 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    ইসলাম শান্তির ধর্ম, সহানুভূতির ধর্ম। মানুষ একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব ও ভালোবাসা প্রদর্শন করবে, এটি ইসলামের একটি অন্যতম আদর্শিক বিষয়। কেননা, মহান রবের পক্ষ থেকে যে অপরিসীম নিয়ামত আমরা উপভোগ করছি, সর্বক্ষেত্রে তার হক শুধু মুখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মাধ্যমেই আদায় হয় না; বরং নিয়ামত যেমন, শুকরিয়াও তেমনই হওয়া চাই। বান্দাকে আল্লাহ তায়ালা যা কিছু দান করেছেন, শুধু নিজের ভোগ বিলাসের জন্য নয়। বরং তামাম জাহানের প্রত্যেকটি সৃষ্টির প্রতি অন্তরে মহব্বত ও কল্যাণ কামনা করবে এবং চেষ্টা ও মুজাহাদা অব্যাহত রাখবে, এটিই ইসলামের বিধান। এটিই ইসলামের নীতি-আদর্শ।
অর্থকষ্টে নিপতিত অসহায় কোনো ব্যক্তিকে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রেখে বিনা শর্তে ঋণ দেয়াকে বলা হয় ‘কর্জে হাসানা’ বা উত্তম ঋণদান। ইসলামী অর্থনীতিতে দারিদ্র্যবিমোচনে এই কর্জে হাসানা বা বিনা শর্তে উত্তম ঋণদান হলো একটি প্রবল শক্তিশালী মাধ্যম। বলা হয়ে থাকে, কোনো দ্বীনদরিদ্রকে কর্জে হাসানা বা উত্তম ঋণদান করা আল্লাহ তায়ালাকে ঋণ দেয়ার শামিল। ফলে কর্জে হাসানার মাধ্যমে এক মুসলমানকে ঋণ দিয়ে অপর মুসলমান তার ঈমানি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবে এটিই কাম্য। এটিই শরিয়তের তাকাজা। কার্যত এর প্রতিদানও অনেক বড়।
কর্জে হাসানার ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্য থেকে এক লোকের হিসাব গ্রহণ করা হয়, কিন্তু তার মধ্যে কোনো ধরনের কোনো ভালো কাজ বা আমল পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেই লোক মানুষের সাথে আর্থিক লেনদেন করত এবং সে ছিল সচ্ছল। তাই দরিদ্র লোকদেরকে মাফ করে দেয়ার জন্য সে তার কর্মচারীদের নির্দেশ দিতো।’ রাসূল সা: বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বললেন, ‘এ ব্যাপারে (অর্থাৎ ওই লোকের ঋণগ্রস্তদের ক্ষমা করে দেয়ার চেয়ে তাকে ক্ষমা করার ব্যাপারে) আমি তার চেয়ে বেশি যোগ্য। সুতরাং একে ক্ষমা করে দাও’ (মুসলিম-১৫৬১, তিরমিজি-১৩০৭)।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদের সর্ববৃহৎ সূরা বাকারায় বর্ণনা করেছেন- ‘যদি পাওনাদার বেশি অভাবগ্রস্ত হয়, তাহলে তার সচ্ছলতা ফিরে আসা পর্যন্ত অবকাশ দাও। অর্থাৎ সচ্ছলতা পর্যন্ত তাকে অবকাশ দেয়া বা বিলম্ব করা তোমাদের দায়িত্ব। আর যদি সদকা করে দাও, অর্থাৎ অভাবগ্রস্তদের ঋণের দাবি থেকে মুক্তি দান করো, তবে তা তোমাদের জন্য খুবই কল্যাণকর। যদি তোমরা জানো যে, সদকা করে দেয়া কল্যাণকর, তবে তা তোমরা করো’ (সূরা বাকারা-২৮০)। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- ‘কোনো পাওনাদার যদি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে ঋণ আদায়ের ব্যাপারে অবকাশ দেয় বা মন থেকে সদকা করে দেয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা এমন দিনে তাকে নিজের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন, যেদিন আল্লাহ তায়ালার ছায়া ছাড়া আর কোথাও কোনো ছায়া অবশিষ্ট থাকবে না’ (মুসলিম, তাফসিরে জালালাইন)। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের এই আর্থিক অনটনের চরম দুর্ভোগের সময়ে অভাবী, গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ও মুসলিম উম্মাহকে সুদের বিপরীতে উত্তম ঋণ গ্রহণ করা ও যথাসময়ে সেই ঋণ পরিশোধ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : শিক্ষার্থী, আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, সারুলিয়া, ডেমরা