সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি দ্রুত তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পৃথকভাবে করা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাটি আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করা যাবে বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে। আর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর তার বিরুদ্ধে মূল বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এ দিকে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে এ পর্যন্ত তিন শতাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১৬৮টি অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে। অপর দিকে গুমের অভিযোগে মোট ৪৪টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলেও প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে।
শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মামলা হয়েছে সেগুলো চলমান থাকবে। তবে আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আছে বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে গণহত্যা এবং গত ১৬ বছরে গুম ও ক্রসফায়ারের মতো যত মানবতাবিরোধী অপরাধ, পিলখানা ও হেফাজতে ইসলামের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের কাছে এসেছে সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে। আমরা বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনাসহ তার কেবিনেটের বিভিন্ন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে, তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত খুব জোরেশোরে চলমান রয়েছে।
আগামী তিন মাসের মধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হবে জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের যেসব তদন্ত সংস্থা রয়েছে তারা সম্ভাব্য তিন মাসের ভেতর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সব তদন্ত শেষ করতে পারবেন। এটা কোনো চূড়ান্ত কথা নয়, তারা (তদন্ত সংস্থা) আশা করছেন তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে পারবেন। তদন্ত রিপোর্ট আমাদের হাতে এসে পৌঁছালে, তখন আমরা বলতে পারব মূল বিচার প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে।
এর আগে ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে আরো দুই মাস সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিষয়ে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির বিষয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
এ দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গোপন কারাগারে গুম-নির্যাতন-খুনের নিউক্লিয়াস মন্তব্য করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনালে অপরাধের মূল হোতা শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেছি। গত ১৬ বছর কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষকে গোপন কারাগারে নিষ্ঠুরতম পন্থায় আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। তাদের লাশকে সিমেন্টের বস্তার সাথে বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আর এসবের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী এবং অপরাধের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনার।
রেড নোটিশ জারির বিষয়ে যা জানালেন চিফ প্রসিকিউটর : শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়েছে কি না এমন কোনো তথ্য প্রসিকিউশনের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই তথ্য বাংলাদেশ পুলিশের একটি শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাওয়া যাবে।
গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক সংবাদ সম্মেলনে তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি ইন্টারপোলের যত বিষয় আছে তা দেখভাল করে। ১৩ নভেম্বর চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির বিষয়ে যে নির্ধারিত ফর্ম আছে তা পূরণ করে একটি চিঠির মাধ্যমে ফরওয়ার্ডিং করে পুলিশের এই এনসিবি সংস্থার কাছে পাঠিয়েছি। শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির বাকি কাজ করার দায়িত্ব এনসিবির। সুতরাং রেড নোটিশটি জারি হয়েছে কি না, এটা বলার দায়িত্ব এনসিবির তথা পুলিশ মহাপরিদর্শকের অফিসের।
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় দিতে পারবে না, এটা রাষ্ট্রের বিষয়। ভারতের সাথে অপরাধী বহি-সমর্পণ যে চুক্তি আছে, সেই চুক্তির অধীনে অপরাধীদের দেশে ফেরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের নিতে হবে। সরকারের কাছে আমরা তথ্য প্রেরণ করেছি, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে কখন কিভাবে চাইবেন বা ইতোমধ্যে চেয়েছেন কি না সেটি সরকার বলতে পারবে।