রবিবার, ০৭:০১ অপরাহ্ন, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ভোট প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে বিএনপি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৫ বার পঠিত

দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির এখন একমাত্র টার্গেট ভোটযুদ্ধ। ভয়ানক স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সমমনাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে দলটি। অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে বিএনপির লক্ষ্য এখন একটাই- আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন। নির্বাচনি ইশতেহারের উপাদান নিয়েও কার্যক্রম চলছে। ‘সরকার গঠনের পর দেশ ও জনগণের জন্য করণীয় কী হবে’ তা নিয়েও দলের প্রচারণা শুরু হয়েছে। নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চান নীতিনির্ধারকরা। নানা কৌশলে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কঠোর বার্তা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, নির্বাচনি ‘পুলসিরাত’ পার হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো জেলায় প্রশিক্ষণ ও জনসম্পৃক্ত কর্মশালায় তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ৩১ দফা প্রস্তাব নিয়ে সর্বস্তরের জনগণের কাছে যাওয়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। এই ৩১ দফাই মূলত আগামীতে দলের নির্বাচনি ইশতেহারের মুখ্য বিষয়। বিএনপির নীতিনির্ধারণী মহল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি লন্ডন সফর শেষে ঢাকায় এসে বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর মাধ্যমে সারা দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্বাচনি প্রস্তুতি গ্রহণের সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যে কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের প্রধান উদ্দেশ্যই হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। বিগত ১৬ বছর এদেশের মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। জনগণ যাতে তাদের ভোটের এই অধিকার সত্যিকারভাবেই প্রয়োগ করতে পারে সে জন্যই যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত। তাছাড়া বড় বড় সংস্কার কার্যক্রমগুলোসহ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্যও পাবলিক ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত সরকার প্রয়োজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নীতি-নির্ধারক জানান, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আর সে জন্য দরকার প্রকৃত অর্থেই একটি ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন; যে নির্বাচনে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। সে জন্যই বিএনপি নির্বাচন-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার শেষ করেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার পক্ষে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে- দেশের জনগণের কাছে তাদের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া। আর মানুষকে সেবা প্রদানের দায়িত্ব হলো নির্বাচিত সরকারের। নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটে যে-ই সরকার গঠন করুক না কেন মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করাটাই বিএনপির টার্গেট। এ লক্ষ্যে সারা দেশে সব রকমের জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। দলীয় নেতা-কর্মীদের যে করেই হোক সাধারণ মানুষের মন জয় ও ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের হাইকমান্ড থেকে। নেওয়া হচ্ছে নানান রকমের ইতিবাচক সাংগঠনিক কর্মসূচির উদ্যোগ। ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দলের ভবিষ্যৎ করণীয়-প্রতিশ্রুতিসহ ৩১ দফা সংস্কারের বিষয়গুলো। সাংগঠনিক এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিচ্ছেন নির্বাচনি প্রস্তুতি। প্রতিটি এলাকায় গড়ে কয়েকজন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী চষে বেড়াচ্ছেন। জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশব্যাপী নেতা-কর্মীদের প্রতি জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন। অন্যদিকে দলের ইমেজ বজায় রাখতে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ইতোমধ্যেই দল ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের প্রায় দুই সহস্রাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কারণ দর্শানো নোটিস দেওয়া হয়েছে তারও বেশি সংখ্যক। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী, সারা দেশে নানান রকমের জনসংযোগের পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলোতে যোগদান এবং স্ব স্ব এলাকায় দলের প্রতিটি ইউনিটকে পুনর্গঠন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করছেন নেতারা। এর মূল উদ্দেশ্য হলো- আগামী নির্বাচনের জন্য দল ও নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা। এর পাশাপাশি গত ১৫ বছরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা দল এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের এলাকায় নির্বাচনি তৎপরতায় সহায়তা প্রদানের জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল বিএনপির নেতাদের চিঠি দিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও অনলবর্ষী বক্তা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পূর্বশর্তই হলো একটি ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন। যে নির্বাচনের মাধ্যমে একদিকে যেমন মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, অন্যদিকে তেমনি দেশে জনগণের পছন্দমতো প্রতিনিধিদের দ্বারা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সে জন্যই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতাদের যার যার এলাকায় জনগণের কাছে ফিরে গিয়ে কর্মসূচি পালনের নির্দেশ দিচ্ছেন। আমার নির্বাচনি এলাকা কিশোরগঞ্জের ইটনা থানায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামীকাল (মঙ্গলবার) সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এতে অংশ নেবেন বলে আশা করছি। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলে আসার পর থেকেই দেশজুড়ে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড। এরই মধ্যে অনেক জেলা ও মহানগরীর কমিটি বাতিল এবং পুনর্গঠন করা হয়েছে। দল ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় প্রতিটি ইউনিটকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সাংগঠনিক কর্মকান্ড জোরদার করা হচ্ছে। এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দল। একই বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, এলাকায় জনসচেতনতামূলক গণসংযোগের পাশাপাশি জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি শুরু করেছি। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অংশগ্রহণে মানিকগঞ্জ জেলায় দলের প্রশিক্ষণ ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা যেভাবে নিজেদের এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছি আশা করি দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি একদিন দেশ গঠনে সফল হব ইনশাআল্লাহ। বিএনপি নেতৃত্ব মনে করে, নির্বাচনের জন্য লম্বা সময়ের প্রয়োজন নেই। তারা ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছেন। দেরিতে হলেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্বাচনের কথা বলায় এটিকে রাজনৈতিক দলগুলো ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য স্পষ্ট নয় এবং সময় নিয়ে একটা ধারণা দেওয়ার ব্যাপারেও দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা। তবে দ্রুত নির্বাচন চাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির ভিতরে নানা আলোচনা রয়েছে। দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করাসহ অর্থনীতিতে গতি আনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও প্রশাসনে স্থিতিশীলতা আনতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। আর এতে মানুষের মধ্যে সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। দ্রুত নির্বাচনের দাবির পেছনে এ পরিস্থিতিকেও অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে। নির্বাচন যত দেরি হবে, সংকট ততই বাড়বে বলে মনে করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com