সরকারি চাকরিজীবীদের টাকা জমা রেখে সঞ্চয়পত্র থেকেও বেশি মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারা সাধারণত ভবিষ্যৎ তহবিল (জিপিএফ) ও প্রদেয় ভবিষ্যৎ তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রেখে সঞ্চয়পত্র থেকেও বেশি হারে মুনাফা পাবেন। এই দুই তহবিলে টাকা রেখে সরকারি কর্মচারীরা সর্বনিম্ন ১১ ও সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পাবেন।
গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জিপিএফ ও সিপিএফের মুনাফার হার নির্ধারণ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সরকারের রাজস্ব খাত থেকে যারা বেতন পান, তারা টাকা রাখবেন সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিলে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখবেন প্রদেয় ভবিষ্যৎ তহবিলে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিপিএফ মুনাফার হার ছক আকারে সøাব অনুযায়ী নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোট তিনটি সøাব রাখা হয়েছে। তিন সøাব মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১১, ১২ ও ১৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও জিপিএফ ও সিপিএফের মুনাফার হার ও সøাব একই ছিল।
সøাব অনুযায়ী, ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রাখলে ১৩ শতাংশ হারে মুনাফা মিলবে। ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ জমা রাখলে ১২ শতাংশ হারে মুনাফা মিলবে। তার বেশি জমা রাখলে মুনাফা পাওয়া যাবে ১১ শতাংশ হারে। সিপিএফের
বিষয়ে বলা হয়, সব সিপিএফভুক্ত প্রতিষ্ঠানের (স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, করপোরেশন ইত্যাদি) আর্থিক সঙ্গতি এক রকম না হওয়ায় সংস্থাগুলো নিজস্ব আর্থিক বিধিবিধানের আলোকে তাদের কর্মচারীদের জন্য জিপিএফের সøাবভিত্তিক মুনাফার হারকে সর্বোচ্চ ধরে আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী মুনাফার হার নির্ধারণ করতে পারবে।
এদিকে সম্প্রতি জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত পাঁচটি সঞ্চয় কর্মসূচির মুনাফার হার বাড়িয়েছে সরকার। স্কিমের ধরন অনুযায়ী, নতুন মুনাফার হার ১২ দশমিক ২৫ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ হার কার্যকর হয়েছে। পাঁচ স্কিমের মধ্যে রয়েছে- পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিট।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের দুটি ধাপ রাখা হয়েছে। প্রথম ধাপ সাড়ে সাত লাখ টাকার কম বিনিয়োগকারী। আর দ্বিতীয় ধাপটি হলো- তার বেশি বিনিয়োগকারী। পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বা তার কম বিনিয়োগকারীরা সাড়ে ১২ শতাংশ এবং এর বেশি বিনিয়োগকারীরা ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন।
পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বা তার কম বিনিয়োগকারীরা ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং এর বেশি বিনিয়োগকারীরা ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বা তার কম বিনিয়োগকারীরা ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এর বেশি বিনিয়োগকারীরা ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বা তার কম বিনিয়োগকারীরা ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং এর বেশি বিনিয়োগকারীরা ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন। এ ছাড়া পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিটে সাড়ে ৭ লাখ টাকা বা তার কম বিনিয়োগকারীরা ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং এর বেশি বিনিয়োগকারীরা ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ের মধ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এ মুনাফার হার কার্যকর হবে। ছয় মাস পর জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের বিনিয়োগের মুনাফার হার পুনরায় নির্ধারণ করা হবে। তবে বিনিয়োগকারী ইস্যুকালে বিদ্যমান মুনাফার পর বিনিয়োগকালের পূর্ণ মেয়াদে পাবেন। অর্থাৎ ছয় মাস পর নতুন মুনাফার হার নির্ধারণ করা হলেও জানুয়ারি-জুন সময়ে যে মেয়াদ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনা হবে, সেই সময় পর্যন্ত এখন যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই হারে মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা।
জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের আওতায় ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব এই চারটি স্কিমের মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এদিকে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ, ৩ মাস অন্তর মুনাফা সঞ্চয়পত্রে ১১ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ; পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিটে ১১ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পাওয়া যাবে।