আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ থেকে সরিয়ে দেওয়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে দেশে এসে বিচার করার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
গতকাল বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিচার চেয়ে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন হাসনাত। সেখানে নিষিদ্ধ সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী হাসনাতদের বিচার করা জরুরি বলে কমেন্ট করেন। এর জবাবে রাব্বানীকে দেশে আসার আহ্বান জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার মূল পোস্টে লিখেছেন, ‘রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুশীলতা দিনশেষে আমাদের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে সিরিয়ায় যে পরিস্থিতিতে মাত্র তিন দিনেই আসাদ সরকারের ৩৫ জন কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ঠিক সেই পরিস্থিতিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার ঘনিষ্ঠ এবং ফ্যাসিবাদের মদদদাতা একজন নেতাকর্মীরও বিচার হয়নি। বর্তমান সরকারের এ ধরনের দয়াপরবশ হয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিচার করতে স্বেচ্ছায় বিলম্ব করা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে অপমানের শামিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরও লিখেছেন, ‘অথচ ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সফল না হলে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী লীগ বিপ্লবীদের হত্যাযজ্ঞে নেমে পড়তো। নির্বিচারে গুম, খুন ও আরেকটি গণহত্যা করতে তারা তখন বিন্দুমাত্র পিছপা হতো না। গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শত শত মানুষের গলায় পড়তো ফাঁসির দড়ি, ক্রসফায়ারে মারা পড়তো অগণিত ফ্যাসিবাদ বিরোধী মানুষ, আয়নাঘরের অন্ধকারে ঠাঁই হতো হাজার হাজার ছাত্র-জনতার। সারাদেশে তখন নেমে আসতো নিরপরাধ জনমানুষের শোকের কালছায়া।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘ঠিক এ কারণেই আওয়ামী লীগের প্রতি আমাদের এখনকার আচরণ ঠিক তেমন হওয়া উচিত যেমন আচরণ ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সফল না হলে আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে করতো। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত গণহত্যাকারী ও ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠাকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাদের সকল নেতাকর্মীর বিচার দ্রুতগতিতে কার্যকর করা এবং প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরে বিরাজ করা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিজম কায়েমের সফট এনাবলারদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। অন্যথায়, এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের সব শহীদের আত্মদান ও হাজারো আহত সহযোদ্ধার রক্ত বিসর্জন বৃথায় পর্যবসিত হবে।’
অন্তবর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতি ন্যূনতম দয়া নেই। সুতরাং অতি দ্রুত দলটির নেতাকর্মীদের বিচার দৃশ্যমান করুন, কার্যকর করুন।’
কমেন্টে গোলাম রাব্বানী লিখেছেন, মেটিকুলাসলি ডিজাইনড ষড়যন্ত্রের অবিচ্ছেদী অংশ হিসেবে দেশকে পাকি বীর্যের উত্তরাধিকারদের হাতে তুলে দিয়ে চরম অরাজকতা, নিরাপত্তাহীনতায় ঠেলে দেওয়ার জন্য সবার আগে তোমাদের বিচার করা জরুরি।
জবাবে হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেছেন, ‘গোলাম রাব্বানী দেশে আসেন। দেশে এসে বিচার করেন। হেডম থাকলে আসেন।’
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গোলাম রাব্বানীর কমেন্টে ৮ হাজার ৮শ রিঅ্যাক্ট পড়েছে। আর হাসনাত আব্দুল্লাহর জবাবের নিচে রিঅ্যাক্ট পড়েছে ৭ হাজার ২শ। হাসনাত ও রাব্বানীর কমেন্টের নিচে তাদের অনুসারীরা ১ হাজারের বেশি কমেন্ট করেন।
এদিকে হাসনাত আব্দুল্লাহর মূল পোস্টে লাইক পড়েছে ৯৪ হাজার। কমেন্ট পড়েছে ১৬ হাজার ১শ এবং পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ৫ হাজার ৭শ।