ্ট্রপতি হজরত ওমর ফারুক রা: পিঠে খাদ্য নিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন। অর্ধেকটা পৃথিবীর দোর্দণ্ড প্রতাপশালী বাদশাহ ‘ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও না খেয়ে মরে যাওয়ার ভয়ে সদায় কম্পমান থাকেন। মনের চক্ষু দিয়ে দেখতে পেলাম ওই যে গাছটির নিচে মাথার নিচে ইট দিয়ে নিশ্চিন্তে আরামে ঘুমোচ্ছেন ইসলামী দুনিয়ার সেই শাসক। যেই শাসক মানুষের প্রতি জুলুম করেন না, মানুষের হক মেরে নিজের পেট পুরেন না, মানুষের সব প্রকার অধিকারকে খর্ব করে স্বৈরাচারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন না।

হে আমার জাতি! আল-কুরআন এমনই একটি সমাজ কায়েম করতে চায়। আমি পবিত্র হজ থেকে সেই শিক্ষাই নিয়ে এসেছি। এখানে অন্যদের শাসন চলতে দেয়া মানে নিজেকে তাগুতের হাতে ছেড়ে দেয়া, তাগুতের সাথে আপস করা অথবা পুরোপুরি তাগুতের অনুসরণ করা, পক্ষান্তরে আল্লাহকে ছেড়ে দেয়া, আল্লাহর সাথে অন্যদের শরিক করা। যদি আল্লাহ ছাড়া অন্যদের শাসনব্যবস্থা মেনে নেই, তবে আমার নামাজ, আমার রোজা, আমার জাকাত ও হজ কী কাজে আসবে?

হে আমার জাতি! আমি আবারো ঘোষণা করছি, আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো হুকুম, অন্য কারো পথ ও মত মানি না। আজ থেকে আমি সব পরিহার আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবো। তোমরাও আমার সাথে শরিক হও। হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো, আমি তোমার মেহমানদারিতে যে পয়গাম নিয়ে এসেছিলাম তা আমার জাতির কাছে পৌঁছে দিলাম। যাতে আমার জাতি আমাকে তোমার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে না পারে। আমাকে তুমি কবুল করো।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com