অন্য ভাষায় :
শনিবার, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :

পুরুষের টিপ পরা ছবি – প্রতিবাদের এই ভাষা নিয়ে কেন সমালোচনা?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২
  • ৭৩ বার পঠিত

বাংলাদেশে পুলিশের একজন সদস্য একজন শিক্ষিকার টিপ পরা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার পর কয়েকদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই টিপ পরা ছবি প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এদের মধ্যে নারী ছাড়াও অনেক পুরুষও রয়েছেন। এখন দেখা যাচ্ছে প্রতিবাদস্বরুপ টিপ পরে ছবি দেয়ার কারণে পুরুষেরা সমালোচনার শিকার হচ্ছেন।

এই সমালোচনাকারীদের মধ্যে সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা যেমন রয়েছেন, তেমনি কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু পুলিশের সদস্যরা পর্যন্ত রয়েছেন। এমনকি সমালোচনামূলক স্ট্যাটাস ফেসবুকে শেয়ার করার কারণে পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার পর্যন্ত করা হয়েছে।

টিপ পরা ছবি ফেসবুকে দিয়ে যারা সমালোচনার মুখে পড়েছেন, তাদের একজন অভিনেতা সাজু খাদেম।

তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় একটা লাল টিপ পরে ক্যাপশনে লিখেছিলেন ‘লাল টিপ…লাল সূর্য…’।

এর পর আরো বেশ কয়েকজন অভিনেতাকে দেখা যায় লাল টিপ পরে ফেসবুকে ছবি দিতে।তবে সাজু খাদেমকে এই পোষ্টের কারণে অনেক কটু মন্তব্যের শিকার হতে হয়।

কি বলছেন সাজু খাদেম?
অভিনেতা সাজু খাদেম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ব্যক্তিগত মতামত যে কেউ প্রকাশ করতে পারেন, কিন্তু যদি কারো নাম উল্লেখ করে তাকে আঘাত করে মতামত দেয়া হয় “সেটা অফেন্সিভ, সেটা ক্রাইম”। “আমার দুঃখ লাগে যে তারা অশালীন পরিচয় দিচ্ছেন। এটাতে তাদের কোন লাভ হচ্ছে না, বরং যারা আমাকে অশালীন মন্তব্য করছেন মানুষ তাদের সম্পর্কে জানতে পারছেন”। কি চিন্তা থেকে টিপ পরেই প্রতিবাদ করেছিলেন বা অন্য কোনভাবে প্রতিবাদ জানানোর কথা চিন্তা করেছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাজু খাদেম বলেন, “এত ভেবে চিন্তে তো আর হয়নি। ঐ মুহূর্তে যেটা মনে হয়েছে সেই কাজটাই আমি করেছি। ”তবে এটা নিয়ে যে এতটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে সেটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়নি বাংলাদেশে- বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা মানুষগুলো এতটা ফ্যানাটিক হবে”।

সাজু খাদেমের ঐ পোষ্টটি প্রথমে পাবলিক করা ছিল ফেসবুকে। তিনি জানান এত আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে এটা তিনি এখন শুধু অনলি ফ্রেন্ড অর্থাৎ শুধু তার বন্ধু তালিকায় যারা আছেন তারাই দেখতে পাবেন।

সাইবার বুলিং এর শিকার হলেও এটা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন তিনি বিষয়টা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।

পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার:
এদিকে পুরুষরা যে টিপ পরে প্রতিবাদ জানিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে সেটার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আরেকজন পুলিশ সদস্য। সিলেট থানার পুলিশ সদস্য লিয়াকত আলী পুরুষদের টিপ পরা নিয়ে নিজের ফেসবুক পাতায় একটি পোষ্ট দেন, যেটিকে অশালীন বলে চিহ্নিত করেছেন অনেকে। এ পোস্ট দেয়ার কারণে সোমবার রাতেই মি. আলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন, সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন।

কেন প্রতিবাদকারীরাই সমালোচনার মুখে?
সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ করার পর প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা এই ধরণের আক্রমণাত্মক আচরণের নজির খুব কম।

সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে যেমন প্রতিবাদ হয়েছে তেমনি রবিবার জাতীয় সংসদে কেন টিপ পরা যাবে না এমন প্রশ্ন তুলে টিপ পরার পক্ষে কথা বলেছেন সংসদ সদস্য এবং অভিনেত্রী সুর্বণা মোস্তফা।

অনেক নারীকে দেখা গেছে নিজেদের টিপ পরা ছবি ফেসবুকে পোষ্ট করতে। অনেক পুরুষ টিপ পরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এবং দেখা যাচ্ছে তারা সমালোচনার মুখে পড়ছেন।

প্রত্যাহার হওয়া ওই পুলিশ সদস্যের মত অনেকে যেমন কঠোর ও অশালীন ভাষায় পুরুষদের টিপ পরার সমালোচনা করেছেন। তেমনি কেউ কেউ যুক্তি দিয়েও পুরুষদের প্রতিবাদের এমন ধরণের বিপক্ষে মত দিচ্ছেন।

লেখক ব্রাত্য রাইসু তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, “নারীর সঙ্গে ঐক্য গড়তে পুরুষকে সজ্জায় বা আভরণে নারী” হওয়ার বিপক্ষে তিনি। তিনি লিখেছেন, “পুরুষের টিপ উদ্ভট কিছু একটা, তা কটুক্তি কমানোর বদলে হাস্যরস উৎপাদন করে”।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলছেন, এর ফলে “সমাজের পুরুষতান্ত্রিক চেহারা আবারো প্রকটভাবে দেখা দিল”।

তিনি বলেন “পুরুষতন্ত্রটা খুব টনটনে তো, সেটা যাতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বাধাগ্রস্ত না হয় একই ভাবে সেটা যাতে কোন প্রশ্নের মুখোমুখি না হয় সেটার জন্য পুরষালী দাপুটেপনা সচল আছে। সেটা অনেকের মাথাব্যাথার কারণ। এছাড়া কে কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করলো সেটা সমাজে একটা বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা আছে”।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন “দেখেন এই প্রতিবাদটা যে সবার সমর্থন পেয়েছে বিষয়টা তেমন না। অনেকে বলে ঐ জায়গা তো অমুক মারা গেছে তখন কিছু বলেন নি কেন, অমুক জায়গায় অমুক হয়েছে সেটার প্রতিবাদ করেন নি কেন। এখন বুঝতে হবে প্রতিবাদ করাটা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। যে যেটার বিষয়ে অনুভব করবে সেটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাবে”।

দুই হাজার ষোল সালেও একবার ফেসবুকে প্রায় একই ধরণের একটি প্রতিবাদের সমালোচনা করেছিলেন অনেকে।

সেবার নারায়ণগঞ্জের একজন এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তিনি একটি স্কুলের একজন হিন্দু শিক্ষককে কান ধরিয়ে ওঠবস করিয়েছেন।

ঘটনাটি ভাইরাল হলে অনেকেই প্রতিবাদ করেছিলেন এবং প্রতিবাদস্বরূপ তারা নিজের কান ধরে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ করেছিলেন। সেবারও অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রতিবাদের এহেন ধরণের সমালোচনা করেছিলেন।

টিপ বিতর্কের শুরু যে কারণে
ঢাকার একজন শিক্ষিকা শনিবার থানায় অভিযোগ দিয়ে বলেন, কপালে টিপ পরার কারণে পুলিশের একজন সদস্য তাকে হেনস্তা করেছেন।

লতা সমাদ্দার বিবিসি বাংলাকে রবিবার বলেন, শনিবার সকালে তিনি তার বাসা থেকে কর্মস্থলের দিকে যাচ্ছিলেন। আনন্দ সিনেমা হলের সামনে থেকে পায়ে হেটে যখন তিনি তেজগাঁও কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন, তখন সেজান পয়েন্টের দিকে তিনি শুনতে পান, ‘টিপ পড়ছোস কেন’ বলে একটা গালি।

”আমি ঠিক পেছনে তাকিয়ে দেখি, একজন পুলিশ একটা বাইকের ওপর বসে আছে। আমি তার প্রতিবাদ করলে সে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করে,” তিনি বলছেন।

”একপর্যায়ে সে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আমার শরীরের ওপর চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমি সটকে যাই, কিন্তু তার বাইরের চাপা আমার পায়ে লাগে। আমার পা ইনজ্যুরড (আহত)।”

সেই সময় ওইখানে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের কাছে লতা সমাদ্দার বিস্তারিত খুলে বলেন। তারা বাইকটা শনাক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তারা পারেনি। সেই সময় হতবাক হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি গাড়ির নাম্বারটিও ঠিকভাবে নিতে পারেননি, বিবিসিকে বলছিলেন মিজ সমাদ্দার।

পরে তিনি কলেজে গিয়ে ভাইস প্রিন্সিপালকে বিস্তারিত জানান। এরপর তিনি সহকর্মীদের সহায়তায় থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।

লতা সমাদ্দার বলছেন, ”আমি এখনো ট্রমার মধ্যে আছি, আমি কোন দেশে বাস করছি? নারীদের নিরাপত্তা কোথায়? একজন নারী টিপ পরবে, সেজন্য তার গালিগালাজ শুনতে হবে। যে ভাষা হয়তো আমি স্বামীর সঙ্গেও শেয়ার করতে পারবো না। সাধারণ মানুষ নয়, কিন্তু পুলিশের পোশাক পরা একজন লোক যখন এইভাবে আমাকে অ্যাটাক করলো, আমার আর কোন ভাষা ছিল না।”

”আমি এর বিচার চাই। আমি চাই প্রত্যেক নারী তার স্বাধীনতা নিয়ে, স্বতন্ত্রতা চলুক। কোন ইভ টিজিং যেন না থাকে।” এ ঘটনায় মিজ সমাদ্দার থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ অভিযুক্তকে শনাক্ত করে এবং হেফাজতে নেয়। পুলিশের ওই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।

 

সুত্রঃবিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com